digital world

নতুন বিশ্ব

শিক্ষা, জীবিকা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনের ইঙ্গিতগুলি স্পষ্ট হচ্ছিল ধীরে ধীরে, অতিমারি দু’বছরের ব্যবধানে তাকেই বাস্তবে পরিণত করেছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২২ ০৫:৩৪
ডিজিটাল বিশ্ব।

ডিজিটাল বিশ্ব।

যে কোনও যুগে পরিবর্তন অনিবার্য। তাকে মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়াই অগ্রগতির লক্ষণ। তবে পরিবর্তনের গতি সর্বক্ষেত্রে সমান থাকে না। যে পরিবর্তন আসে ধীরে, তাকে আত্মস্থ করা সহজ। ধীরে ধীরে তা প্রাত্যহিকতায় মিশে যায়। কিন্তু যে পরিবর্তনের গতি অতি দ্রুত, তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ নয়। যেমন— অতিমারি-উত্তর বিশ্ব এক নতুন বিশ্ব, ডিজিটাল বিশ্ব। শিক্ষা, জীবিকা, যোগাযোগের ক্ষেত্রে যে পরিবর্তনের ইঙ্গিতগুলি স্পষ্ট হচ্ছিল ধীরে ধীরে, অতিমারি মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে তাকেই বাস্তবে পরিণত করেছে। নতুন পৃথিবী অনেক বেশি যন্ত্রনির্ভর, স্মার্ট। যন্ত্রনির্ভরতা নতুন নয়। কিন্তু ইতিপূর্বে তা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রকরূপে আবির্ভূত হয়নি। অতিমারি শেখাল, অগ্রগতির ধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে, প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও বৈশ্বিক পরিবর্তনের সাক্ষী হতে গেলে সেই ডিজিটাল দুনিয়াকে আত্মস্থ করতে হবে। এবং এই সত্য যারা সবচেয়ে দ্রুত উপলব্ধি করল, এবং পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিল, তারা নতুন প্রজন্মের মানুষ। তাদের পূর্বসূরিরা স্বভাবগত কারণেই এখনও সংশয়ী, দ্বিধাগ্রস্ত। সুতরাং, একটি সুস্পষ্ট ব্যবধান রচিত হল দুই প্রজন্মের মধ্যে।

ডিজিটাল দুনিয়ার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের নিবিড় সম্পর্ক বহু আলোচিত, বিতর্কিতও বটে। প্রশ্ন উঠেছে, ডিজিটাল দুনিয়ায় প্রবেশ শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না। মাঠে গিয়ে খেলার বদলে শিশু যখন দিনের অধিকাংশ সময়টুকু মোবাইলে মগ্ন থাকে, তখন তার আচরণগত সমস্যা দেখা দিতে পারে, নানা গবেষণায় এমন তথ্যও উঠে এসেছে। এই প্রশ্নগুলি তোলা জরুরি। কারণ, মোবাইল অনেক ক্ষেত্রেই মুখোমুখি সংযোগ স্থাপনের পথটি বন্ধ করেছে। ফলত, শিশুদের অন্তর্মুখী হয়ে পড়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সামাজিক শিক্ষার পাঠটিও অধরা থাকছে। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও মনে রাখা প্রয়োজন, পরিবর্তনের এই চাকা স্তব্ধ করার উপায় নেই। অতিমারি-অন্তে পৃথিবী কখনও তার পূর্বাবস্থায় ফেরত যাবে না। ফলে, নতুন ভাবে ভাবতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে যেমন ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ দেখা দিয়েছে, তেমনই বর্তমান দুনিয়ায় ডিজিটাল শিক্ষার উপযোগিতার দিকটিও অস্বীকার করা চলে কি?

Advertisement

অনস্বীকার্য যে, সার্বিক পরিবর্তন যখন আসে, তখন পুরনো অভ্যাসগুলি তার আগের রূপটি ধরে রাখতে পারে না। যেমন— অল্পবয়সিদের মধ্যে হাতে ধরে বই পড়ার অভ্যাসটি এখন অনেকাংশে ম্লান। সেই জায়গা দখল করেছে ই-বুক, ট্যাবলেট। স্কুল লাইব্রেরিতেও তাকবন্দি বইয়ের সঙ্গেই জায়গা করে নিয়েছে তাদের ‘ডিজিটাল কালেকশন’। শিশুবয়স থেকেই যে বিপুল তথ্যভান্ডার তাদের করায়ত্ত হচ্ছে, তার ফলে পরবর্তী জীবনের দিকনির্ণয়ের কাজটি সহজতর হচ্ছে। সুতরাং, এই নতুন ক্রমাগত পরিবর্তনশীল বিশ্বে সংশয়ী, দ্বিধাগ্রস্ত থাকার উপায় নেই। বরং নিজেও তাতে শামিল হওয়া জরুরি। অতীতচারণা সুখের, কিন্তু তা যেন নতুনকে স্বাগত জানানোর পথে বাধা সৃষ্টি না করে। নতুন বিশ্বের সুদূরপ্রসারী প্রভাব কী হতে চলেছে, এখনই তা অনুমান করা কঠিন। কিন্তু নেতিবাচক ভাবনায় ডুবে না গিয়ে মানিয়ে নেওয়ার কাজটি রপ্ত করতে হবে। অন্যথায়, ক্রমশ দূরত্ব বাড়বে বিভিন্ন প্রজন্মের মধ্যে। সে বড় সুখের সময় হবে না।

আরও পড়ুন
Advertisement