Temperature

উষ্ণতম

সম্প্রতি আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৮৮০ সাল থেকে তাপমাত্রার খতিয়ান রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত উষ্ণতম বছরটি ২০২৪-ই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৩১

রেকর্ড ভাঙা সব সময় আনন্দের নয়, ক্ষেত্রবিশেষে তা সবিশেষ উদ্বেগের কারণ। পরিবেশের বিষয়টি ঠিক তেমনই। গত বছর পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির গড় ছিল শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় ১.৪৫ ডিগ্রি বেশি। রেকর্ড অবশ্যই। যেখানে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে প্রায় দু’শোটি দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছিল আগামী দিনে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে শিল্পবিপ্লব-পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি বেশিতে বেঁধে রাখতে, সেখানে এত দ্রুত সেই সীমারেখা ছুঁয়ে ফেলা বিজ্ঞানীদেরও স্তম্ভিত করেছে। কিন্তু এই রেকর্ডও যে বেশি দিন টিকবে না, সে আশঙ্কাও শুনিয়েছিলেন বিজ্ঞানীদের একাংশ। নতুন বছরের শুরুতেই বিজ্ঞানপত্রিকা নেচার-এর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ২০২৪ সালটিই হয়তো উষ্ণতম হিসাবে স্বীকৃতি পাবে। সে আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত। সম্প্রতি আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’র তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ১৮৮০ সাল থেকে তাপমাত্রার খতিয়ান রাখা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত উষ্ণতম বছরটি ২০২৪-ই। তার চেয়েও বেশি উদ্বেগের রাষ্ট্রপুঞ্জের আবহাওয়া সংস্থা ডব্লিউএমও-র রিপোর্ট, যেখানে বলা হয়েছে— ২০২৪ সালে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Advertisement

অর্থাৎ, প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার ধুয়েমুছে সাফ। এতেও কি রেহাই মিলবে? কিছু মাস পূর্বে বিজ্ঞানীদের একাংশের মুখে শোনা যাচ্ছিল যে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি কোনও কোনও মাসে ১.৫ ডিগ্রির গণ্ডি অতিক্রম করছে মানেই যে তা চিরস্থায়ী হবে, সেই সিদ্ধান্তে এখনই পৌঁছনো ঠিক হবে না। বরং ২০২৩ সালের রেকর্ড পরিমাণ উষ্ণতা বৃদ্ধির পর তাঁদের ক্ষীণ আশা ছিল, হয়তো পরের বছরে সেই ঊর্ধ্বগতিতে খানিক লাগাম পড়বে। বছরের প্রথম দিকে এল-নিনোর প্রভাবে উষ্ণতা বৃদ্ধি ঘটলেও পরবর্তী কালে লা-নিনার সৌজন্যে তা স্বাভাবিকের কাছাকাছি নেমে আসবে। কিন্তু সেই আশা বাস্তবায়িত হয়নি। সুতরাং, আগামী দিনগুলির লড়াই আরও কঠিন হতে চলেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের যে অবশ্যম্ভাবী পরিণতি— মানবস্বাস্থ্যের বিপর্যয়, বৈষম্য বৃদ্ধি, খাদ্যসঙ্কট, তা ক্রমশ ঘনীভূত হবে। যতই ডব্লিউএমও-র তরফে এই সীমারেখা পেরোনোকে স্বল্পস্থায়ী এবং ‘এর অর্থ এই নয় যে, আমরা প্যারিস চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হয়েছি’ বলে আশ্বাস দেওয়া হোক, তাতে কত দূর আশ্বস্ত হওয়া যায়— প্রশ্ন উঠছেই।

আশ্বস্ত না হওয়ার অন্যতম কারণ— তাপমাত্রার ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে যে প্রস্তাবগুলি করা হয়েছিল, তা যে যথেষ্ট নয়, তা প্রমাণিত। জীবাশ্ম জ্বালানির পথ থেকে সরে আসার বিষয়ে অধিকাংশ দেশ ঐকমত্যে পৌঁছলেও যে বিভিন্ন সময়সীমা নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তত দিনে নীল গ্রহটি পরিবেশ বিপর্যয়ের পথে অনেকখানি এগিয়ে যাবে। তা ছাড়া উন্নয়নশীল, দরিদ্র দেশগুলি এখনও আর্থিক ভাবে পরিবেশবান্ধব সুস্থায়ী উন্নয়নের পথে হাঁটার জন্য প্রস্তুত নয়। তাদের প্রস্তুত করার যে দায়িত্ব উন্নত দেশগুলির উপর দেওয়া হয়েছিল, তারা সযত্নে সেই দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলার কাজটি করে চলেছে। আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলি ক্রমশ অন্তঃসারশূন্য আলোচনা চক্রে পরিণত হচ্ছে এবং উষ্ণায়ন তত্ত্বে ঘোর অবিশ্বাসীরা রাষ্ট্রনেতার পদে বিপুল ভাবে নির্বাচিত হচ্ছেন। বিপদের প্রহর গোনা ছাড়া বিকল্প পথ আর অবশিষ্ট আছে কি?

Advertisement
আরও পড়ুন