Pass- Fail

পাশ-ফেল

পাশ করতে না পারলে তাকে সেই শ্রেণিতেই রেখে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও শিক্ষার্থীকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৯:৫৮

২০০৯ সালে ভারতে শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী চালু হয়েছিল ‘নো ডিটেনশন পলিসি’। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হলেও নতুন শ্রেণিতে উঠে যেতে পারত। ২০১৯ সাল নাগাদ শিক্ষার অধিকার আইন সংশোধিত হয় এবং রাজ্যগুলিকে ক্ষমতা দেওয়া হয় পাশ-ফেল ফিরবে কি না, সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। অবশেষে স্কুলে পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনা উচিত, না অনুচিত— সেই দীর্ঘ টানাপড়েনে দাঁড়ি টেনে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল প্রথা ফিরে আসার। বলা হয়েছে, কোনও পড়ুয়া পঞ্চম বা অষ্টম শ্রেণিতে অকৃতকার্য হলে সে দু’মাস পরে ফের পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। এই সময়কালে তার উন্নতির প্রতি বিশেষ নজর দেবেন শিক্ষকরা। তার পরেও সে পাশ করতে না পারলে তাকে সেই শ্রেণিতেই রেখে দেওয়া হবে। কিন্তু কোনও শিক্ষার্থীকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল থেকে বিতাড়িত করা যাবে না।

Advertisement

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত। শিক্ষাবর্ষ-অন্তে যে মূল্যায়নের পদ্ধতি প্রচলিত আছে, তাকে শুধুমাত্র নম্বর তোলার প্রতিযোগিতা মনে করা অনুচিত। এই একটিমাত্র পরীক্ষা নিঃসন্দেহে তার সারা বছরের পরিশ্রমের প্রতিচ্ছবি তুলে ধরতে পারে না। কিন্তু একটা আন্দাজ দিতে পারে, নিজেকে আরও কতটা প্রস্তুত করে তোলা প্রয়োজন আগামী দিনের জন্য। শিক্ষার্থীর কাছে ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষ্যে এই মূল্যায়ন জরুরি। নতুন শ্রেণিতে ওঠার পথটি অনায়াসসাধ্য হয়ে গেলে, নিজেকে সংশোধনের সেই তাড়নাটি আসে না। ফলে, প্রস্তুতিটিও অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এবং যারা এত দিন অ-প্রস্তুত অবস্থাতেই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উঠে এসেছে, তারা পরবর্তী পদক্ষেপে হোঁচট খায়। অন্য দিকে, পাশ-ফেল ফিরিয়ে আনার বিপক্ষে প্রায়ই শোনা যায়— এর ফলে গরিব ও প্রান্তিক পড়ুয়ারা আরও বেশি করে স্কুলছুট হয়ে পড়বে। উত্তরে বলা যায়, শুধুমাত্র পাশ-ফেল তুলে দিয়ে স্কুলছুটের প্রবণতা ঠেকানো যায় না। পশ্চিমবঙ্গে খাতায়-কলমে ২০২০ সাল থেকে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পাশ-ফেল চালু থাকলেও বাস্তবে সবাইকেই পাশ করিয়ে দেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও এ রাজ্যে স্কুলছুটের প্রবণতায় বিশেষ রাশ টানা যায়নি।

পাশ-ফেলের বিপক্ষে আরও এক যুক্তি শোনা যায়— শিক্ষার্থীর মানসিক চাপবৃদ্ধির। চাপের কারণ, ‘ফেল’ শব্দটির মধ্যে লুকিয়ে থাকা এক ধরনের সামাজিক বিদ্রুপ। আধুনিক সমাজে সে বিদ্রুপ অবশ্যবর্জনীয়। কারণ, সকল শিশুর গ্রহণের ক্ষমতা সমান নয়। বরং এ ক্ষেত্রে জোর দেওয়া প্রয়োজন পঠনপাঠনে দুর্বল শিক্ষার্থীর প্রতি বিশেষ যত্নবান হওয়ার বিষয়টির উপর। দৈনন্দিন পাঠের ক্ষেত্রে যে অন্যদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি, দেখা গিয়েছে কিছু বাড়তি মনোযোগ, শিক্ষকের সতর্ক নজরদারিতে সে অচিরেই বাধাগুলি কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। যে সেটিও পারবে না, তাকে বরং আরও এক বছর সুযোগ দেওয়া যুক্তিযুক্ত। অর্থাৎ, ক্লাসে উঠতে না-পারা শিক্ষার্থীর ব্যর্থতা নয়, বরং আরও এক বছরের সুযোগ পাওয়া, যাতে ওই সময়ে সে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলতে পারে। শিক্ষার উদ্দেশ্য যখন শিক্ষার্থীর সার্বিক উন্নয়ন, তখন মূল্যায়নটিকেই অপ্রাসঙ্গিক করে না তুলে তার সঙ্গে জড়িত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের প্রচেষ্টা জরুরি।

Advertisement
আরও পড়ুন