পাঁচ বছরের বিবাহিত জীবন। ২০২৫-এ পা ফেলতে না ফেলতেই একে অপরের চেয়ে দূরে সরে গেলেন ভারতীয় স্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল এবং তাঁর স্ত্রী ধনশ্রী বর্মা। সেই দূরত্ব আপাতত সমাজমাধ্যমের পাতায় লক্ষ করা গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তাঁদের সম্পর্কে ভাঙন ধরেছে বলেই কি সমাজমাধ্যমে এই দূরত্ব?
ইনস্টাগ্রামের পাতায় একে অপরকে ‘আনফলো’ করে দিয়েছেন চহাল এবং ধনশ্রী। অর্থাৎ ইনস্টাগ্রামে তাঁরা আর একে অপরের ‘বন্ধু’ নন। শুধু তা-ই নয়, সমাজমাধ্যমের পাতা থেকে একে একে মুছে গিয়েছে দম্পতির সমস্ত ছবি এবং ভিডিয়ো। সমাজমাধ্যমে তাঁদের সম্পর্কের কোনও চিহ্ন রাখেননি চহাল এবং ধনশ্রী। তা হলে কি বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে তাঁদের? সমাজমাধ্যমে তা নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা।
ভারতীয় স্পিনারের তালিকায় প্রথম সারিতে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন চহাল। তবে চহাল যে ক্রিকেটজগতের সঙ্গে যুক্ত তা নাকি জানতেন না ধনশ্রী।
ছোটবেলায় ক্রিকেট দেখলেও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ ছিল না ধনশ্রীর। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘‘চহালের সঙ্গে যখন আমার প্রথম আলাপ হয়েছিল তখন আমি জানতাম না ও ক্রিকেটার। আমার সঙ্গে ওর ছাত্র এবং শিক্ষিকার সম্পর্ক ছিল। আসলে আমি এক সময় খুব ক্রিকেট দেখতাম। কিন্তু পরে দেখা হয়ে ওঠেনি। ঠিক সেই সময়েই ও ক্রিকেট শুরু করেছিল। তাই ওকে চিনতাম না আমি।’’
১৯৯৬ সালে সেপ্টেম্বর মাসে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাইয়ে জন্ম ধনশ্রীর। বাবা-মা এবং ভাইয়ের সঙ্গে সেখানেই থাকতেন তিনি। পরে সপরিবারে মুম্বই চলে যান।
মুম্বইয়েই স্কুল এবং কলেজের পড়াশোনা শেষ করেন ধনশ্রী। দন্ত্যচিকিৎসা নিয়ে সেখানকার কলেজে পড়াশোনা করে স্নাতক হন তিনি। দন্ত্যচিকিৎসক হিসাবে কাজও করেছেন তিনি।
নাচের প্রতি আগ্রহ ছিল ধনশ্রীর। তাই মুম্বইয়ের এক নৃত্যপরিচালকের কাছে নাচ শেখার জন্য ভর্তি হন তিনি। ধীরে ধীরে নাচ নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
দাঁতের চিকিৎসা ছেড়ে নাচের তালে মন দিতে শুরু করেন ধনশ্রী। ইউটিউবে নিজের চ্যানেল খুলে নাচের ভিডিয়ো পোস্ট করা শুরু করেন। সমাজমাধ্যমে কম সময়ের মধ্যে ভাল পরিচিতি তৈরি হয়ে যায় ধনশ্রীর।
নাচ শেখাতে শুরু করেন ধনশ্রী। সেই সূত্রেই চহালের সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। কোভিড অতিমারির সময় নাচ শেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ভারতীয় স্পিনার। তাই সমাজমাধ্যমে ধনশ্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন স্পিনার। ধনশ্রীও তাঁকে নাচ শেখাতে রাজি হয়ে যান।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে চহাল বলেছিলেন, ‘‘টিকটকে ধনশ্রীর নাচের প্রচুর ভিডিয়ো দেখে বার্তা পাঠিয়েছিলাম। তখন কোভিড অতিমারি চলছিল। ওর কাছে জানতে চেয়েছিলাম যে অনলাইন ক্লাসের কোনও ব্যবস্থা রয়েছে কি না। আসলে তখন কিছুই করার ছিল না। ওকে মেসেজ করার পরেই অনলাইন ক্লাস শুরু করি। প্রথম দু’মাস নাচ ছাড়া কোনও বিষয় নিয়েই কথা হয়নি। ওর সঙ্গে ফ্লার্টও (প্রেমের অভিনয়) করিনি। এমনকি আমরা বন্ধুও ছিলাম না। স্রেফ নাচ নিয়েই কথা হত।”
চহাল আরও জানিয়েছিলেন, অতিমারির সময় ধনশ্রীর সঙ্গে কথা বলে তাঁর আচরণ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ধনশ্রীর সঙ্গে তাঁর কথা বলতে ভালই লাগত। তাই সরাসরি বিয়ের কথাই বলেছিলেন তিনি।
চহাল বলেছিলেন, “আমি ওকে জিজ্ঞাসা করতাম, কী ভাবে লকডাউনের মতো এই পরিবেশেও তুমি এত হাসিখুশি থাকো। তখন ও নিজের জীবন নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বলা শুরু করল। সেখান থেকেই আমাদের কথাবার্তা শুরু। ওর আচরণ ভালই লাগত। ও যেমন নিজেই নিজেকে তৈরি করেছে, আমিও তাই। আমি মাকে জানালাম যে এই মেয়েটাকে আমি পছন্দ করি। তার পরেই ধনশ্রীকে বললাম, আমি তোমার সঙ্গে ডেটে যেতে চাই না। বিয়ে করতে চাই। সরাসরি বলে দিয়েছিলাম। মন বলছিল যে ও আমায় বিয়ে করতে রাজি হবে।’’
২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে সাত পাকে বাঁধা পড়েন চহাল এবং ধনশ্রী। তবে তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে একাধিক বার কানাঘুষো শোনা গিয়েছে।
ইনস্টাগ্রামে ধনশ্রী তাঁর নামের পাশ থেকে চহালের নাম সরিয়ে দিয়েছিলেন। একই সময় চহাল ইনস্টাগ্রামে স্টোরি দিয়েছিলেন, ‘নতুন জীবন শুরু হচ্ছে’। তা নিয়ে শুরু হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের জল্পনা। আলোর গতিতে সেই খবর ছড়াতে থাকে। পরে অবশ্য চহাল এই প্রসঙ্গে মুখ খুলেছিলেন। ধনশ্রীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ভুল খবর ছড়াতে বারণ করেছিলেন চহাল।
২০২৪ সালে কোরিয়োগ্রাফার প্রতীক উতেকরের সঙ্গে ধনশ্রীর একটি ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ে কটাক্ষের শিকার হন ধনশ্রী। সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ নিয়ে জল্পনার অন্ত ছিল না কৌতূহলীদের।
প্রতীকের সঙ্গে যে ধনশ্রীর কোনও সম্পর্ক নেই সেই কথা জানিয়ে তিনি দুঃখপ্রকাশও করেছিলেন। এক পুরনো সাক্ষাৎকারে ধনশ্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর নামে রটনা ছড়ানোর ফলে মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। তাঁর পরিবারকেও এর মধ্যে জড়িয়ে ফেলার কারণে কষ্টও পেয়েছিলেন তিনি।
তবে নতুন বছরের গোড়ায় চহাল এবং ধনশ্রী যে পদক্ষেপ করেছেন তা আদৌ বিবাহবিচ্ছেদের ইঙ্গিত বহন করছে কি না তা জানেন তাঁরাই। আপাতত বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে মুখ খোলেননি কেউই। শনিবার রাতে ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে পোস্ট করে চহাল লিখেছেন, ‘‘কঠোর পরিশ্রম মানুষের চরিত্রকে আলোকিত করে। আপনি নিজের যাত্রা জানেন, নিজের কষ্ট জানেন। যেখানে পৌঁছেছেন, সেখানে পৌঁছনোর জন্য কী কী করতে হয়েছে জানেন। গোটা বিশ্বও জানে। সোজা ভাবে দাঁড়ানো উচিত। আপনি আপনার বাবা-মাকে গর্বিত করার জন্য প্রচুর ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করেছেন। এক জন গর্বিত ছেলের মতো শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ান।’’ বাবা-মায়ের পাশে থাকা কথা লিখেছেন চহাল। কিন্তু স্ত্রী ধনশ্রীর পাশে থাকার কথা বলেননি ভারতীয় দলের লেগ স্পিনার। ফলে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের জল্পনা আরও তীব্র হয়েছে।
সব ছবি: সংগৃহীত।