Alexei Navalny

কোনও প্রশ্ন নয়

পেশায় আইনজীবী নাভালনি দু’দশকেরও বেশি সময় দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। প্রথম থেকেই তাঁর মূল লক্ষ্য, প্রশাসনিক স্তরে সমস্ত দুর্নীতি চিহ্নিত ও নির্মূল করা, যা নিয়ে বহু কাল ধরেই বীতশ্রদ্ধ সে দেশের মানুষ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:১৩
Alexei Navalny

—ফাইল চিত্র।

ধরে নেওয়া যায় ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হতে চলেছে। বিরোধিতার ক্ষীণতম আশাটুকুও অবলুপ্ত— প্রেসিডেন্ট পুতিনের সমালোচক এবং প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে প্রধান মুখ অ্যালেক্সেই নাভালনির আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে। মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন আর্কটিক জেল কলোনিতে। গত বছরের অগস্ট থেকে তিনি জেলে বন্দি, চরমপন্থী সংগঠন তৈরি এবং তাতে অর্থসাহায্য করা-সহ অন্যান্য অভিযোগের দায়ে। দীর্ঘ উনিশ বছরের হাজতবাসের সাজা পেয়েছিলেন নাভালনি, যার সূত্রে ডিসেম্বরে আর্কটিক জেল কলোনিতে তিনি স্থানান্তরিত হন। তার আগে, ২০২১ থেকে অন্য অভিযোগের দায়ে মস্কোর কাছের একটি জেলে কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন তিনি। নাভালনির মৃত্যু নিয়ে প্রশ্নও বিস্তর। আমেরিকা-সহ ইউরোপের বহু সরকারও প্রেসিডেন্ট পুতিনকেই তাঁর মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন। এ-যাবৎ পুতিন-বিরোধীদের কারও জীবন যে সুখকর ছিল না, তার উদাহরণ বিস্তর— কেউ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, কেউ রয়েছেন হাজতে, কারও আবার মৃত্যু হয়েছে রহস্যজনক ভাবে। নাভালনি-র মৃত্যু যে স্বাভাবিক কারণে হয়নি, এ অভিযোগ অমূলক নয়।

Advertisement

পেশায় আইনজীবী নাভালনি দু’দশকেরও বেশি সময় দেশের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। প্রথম থেকেই তাঁর মূল লক্ষ্য, প্রশাসনিক স্তরে সমস্ত দুর্নীতি চিহ্নিত ও নির্মূল করা, যা নিয়ে বহু কাল ধরেই বীতশ্রদ্ধ সে দেশের মানুষ। দুর্নীতির পর্দা ফাঁস করে তা বৃহত্তর জনতার কাছে পৌঁছে দিতে তিনি নেট মাধ্যম, বিশেষত তাঁর ইউটিউব চ্যানেলের সাহায্য নেন, যার বেশ কিছু দেশ জুড়ে প্রবল জনপ্রিয়তা অর্জন করে। কিন্তু অচিরেই তিনি বুঝতে পারেন, এই ধরনের দুর্নীতির তদন্ত পুতিনকে চ্যালেঞ্জ জানানোয় পর্যাপ্ত নয়। তাই পরবর্তী কালে তিনি পথে নেমে গণআন্দোলনের পথ বেছে নেন। ২০১১ সালে পুতিনের প্রেসিডেন্ট পদে পুনঃপ্রতিষ্ঠা-পর্বে গণ-প্রতিবাদের সময় তাঁর ব্যক্তিত্ব এবং তীক্ষ্ণ বক্তব্য তাঁকে সমসাময়িক বিরোধী নেতাদের তুলনায় জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সাহায্য করে। ২০১৩ সালে মস্কোর মেয়র পদের নির্বাচনে তিনি পুতিনের প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ে লক্ষণীয় ফল অর্জন করেন, যার জেরে পরবর্তী সময়ে নির্বাচনী লড়াইগুলি থেকে তাঁকে বিরত রাখায় উদ্যোগী হয় ক্রেমলিন। উনিশশো নব্বইয়ের গোড়ায় সোভিয়েট ইউনিয়নের পতনের পরে ১৯৯৩-এর সংবিধান রাশিয়াকে এক গণতান্ত্রিক, যুক্তরাষ্ট্রীয়, আইন-ভিত্তিক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে, যা প্রজাতান্ত্রিক ধরনের সরকার দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা। অথচ পুতিনের শাসনাধীনে রাষ্ট্রটির যে চেহারা হয়েছে, তাকে স্বৈরতন্ত্র ছাড়া কিছু বলা চলে না।

নাভালনির মৃত্যু আবারও প্রমাণ করল রাশিয়ার প্রকৃত স্বরূপ। কিন্তু লক্ষণীয়, বাক্‌স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতার এই প্রবল দমনের দৃষ্টান্ত বার বার সে দেশ তুলে ধরলেও, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনও আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি করা যায়নি আজও। শত কু-কর্ম সত্ত্বেও পুতিনকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সম্ভব হয়নি। মৌখিক দু-চারটি সমালোচনামূলক উচ্চারণ বাদে পশ্চিমের ‘গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী’রা পুতিনকে নিয়ে বিশেষ বিচলিত বলে মনে হয় না। একনায়কের শাসন বিষয়ে আজকের দুনিয়ায় সব দেশেই সহ্য ও ধৈর্য বহুলাংশে বেড়েছে। উদ্বেগের বিষয় বইকি।

আরও পড়ুন
Advertisement