Myanmar Conflict

বেড়া জাল

তবে ১৬০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ধসপ্রবণ পার্বত্য এবং জঙ্গলঘেরা অঞ্চলে বেড়া নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, নজরদারিতে এক দিকে যেমন অর্থক্ষয় হবে, তেমনই ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে অঞ্চলগুলি পরিবেশগত ক্ষতির শিকার হবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩১
An image of army

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মায়ানমারের সামরিক বাহিনী যখন ক্ষমতা থেকে আউং সাং সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারকে উচ্ছেদ করে, তখন তারা মনে করেছিল, তাদের বিরুদ্ধে ওঠা প্রতিবাদী আন্দোলন কয়েক মাসের মধ্যেই স্তিমিত হয়ে পড়বে। অতঃপর তিন বছর অতিক্রান্ত। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের যৌথ অভিযানে আজ টলমল সামরিক জুন্টা সরকারের আসন। বস্তুত, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সীমান্তবর্তী বহু অঞ্চলই এখন তাদের দখলে। মায়ানমারের এ-হেন ক্রমবর্ধমান অস্থিরতা ভারতেরও উদ্বেগের কারণ। পড়শি রাষ্ট্রের গৃহযুদ্ধের আঁচ ছড়িয়েছে মণিপুরের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেও। অশান্তির পর্বে মাদক, অস্ত্র চোরাচালানের পাশাপাশি দুই দেশের ছিদ্রময় সীমান্ত সাক্ষী থেকেছে মায়ানমারের তরফে পলাতক সেনাবাহিনী-সহ অবৈধ অনুপ্রবেশেরও। অতএব দিল্লির সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত— মায়ানমারের সঙ্গে দীর্ঘ ১৬৪৩ কিলোমিটার সীমান্ত বরাবর পড়তে চলেছে কাঁটাতারের বেড়া। পাশাপাশি বাতিল থাকছে ‘ফ্রি মুভমেন্ট রেজিম’-ও (এফআরএম)। প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে এফআরএম প্রয়োগ করা হয় নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অংশ হিসাবে। স্থানীয় বাণিজ্যে সহায়তার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী অধিবাসীদের শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার স্বার্থে চালু হয় এফআরএম। শুধু তা-ই নয়, এর ফলে ভারত-মায়ানমার আন্তর্জাতিক সীমান্তের উভয় দিকে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের পারপার করতে কোনও ভিসা লাগত না। কিন্তু পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক অস্থিরতার জেরে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির জনবিন্যাস সংক্রান্ত কাঠামো বজায় রাখাই উদ্দেশ্য বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি।

Advertisement

তবে ১৬০০ কিলোমিটার বিস্তৃত ধসপ্রবণ পার্বত্য এবং জঙ্গলঘেরা অঞ্চলে বেড়া নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ, নজরদারিতে এক দিকে যেমন অর্থক্ষয় হবে, তেমনই ভূপ্রাকৃতিক দিক থেকে অঞ্চলগুলি পরিবেশগত ক্ষতির শিকার হবে। বেড়া বসিয়েও শেষ পর্যন্ত অনুপ্রবেশ বা চোরাচালান ঠেকানো যাবে কি না, সে প্রশ্নও থাকছে। সমস্যা আরও। বেড়া বসানো হচ্ছে প্রধানত নাগা, কুকি-জ়ো, মিজ়োদের অঞ্চলে, এবং পূর্ব অরুণাচলে জনজাতি অঞ্চলে। এই জনজাতিরা বিষয়টিতে বিশেষ ভাবে ক্ষুব্ধ। মণিপুর এবং মিজ়োরামের কুকি জনজাতিদের সঙ্গে মায়ানমারের চিন সম্প্রদায়ের জাতিগত সম্পর্ক রয়েছে, যা সীমান্ত বন্ধের জেরে ক্ষুণ্ণ হতে পারে বলে আশঙ্কা। অন্য দিকে, এটি যদি শুধু মণিপুরে প্রয়োগ করা হয়, তবে সে রাজ্যে কুকি-জ়ো সম্প্রদায়ের জমি অধিগ্রহণ বিতর্কাগ্নিতে ঘৃতাহুতি পড়তে পারে।

এ দিকে, চিনের প্রভাব প্রশমিত করতে ভারত ইতিমধ্যেই পরিকাঠামোগত প্রকল্প গড়ে তুলেছে। যে সব অঞ্চল বিদ্রোহীদের কবলে, সেখানকার প্রকল্পগুলি এখন অনিশ্চয়তার মুখে। এ-যাবৎ নিজেদের স্বার্থেই জুন্টা সরকারের সঙ্গে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে এসেছে দিল্লি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে পড়শি রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অঙ্কটিকে পুনরায় নতুন করে কষতে হবে। পূর্বাঞ্চলের অস্থির পরিস্থিতিতে এফআরএম বা সীমান্ত বন্ধের পদক্ষেপ এ পারের জনজাতি গোষ্ঠীকে যেন দেশের বিরুদ্ধে না দাঁড় করায়, সে বিষয়েও পুনর্বিবেচনা করুক দিল্লি।

আরও পড়ুন
Advertisement