তারকা যদি স্বয়ং বেনিয়মকে নিয়ম মানেন, তবে তাঁহার অনুরাগীরা কী শিক্ষা লইবেন? বিশ্বের এক নম্বর পুরুষ টেনিস তারকা নোভাক জোকোভিচ সেই নিয়ম ভাঙিবার দলে। অস্ট্রেলীয় ওপেনে তাঁহার যোগদান ঘিরিয়া টানাপড়েন চলিতেছে। ইতিপূর্বে অস্ট্রেলীয় সরকার তাঁহার ভিসা বাতিল করিয়াছিল, তাঁহাকে বিমানবন্দরের বাহিরে পা রাখিতে দেওয়া হয় নাই। কারণ, তিনি কোভিডের প্রতিষেধক লন নাই এবং সীমান্ত বিভাগকে জমা দেওয়া নথিপত্রে ভুল তথ্য দিয়াছেন। অতঃপর ঘটনার জল গড়াইয়াছে অনেক দূর। মামলা হইয়াছে। সেই মামলায় জোকোভিচ জিতিয়াছেন। তৎসত্ত্বেও তাঁহাকে লইয়া অনিশ্চয়তা কাটে নাই। ভুল তথ্য জমা দিবার অপরাধে তাঁহাকে এখনও দেশে ফেরত পাঠানো হইতে পারে। নাটক চলিতেছেই।
প্রসঙ্গত কোভিড সংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি না মানিবার উদাহরণ জোকোভিচের ক্ষেত্রে ইহাই প্রথম নহে। ইতিপূর্বে তিনি কোভিড আক্রান্ত হইয়াও সাক্ষাৎকার দিয়াছেন, মাস্কহীন অবস্থায় ছবিও তুলিয়াছেন। অর্থাৎ, অতিমারির স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ করিতে তিনি অভ্যস্ত। এক্ষণে একটি প্রশ্ন তোলা যায়, তিনি যখন বিশ্বের অগণিত ক্রীড়াপ্রেমীর চোখের মণি, তখন তাঁহার তরফে কি আরও দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করা যাইত না? তিনি ব্যক্তিগত ভাবে কোভিডের টিকা লইবার পক্ষপাতী নহেন। এই কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করিয়াছেন। কিন্তু টিকা সম্পর্কে তাঁহার ব্যক্তিগত মত যাহাই হউক, প্রসঙ্গ যখন জনস্বাস্থ্য, তখন নিজ মত এবং বিশ্বাসে অটল থাকা স্বাস্থ্যকর লক্ষণ নহে। তাঁহার জানা উচিত ছিল ময়দানে নামিবার পর এক জন খেলোয়াড় শুধুমাত্র ব্যক্তিগত রেকর্ডের জন্য খেলেন না, খেলেন নিজ দেশের জন্যও, তাঁহার উপর আস্থা রাখা অনুগামীদের জন্যও। স্বাস্থ্যবিধি মানিয়া চলা এবং প্রতিষেধক লইবার বিষয়টি অনেকাংশে তাহাই। এই সহজ কথাটি ভুলিয়া যাওয়া নিতান্ত কাণ্ডজ্ঞানহীনতার পরিচয়।
অতিমারি এখনও সমগ্র বিশ্বে দাপাইতেছে। ওমিক্রনে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত। এখনও বহু মানুষ টিকা পান নাই। টিকার কার্যকারিতা সম্পর্কে সংশয়ও সম্পূর্ণ কাটে নাই। এমতাবস্থায় জোকোভিচের ন্যায় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের অগ্রসর হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়। তাঁহাদের উদাহরণ আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করিবে টিকা লইতে, স্বাস্থ্যবিধি যথাযথ ভাবে মানিয়া চলিতে। বিভিন্ন দেশে তারকাদের জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সরকারি প্রচারের মুখ করিবার কারণও ইহাই। কিন্তু তিনি সেই পথে তো হাঁটিলেনই না, উপরন্তু এমন উদাহরণ তৈরি করিলেন, যে পথে যদি তাঁহার অনুগামীরাও হাঁটিতে চাহেন, তবে এই অতিমারি কোনও দিনই শেষ হইবে না। ঠিক এই কারণেই তাঁহার অস্ট্রেলিয়া পৌঁছানো লইয়া সেখানকার নাগরিকদের মধ্যে বিক্ষোভ দেখা গিয়াছে। তাঁহারা ইতিপূর্বে দীর্ঘ লকডাউন দেখিয়াছেন, কড়া কোভিডবিধি মানিতে বাধ্য হইয়াছেন, রোজগার বন্ধ হইতে দেখিয়াছেন। এমতাবস্থায় জোকোভিচকে ছাড়পত্র দেওয়া হইলে তাঁহাদের এত দিনের সংগ্রাম অর্থহীন হইয়া পড়িবে। তিনি নিজ স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা লইয়া নিঃসংশয় থাকিতে পারেন, কিন্তু অন্যের বাঁচিয়া থাকিবার সংগ্রামকে অগ্রাহ্য করিতে পারেন না। টেনিস কোর্টের ফল যাহাই বলুক, সমানুভূতির মাপকাঠিতে তিনি অনেক নামিয়া গেলেন, সন্দেহ নাই।