Printing Expense For 2000 Notes Currency

অবিবেচনার খেসারত

২০১৬ সালের নভেম্বরে যখন বাজার থেকে সমস্ত পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখন আর্থিক বিপর্যয় সামাল দিতে তড়িঘড়ি ২০০০ টাকার নোট বাজারে আনা হয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৭:৫৬
An image of money

—প্রতীকী চিত্র।

সতেরো হাজার সাতশো কোটি— টাকার পরিমাণটি বিপুল, নিঃসন্দেহে। এই পরিমাণ অর্থই ব্যয় হয়েছিল ভারতে, ২০০০ টাকার নোট ছাপতে। সম্প্রতি লোকসভায় এক প্রশ্নোত্তর পর্বে অর্থ মন্ত্রকের তরফে তথ্যটি জানা গিয়েছে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে যখন বাজার থেকে সমস্ত পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তখন আর্থিক বিপর্যয় সামাল দিতে তড়িঘড়ি ২০০০ টাকার নোট বাজারে আনা হয়। একই সঙ্গে বদলাতে হয় সমস্ত ব্যাঙ্কের এটিএম-এ নোট রাখার ট্রে-ও। প্রায় সাত বছর পর গত মে মাসে বাজার থেকে এই বড় অঙ্কের নোট ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এ মাসের গোড়ায় যত অর্থমূল্যের ওই নোট বাজারে ছিল, তার ৯৭ শতাংশের বেশি ফেরত এসেছে বলে জানিয়েছে তারা। কিন্তু এত ঢাক পিটিয়ে নোট চালু করা হল কেন, এবং সাত মন তেল পোড়ানোর পরও শেষ পর্যন্ত সেগুলিকে তুলে নেওয়া হল কেন, সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি। দেশের সর্বোচ্চ স্তরে যদি অবিবেচনার মাত্রা এমন বিপুল হয়, অর্থব্যবস্থা সুপরিচালিত হবে কী উপায়ে, উত্তর মেলেনি তারও।

Advertisement

২০১৬-র নভেম্বরে ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে নগদের বিপুল ঘাটতি ঘটে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া-র আইন ১৯৩৪-এর ধারা ২৪(১)-এর অধীনে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ২০০০ টাকার নোট চালু করে। এই নোটই বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে শীর্ষ ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে যে, তাদের ‘ক্লিন নোট পলিসি’ অনুসরণ করে নোটগুলি বাজার থেকে সরানো হচ্ছে। এই নীতিতে একটি নির্দিষ্ট সিরিজ়ের নোট প্রত্যাহার করে নতুন নোটের সূচনা করতে পারে তারা। প্রসঙ্গত, ২০১৮-১৯ সালে ওই বড় মূল্যের নোট ছাপানো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল অন্যান্য মূল্যের নোট পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজারে আসার পরেই। নোটটির উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে বলেই তা তুলে নেওয়া হল, এমন একটি যুক্তি দেওয়া হচ্ছে।

কিন্তু, যে উদ্দেশ্যে বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতির শীর্ষনেতৃত্ব এমন হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেই লক্ষ্য আদৌ পূরণ হয়েছে কি? নোট বাতিলের প্রকৃত উদ্দেশ্য ঠিক কী ছিল, সেই প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। কিন্তু, সে সময় অর্থমন্ত্রী যে সব উদ্দেশ্যের কথা বলতেন, তার কোনওটিই ঠিক ভাবে পূরণ হয়নি। বাজারে নগদের পরিমাণে রাশ টানার উদ্দেশ্যটি ব্যর্থ হয়েছে। শীর্ষ ব্যাঙ্কের পরিসংখ্যানই বলছে, সাত বছরে বাজারে নগদের জোগান বেড়েছে আশি শতাংশের বেশি। নগদের ব্যবহার কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধির যে আশা সরকার করেছিল, তা-ও থেকে গিয়েছে অধরা। ডিজিটাল লেনদেন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেলেও নগদের গুরুত্ব কমেনি। অন্য দিকে, দুর্নীতি রোধ এবং কালো টাকা ধ্বংস করার ঘোষিত উদ্দেশ্যটিও অসফল, বরং পুষ্পেপত্রে বিকশিত হয়েছে। অনুমান করা চলে যে, ২০০০ টাকার মতো বড় অঙ্কের নোট আদৌ কেন চালু করা হবে, এবং তা চালু করলে অর্থব্যবস্থায় তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তা ব্যতিরেকেই সিদ্ধান্তটি করা হয়েছিল। সাড়ে সতেরো হাজার কোটি টাকা সেই অবিবেচনার খেসারত দিতে হল। নীতি-ব্যর্থতার এমন প্রমাণ ভারতে তো বটেই, বিশ্ব অর্থনীতিতেও সুলভ নয়।

আরও পড়ুন
Advertisement