Metro Railways

জীর্ণ গৌরব

মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন, তাহা কলিকাতার ক্ষেত্রে কখনও যথেষ্ট হয় নাই। অর্থাভাবে বারংবার থমকাইয়া গিয়াছে যাত্রাপথ সম্প্রসারণের কাজটি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২১ ০৬:১৫

জন্মদিনেই বিদায়ঘণ্টা। সম্প্রতি ৩৮ বৎসরে পা দিল কলিকাতা মেট্রোরেল। একই দিনে নন-এসি রেক, যাহা কলিকাতা মেট্রোর জন্মলগ্ন হইতে যাত্রিপরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ছিল, তাহাকে চিরবিদায় জানানো হইল। ১৯৮৪ সালে এসপ্ল্যানেড হইতে যাত্রা শুরু করে কলিকাতার ‘পাতাল রেল’। ভারতের মধ্যে প্রথম। যাত্রাপথ সংক্ষিপ্ত। এসপ্ল্যানেড হইতে ভবানীপুর। সেই যাত্রাপথ ক্রমশ বৃদ্ধি পাইয়া উত্তরে দক্ষিণেশ্বর হইতে দক্ষিণে কবি সুভাষ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হইয়াছে। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোপথের কিয়দংশেও যাত্রী-চলাচল শুরু হইয়াছে। পাতাল রেল আর সম্পূর্ণ পাতালে বিচরণ করে না। মাটির উপর, নীচ সর্বত্র তাহার অবাধ বিচরণ। মেট্রোরেলের এই দীর্ঘ ইতিহাসকে এক প্রদর্শনীর মধ্য দিয়া তুলিয়া ধরা হইল তাহার জন্মদিবসে, সেই নন-এসি মেট্রো রেকের মধ্যেই।

মেট্রো কলিকাতার গর্ব, নিঃসন্দেহে। কিন্তু ভারতের অন্য শহরগুলির সঙ্গে তুলনা করিলে কলিকাতা মেট্রো লইয়া লজ্জায় পড়িতে হয়। তুলনায় বিলম্বে যাত্রা শুরু করিয়াও অত্যাধুনিক রেক, সার্বিক পরিচ্ছন্নতা, রক্ষণাবেক্ষণ, পরিষেবা— সমস্ত বিভাগেই দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরুর মেট্রো বহু আগাইয়া গিয়াছে। যে নন-এসি মেট্রো রেক লইয়া এহেন স্মৃতিমেদুরতা, তাহা যে এত কাল জরাজীর্ণ অবস্থাতেও চলাচল করিতেছিল, তাহাই আশ্চর্যের। অন্য কোথাও মেট্রোযাত্রীদের দীর্ঘ দিন অচল পাখা, বৃষ্টির জল, এবং দরজা বন্ধ না হইবার বিড়ম্বনা সহ্য করিতে হইয়াছে কি? নূতন এসি রেক লইয়াও ভোগান্তি কিছু কম হয় নাই। স্টেশনের বহিরঙ্গে চাকচিক্যের প্রাধান্য, অথচ চলমান সিঁড়িগুলি দীর্ঘ দিন অচল থাকিয়া যায়। মেট্রোর এহেন জীর্ণ দশা উদ্বেগের জন্ম দেয়, যে জীর্ণতার জন্য ভারতীয় রেলও অনেকাংশে দায়ী। মেট্রোরেল ভারতীয় রেলের অধীন। এবং এই ক্ষেত্রে কলিকাতা বিমাতৃসুলভ আচরণের শিকারও বটে। কারণটি অনেকাংশে রাজনৈতিক। মেট্রোর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ প্রয়োজন, তাহা কলিকাতার ক্ষেত্রে কখনও যথেষ্ট হয় নাই। অর্থাভাবে বারংবার থমকাইয়া গিয়াছে যাত্রাপথ সম্প্রসারণের কাজটি। ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো যাহার প্রত্যক্ষ প্রমাণ।

Advertisement

সমস্যা অন্যত্রও। পরিচালনার দিক হইতে কলিকাতা মেট্রো রাজ্য সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন। এত দিনেও যে ইহার বেসরকারিকরণ হইল না, বা এই ক্ষেত্রে পিপিপি মডেলটি অনুসৃত হইল না, তাহার জন্য অতীতে বামফ্রন্ট এবং বর্তমান তৃণমূল সরকার— উভয়ই দায়ী। বেসরকারিকরণ হইলে ভাড়া বৃদ্ধি সংক্রান্ত বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্ত লইতে হইত। রাজ্য সরকারের ‘জনদরদি’ নীতির সঙ্গে তাহা মানানসই নহে। যে নীতিতে দিনের পর দিন বেসরকারি বাসের ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত লওয়া যায় না, সেই নীতিতেই দীর্ঘ দিন যাবৎ মেট্রোর ভাড়া বৃদ্ধিও স্থগিত থাকে। এবং এই রাজনৈতিক অপরিণামদর্শিতার ফল ভোগ করিতে হয় মেট্রোকে, পরিণামে কলিকাতার গণপরিবহণ ব্যবস্থাকে। অবশ্য, শুধু পাতালপথেই নহে, আকাশপথের যাত্রীরাও এই রাজনৈতিক অপরিণামদর্শিতার শিকার। বেসরকারিকরণের রাজনৈতিক বিরোধিতার ফলে কলিকাতা বিমানবন্দরটি ক্রমেই পিছাইয়া পড়িতেছে। যে কাজ সরকারের নহে, তাহা করিবার এই অবান্তর জেদ এই রাজ্যের ক্ষতি করিয়া চলিতেছে।

আরও পড়ুন
Advertisement