1943 Bengal Famine

লন্ডন ডায়েরি: বাংলার মন্বন্তরের স্মৃতি, আট দশক পরে

থ্রি মিলিয়ন-এ দেখা গেল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শৈলেন সরকার ২০১৩ থেকে বাংলার গ্রামে ঘুরে ৬০ জনেরও বেশি জীবিত প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেছেন।

Advertisement
শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ০৮:০২

১৯৪৩-এর বাংলার মন্বন্তর নিয়ে বিবিসি রেডিয়োর তথ্যবিবরণী থ্রি মিলিয়ন-এর শুরুতেই উপস্থাপিকা বলছেন, ব্রিটেনে অনেকেই জানতেন না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বাংলার দুর্ভিক্ষে ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়। দুর্ভিক্ষে উইনস্টন চার্চিলের ভূমিকা নিয়ে তর্ক চলে, কিন্তু পীড়িতদের কথা হয় না। স্মৃতিসৌধ, ফলকও নেই। থ্রি মিলিয়ন-এ দেখা গেল, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শৈলেন সরকার ২০১৩ থেকে বাংলার গ্রামে ঘুরে ৬০ জনেরও বেশি জীবিত প্রত্যক্ষদর্শীর অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেছেন। ৯১ বছরের অনঙ্গমোহন দাস বলেছেন, “এত দেরি করে কেন এলেন?” তাঁর গালে গড়িয়ে পড়েছে অশ্রুধারা। কেউ তাঁদের কথা নথিবদ্ধ করেনি। শৈলেনবাবুর ধারণা, অবহেলার কারণ এঁরা দরিদ্র, সমাজে দুর্বল। ভোটার কার্ড অনুযায়ী ১১২ বছরের বিজয়কৃষ্ণ ত্রিপাঠীর মনে আছে, ১৯৪২-এ এক ধাক্কায় আকাশ ছুঁয়েছিল চালের দাম। ভাতের জন্য সন্তান বিক্রি করেছিলেন অনেকে। অনাহার, মহামারিতে সব বয়সের মানুষ মরছিল। নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের বয়স তখন নয়। অন্নপ্রার্থীদের জন্য ঠাকুমার কাছে চাল চেয়েছিলেন। সিগারেটের টিনের অর্ধেকটায় চাল ভরতে বলেছিলেন ঠাকুমা, দিতে পেরেছিলেন মাত্র কয়েক জনকে। অধুনা অক্সফোর্ডবাসী শিল্প ইতিহাসবিদ পার্থ মিত্র বলেছেন, উচ্চবিত্ত বাবা-মা তখন কলকাতার ক্লাবে যেতেন, সেখানে সৈন্যরাও আসতেন। সব স্বাভাবিক ছিল। কেউ বলেননি চাল নেই!

Advertisement
বিপন্ন: ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর। ছবি আনন্দবাজার পত্রিকা-র আর্কাইভস থেকে।

বিপন্ন: ১৯৪৩ সালের মন্বন্তর। ছবি আনন্দবাজার পত্রিকা-র আর্কাইভস থেকে।

ক্রিকেট ও মৃগয়া

ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ভারত সফর করছে। ইংল্যান্ড দল ভারতে প্রথম এসেছিল ৯০ বছর আগে, ডগলাস জার্ডিনের অধিনায়কত্বে। ১৯৩৩-৩৪’এ ভারতের ২১টি শহরে ঘুরে সফর চলেছিল পাঁচ মাস। সফরের নব্বইতম বার্ষিকী মনে রেখেছেন অ্যান্ড্রু মিচেল। তাঁর ঠাকুরদা আর্থার ‘টিকার’ মিচেল সেই সফরের তিনটি টেস্টেই খেলেছিলেন। ইংল্যান্ড ২-০ জিতেছিল। ঠাকুরদা সফর থেকে বাড়ি এনেছিলেন পাটিয়ালার রাজিন্দ্র ক্লাবের ব্লেজ়ার, হাতি খোদাই করা টেবিল, লেপার্ডের চামড়া। লেপার্ডটা সম্ভবত জার্ডিনেরই শিকার। জার্ডিন প্রচুর মৃগয়া করতেন। জুনাগড়ের জঙ্গলে ৩০ জনকে ক্যানেস্তারা পেটাতে ভাড়া করেছিলেন। সিংহ মারতে তিন দিন গাছে চড়ে বসেছিলেন। সফরের মোট ৩৪টা ম্যাচে দল এক বারই হেরেছিল। বারাণসীতে, মাত্র চোদ্দো রানে, মহারাজা কুমারের বিজয়নগর একাদশের কাছে। এমসিসি-র হয়ে দিল্লিতে পাটিয়ালার মহারাজার সঙ্গে ৬৩ রানের পার্টনারশিপ ছিল মিচেলের। দু’জনের ছবি আছে খবরের কাগজের কর্তিকায়। সেই সফরে বেশ কয়েকটি শিকারের আয়োজন করে, নর্তকী ডেকে পাটিয়ালার মহারাজা প্রমোদের বন্যা বইয়ে দিয়েছিলেন।

স্মৃতি: লেপার্ডের চামড়া সহ অ্যান্ড্রু মিচেল, ভারত সফরে প্রথম ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।

স্মৃতি: লেপার্ডের চামড়া সহ অ্যান্ড্রু মিচেল, ভারত সফরে প্রথম ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল।

চতুর্থ স্তম্ভ

ট্রাফালগার স্কোয়্যারের চতুর্থ স্তম্ভে কি এ বার বাংলার বাঘ বসবে? ছাদে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মূর্তিসমেত আইসক্রিম ভ্যানের ভাস্কর্য তৈরি করেছেন ব্রিটিশ এশীয় শিল্পী চিলা কুমারী বর্মণ। ২০২৬-২০২৮’এর মধ্যে স্কোয়্যারের চতুর্থ স্তম্ভে কোন ভাস্কর্য বসবে, তার শেষ ছয়ের দৌড়ে রয়েছে চিলার শিল্পকীর্তিটি। চিলার বাবার আইসক্রিম ভ্যানের ছাদেও এমন ব্যাঘ্রমূর্তি থাকত, ছিল রংবেরঙের অলঙ্করণও। তাঁর বাবা কলকাতা থেকে এসেছিলেন, সেখানকার ডানলপ কারখানা থেকে লিভারপুলের ডানলপের কারখানায় কাজ করতে। ‘দ্য রকেট’ নামের ভ্যানটি চিলার শিল্পীসত্তাকে লালিত করেছে। ভারত থেকে ব্রিটেনে পরিযাণের সামাজিক ইতিহাস ও আশাবাদের দ্যোতক ওই ভ্যান। স্কোয়্যারের চতুর্থ স্তম্ভে রাজা চতুর্থ উইলিয়ামের স্মৃতিস্তম্ভ বসার পরিকল্পনাটি টাকার অভাবে ভেস্তে যায়। ১৫০ বছর ফাঁকা থাকার পর, ১৯৯৮-তে সিদ্ধান্ত হয়, স্তম্ভটিতে আধুনিক ব্রিটেনের পরিচায়ক ভাস্কর্য বসবে, বদলাবে দু’বছর অন্তর।

শিল্প: আইসক্রিম ভ্যানে ভাস্কর্যের মডেল।

শিল্প: আইসক্রিম ভ্যানে ভাস্কর্যের মডেল।

প্রথম

জাতিগত ভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রথম মহিলা হিসাবে লন্ডনের বার্বিক্যান আর্টস সেন্টারের ডিরেক্টর নিযুক্ত হলেন দেবযানী সলটজ়ম্যান। তিনি চিত্রনির্মাতা দীপা মেহতা ও তাঁর প্রাক্তন স্বামী ইউক্রেনীয়-ইহুদি বংশজ চিত্রনির্মাতা পল সলটজ়ম্যানের কন্যা। দেবযানী তাঁর বাবা-মায়ের ছবির রাজনৈতিক ভাষ্যে অনুপ্রাণিত। সেন্টারটিতে আছে দুটো নাট্যমঞ্চ, দুটো শিল্প প্রদর্শশালা, তিনটে সিনেমা হল, একটি কনসার্ট হল। বাজিয়েছেন রবিশঙ্কর, অভিনয় করেছে রয়্যাল শেক্সপিয়র কোম্পানি। দেবযানী বলেছেন, ইস্ট লন্ডনের স্থানীয় গোষ্ঠীগুলি (বাংলাদেশি-সহ), মেক্সিকান, ভারতীয়, চিনা ও প্যালেস্টাইনি শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে এগোবেন।

আরও পড়ুন
Advertisement