শিল্পের টানে ষাট বছরেরও বেশি এক সঙ্গে পথ চলা তাঁদের। ইসমাইল মার্চেন্ট, জেমস আইভরির নাম শুনলেই মনে পড়ে বিলাসী সেটিং, ধ্রুপদী সাহিত্য অবলম্বনে অপূর্ব সব চলচ্চিত্র। আ রুম উইথ আ ভিউ, হাওয়ার্ডস এন্ড, হিট অ্যান্ড ডাস্ট। ৪৩টা সিনেমা বানিয়েছিলেন তাঁরা। বড়দিনের মরসুমে সেই সব সিনেমার উদ্যাপনের অঙ্গ হিসাবে মুক্তি পেয়েছে স্টিফেন সুসি পরিচালিত তথ্যচিত্র মার্চেন্ট আইভরি। দেখা যাচ্ছে, দু’জনের প্রথম সাক্ষাৎ, কী ভাবে তাঁরা ভারতে নিজেদের প্রথম সিনেমা তোলার কথা ভাবলেন। রুথ প্রেভার ঝাবওয়ালা তখন দিল্লিবাসী। সেখানে এসে তাঁর বই দ্য হাউসহোল্ডার-এর স্বত্ব চাইলেন। মুখ্যচরিত্রে শশী কপূর আর লীলা নায়ডু। শুটিং শেষে মনে হল ফুটেজ ভীষণ বেশি।
পথের পাঁচালীর পর তখন সত্যজিৎ রায়ের খ্যাতি তুঙ্গে। তিনি দুই তরুণ ফিল্ম-নির্মাতার ত্রাতা হলেন। এডিটিং-এর সময় সিনেমার গতিপথ পাল্টে দিয়ে সব ফ্ল্যাশব্যাকে দেখালেন। সিনেমা তাঁদের রাতারাতি খ্যাতি এনে দিল। শেক্সপিয়র ওয়ালা, উৎপল দত্ত ও অপর্ণা সেনের দ্য গুরুতেও সত্যজিৎ তাঁদের সহায়ক। দেখানো হয়েছে, আইভরি ও মার্চেন্ট ছিলেন প্রণয়ী। মার্চেন্টের পরিবার ভারতীয়, রক্ষণশীল মুসলিম। তাই, সম্পর্ক গোপন ছিল কয়েক দশক। মার্চেন্ট প্রযোজক, আইভরি পরিচালক। নানা সমস্যার মধ্যেই তৈরি করেন অস্কারজয়ী সব সিনেমা।
বাজেটের টানাটানি হলেই সেটে গলা চড়ত। মার্চেন্ট এমা টমসনকে বলেছিলেন, অস্কার এনে দিয়েছি, টাকাও দিতে হবে? ফোনে শশব্যস্ত ভাবে টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করতেন। টিমকে চাঙ্গা করতে, টাকা না দিতে পারার খেসারতে সেটে রান্না করে খাওয়াতেন। তথ্যচিত্রে আছে হিউ গ্রান্ট, অ্যান্টনি হপকিন্স, হেলেনা বোনাম কার্টার, মধুর জাফরির মন্তব্য, প্রয়াত মার্চেন্ট, ঝাবওয়ালার পুরনো সাক্ষাৎকার। মার্চেন্ট প্রসঙ্গে ৯৬ বছরের আইভরি বলেছেন, সফল প্রযোজককে ছলচাতুরিও জানতে হয় বইকি। রুথ-এর ঠাট্টা, জেলেও যেতে পারতেন!
বড়দিনের লন্ডন
লন্ডনে জমে উঠেছে উৎসবের মরসুম। ওয়েস্ট এন্ড-এর রাস্তাগুলিতে বড়দিনের আলো। পিকাডিলির বিখ্যাত দোকানের সাজ দেখতে জনতার ভিড়। সেখানে ক্রিসমাসের পিঠে, মধু, জ্যাম, চা সব বিক্রি হয়, কেনাকাটা করে রাজপরিবার। ট্রাফালগার স্কোয়্যারে সেজে উঠেছে বিশেষ ক্রিসমাস ট্রি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের সাহায্যের কৃতজ্ঞতায় নরওয়ে সরকার পাঠায় সেটি। কিন্তু প্রতি বারই অভিযোগ ওঠে অসলোর বাইরের জঙ্গল থেকে লন্ডন পর্যন্ত পাড়ি দিতে গিয়ে গাছটির কিছু ডালপালা, পাতা খোয়া যায়, একটু ছোট দেখায় গাছটি। যা-ই হোক, গাছটি বন্ধুত্বের প্রতীক। তার চার পাশের বড়দিনের বাজারের মশালাদার সুরা, মরসুমি খানাপিনার সুগন্ধ আনন্দ দ্বিগুণ করে দেয়।
হৃদয়সম্পদ
অ্যান্ডার্স ফার্নস্টেডট গত বছর চাকরি হারান, তাই গৃহহীন। লন্ডনের হাইড পার্কের সামনে নাইটসব্রিজের অভিজাত রাস্তায় ২১ কোটি পাউন্ডের খালি অট্টালিকার দরজার সামনে থাকেন ৫৬ বছরের এই সুইডিশ। তাঁর বিত্তবান প্রতিবেশীরা তাঁকে দামি উপহার দিয়েছেন। অ্যান্ডার্স বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের টুইড স্যুট, জুতো পরেন। তাঁর ‘বাড়ি’তে সাজানো ফুল, খেলনা, বই, মোমবাতি। উপহার পেয়েছেন হাঁসের নরম পালকের লেপ, ডিজ়াইনার ট্র্যাকস্যুট, জ্যাকেট, ওভারকোট, চামড়ার দস্তানা, ছাগলোমের স্কার্ফ। কখনও অভুক্ত থাকতে হয়নি তাঁকে। রাটল্যান্ড গেটের এই খালি ৪৫ কামরার অট্টালিকাটির বাইরে যখন তিনি থাকতে শুরু করলেন, তখন থেকেই বিত্তশালী প্রতিবেশীদের জীবনধারার প্রতি সম্মান দেখিয়ে টাই পরেন, পরিচ্ছন্ন থাকেন, পরিবেশ পরিষ্কার রাখেন। ফলে মহল্লায় তিনি জনপ্রিয়, বড়দিনের ভোজটাও তাঁর জমবে নির্ঘাত। নতুন বছরে নিশ্চয়ই তিনি চাকরি পাবেন, সত্যিকারের বাড়িও মিলবে।
রাজার ছবি
অস্বস্তিতে রাজবাড়ি। বিনামূল্যে বিতরিত রাজা চার্লসের ছবিটি খুব কম প্রতিষ্ঠান নিতে চাইছে। হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, স্থানীয় পরিষদ, আদালতে প্রদর্শনের জন্য পূর্বতন কনজ়ারভেটিভ সরকার ২৭ লাখ পাউন্ড অর্থমূল্যের রাজার এই প্রতিকৃতি-প্রকল্পটি গ্রহণ করে। নৌবাহিনীর পোশাকে সজ্জিত রাজার ৬৭১৫২টি প্রতিকৃতির মাত্র ২০৫০০টি গৃহীত হয়েছে। দেশে ১৪৫৪টা হাসপাতালের মধ্যে ছবি নেবে মোটে ৪০টি! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে রাজি ৩৫টি (৭%)! মনে হয়, উপকূলরক্ষীরাই রাজার শ্রেষ্ঠ ভক্ত। সারা দেশে তাদের ২৩টি প্রতিষ্ঠানের সব ক’টিই ছবি নিতে আগ্রহী।