Peaceful Election

সম্পাদক সমীপেষু: শান্তির দুরাশা

খুব জানতে ইচ্ছে করে, অবাধ ভোটের বর্তমান সংজ্ঞা কী? ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোটে বোমাবাজি হবে কেন?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২২ ০৫:৪৮

‘কালি’ (২১-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে এই চিঠি। মন বলছিল, এ বার আমরা একটা ‘অন্য ভোট’ দেখব হয়তো। একটা সাধারণ ভোটের জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ, এ তো রাজ্যবাসীরই পরাজয়। তাই ভোটের আগের দিন পর্যন্ত বিরোধীদের ‘অযৌক্তিক বায়না’ অনেকেরই বিরক্তির উদ্রেক ঘটিয়েছে। ভেবেছিলাম, রাজ্যের শাসক দল প্রকৃত অর্থে একটা সুন্দর ‘ভোট-উৎসব’ উপহার দিয়ে বিরোধীদের জবাব দেবে। শাসক দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতারা বোঝাবেন, তাঁরা কেন দিল্লির মসনদের দাবিদার! হায়, এ-সব ভাবনা মিলল না। আমরা, শান্তিকামীরা, হতাশ হলাম।

খুব জানতে ইচ্ছে করে, অবাধ ভোটের বর্তমান সংজ্ঞা কী? ‘শান্তিপূর্ণ’ ভোটে বোমাবাজি হবে কেন? বুথের ভিতর যিনি ভোট দিচ্ছেন, তাঁর পাশে দ্বিতীয় কোনও ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকবেন কী কারণে? কেনই বা শিয়ালদহে পুলিশের নাকের ডগায় বোমার আঘাতে নিরীহ ক্যাবচালক দীপু দাস মারাত্মক ভাবে জখম হবেন? এবং ওই ঘটনার তিন দিন পরেও কোনও পক্ষ থেকেই ক্ষতিপূরণের সামান্যতম আশ্বাস পাওয়া গেল না কী কারণে? তা হলে এটাই কি আমাদের সংস্কৃতি! এই সংস্কৃতি নিয়েই আমরা, বাঙালিরা গর্ব করব? একটার পর একটা নির্বাচন আসবে আর আমরা বলতে থাকব— এ বারের নির্বাচন ‘মোটের উপর’ অবাধ ও শান্তিপূর্ণ! আর ভাল লাগছে না এ সব দেখতে। এ রাজ্যে বাস্তবিকই ভোটব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চাই।

Advertisement

সবুজ সান্যাল, ধাড়সা, হাওড়া

আন্দোলনই পথ

‘কালি’ সম্পাদকীয় পড়লাম। নির্বাচন আজ প্রহসন। বিরোধীশূন্য ভোট যেন সব শাসক দলের আকাঙ্ক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গণতন্ত্রে বিরোধীদের বাদ রেখে, বোমা-গুলি-হুমকি দিয়ে যেন তেন প্রকারেণ জিতে ক্ষমতায় যাওয়াটাই মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার সংসদে, বিধানসভায়, পুরসভা বা পঞ্চায়েতে বিরোধী দলের সদস্যদের কথা বলতে না দেওয়া, তাঁদের মতামতকে গুরুত্ব না দেওয়া, অধিকার প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে ভোট মানেই একটা আতঙ্ক, উদ্বেগ— কত মৃত্যু হবে। চোখে ঠুলি নির্বাচন কমিশনেরও, তাদের তরফেও একই সুর শোনা যায়। জনগণ তাই নির্বাচন-বিমুখ হয়ে যায়। ভোট আসে-যায়, রাজা বদলায়, জনগণের জীবনের মৌলিক সমস্যার সমাধান হয় না। কারণ সব শাসকের চরিত্র এক— শোষণ। গণ-আন্দোলনই একমাত্র পারে মুশকিল আসান করতে। সদ্য দিল্লির কৃষক আন্দোলনের জয় সেটা দেখিয়ে দিয়েছে।

বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া

সর্বদলীয় কমিটি

‘কালি’ সম্পাদকীয়তে কলকাতা পুরসভার নির্বাচনে শাসক দলের বুথ দখল, গা জোয়ারি করে ভোট লুট করা নিয়ে বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখা হয়েছে। তবে শীঘ্র সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। এই বাংলায় একটানা ৩৪ বছরের বামপন্থী শাসনে বাহুবলী অপসংস্কৃতি সৃষ্টি হয়েছিল। লুম্পেন প্রলেতারিয়েত-এর একটা বড় অংশ ২০০৯ সাল থেকেই বামেদের পতনের আভাস পেয়ে জার্সি বদল করে তৃণমূলের দিকে নাম লেখাতে শুরু করে। এই সব সদস্য-সমর্থক নিয়েই বামপন্থীরা দীর্ঘ দিন বিরোধীদের পরাজিতের দীর্ঘশ্বাস ফেলতে বাধ্য করেছিলেন, আজ ইতিহাসের অনিবার্যতার নিয়মেই তাঁরাও পরাজিতদের দলে নাম লিখিয়ে চলেছেন। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল মারাত্মক গন্ডগোল করেছিল, খুন-জখম, রক্তপাতের মধ্য দিয়ে, সংবাদমাধ্যমের রিপোর্টে যা ধরা আছে। এই সব কৌশল যে তাঁদের কাছ থেকে শেখা, তা অস্বীকার করবেন কী ভাবে বামপন্থীরা?

আমার প্রস্তাব, প্রতিটি নির্বাচনে সর্বত্র এখন থেকে সর্বদলীয় কমিটি গড়ে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রশাসনের পাশাপাশি রাস্তায় নেমে সহযোগিতা করতে হবে। কাজটি শুধু প্রশাসন, রাজনৈতিক দলের নয়, সুস্থ শিক্ষিত, মানবিক, বুদ্ধিজীবীদেরও। কালিটা দীর্ঘ দিনের, চট করে উঠে যাবে না।

মৃত্যুঞ্জয় বসু, কলকাতা-৩০

ব্যবধানের বহর

যখন পুরসভার ভোটে কোনও প্রার্থী তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর থেকে ৩৭ হাজারের বেশি ভোটে জেতেন, তখন আশঙ্কা জাগে যে, সেই ওয়ার্ডে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। এ বারের কলকাতা পুরসভার ভোটে ১২ নম্বর বরোর ১০৯ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় এমন ব্যবধানেই জিতেছেন, যা সাধারণত বিধানসভা নির্বাচনে দেখা যায়। ১০৯ ওয়ার্ডে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে, ভোটের ফল তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে। ভয় হয়, আগামী ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে এ রাজ্যের নাগরিক সুষ্ঠু ভাবে ভোট দিতে পারবেন তো?

কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি

স্বৈরতন্ত্রের গন্ধ

‘সম্মান মিলিল কি’ (২৩-১২) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনে শাসক দলের এই ফল প্রত্যাশিত, বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল থেকেই ইঙ্গিত মিলেছিল। তাই এ বারের কলকাতা পুরসভা নির্বাচন নিরুত্তাপ হবে, এমনটাই আশা ছিল। কিন্তু এ বারেও উঠল ছাপ্পা ভোট, বুথ জ্যাম, রিগিং-এর ভূরিভূরি অভিযোগ। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, মানুষ তাঁর সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ করেছেন। তা হলেও প্রশ্ন ওঠে, গণতন্ত্রের পক্ষে এই ফল অশনিসঙ্কেত নয়তো? একনায়কতন্ত্রের ঝাঁঝালো গন্ধ বার হচ্ছে না তো গণতন্ত্রের মোড়কে!

যখন বেশির ভাগ মানুষের সমর্থন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের পতাকার তলায় উথলে পড়ে, তখনই জন্ম নেয় স্বেচ্ছাচারিতা। এটা স্বতঃসিদ্ধ। তা কেন্দ্র, রাজ্য, পুরসভা, পঞ্চায়েত সর্বক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। জনগণের কল্যাণের বদলে আস্ফালনের চাপে গণতন্ত্র শব্দটাই তখন হাঁসফাঁস করে! হায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, “জয় করে তবু ভয় কেন তোর যায় না!”

রাজা বাগচি, গুপ্তিপাড়া, হুগলি

কোনটা নাটক

কলকাতার পুরভোটে ব্যাপক বেনিয়ম ও পেশিশক্তির আস্ফালন নিয়ে ‘কালি’ এবং ‘সম্মান মিলিল কি’ বলিষ্ঠ সম্পাদকীয় দু’টি পড়লাম। যে পুরভোটের জয় শাসক দলকে গৌরবান্বিত করতে পারত, তা কলঙ্কিত করল দলকে। পুর নির্বাচনের ফল সাধারণত শাসক দলের অনুকূলে যায়। সদ্য ত্রিপুরা ও রাজস্থানে পুরভোটে শাসক দলের জয়জয়কার হয়েছে। তা সত্ত্বেও তাদের কারচুপির আশ্রয় নিতে হল? ভোটে বেনিয়মের অভিযোগকে নস্যাৎ করে ‘ওদের নাটক’ বলে বিবৃতি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরং বলা যায়, ভোটের আগে দেওয়া শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিটা ছিল শাসক দলের নাটক।

অতীশচন্দ্র ভাওয়াল, কোন্নগর, হুগলি

ভোটের হার

রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানলাম, কলকাতা পুরভোটে ভোটদানের হার ৬৩.৩৩%। গত ২০১৫ সালে পুরনির্বাচনে ভোটদানের হার ছিল ৬৮.৫%। দীর্ঘ ৬ বছর পর রাজধানী কলকাতার বুকে ৫.১৭% ভোটার ভোটদানে বিরত থাকলেন। অথচ, বিধানসভা কিংবা লোকসভা নির্বাচনে জঙ্গলমহলে ভোটদানের হার প্রায় ৯৫% ছাপিয়ে যায়। কারা তা হলে সচেতন নাগরিক, জঙ্গলবাসী না মহানগরবাসী?

অতুল চন্দ্র সামন্ত, নন্দকুমার, পূর্ব মেদিনীপুর

আরও পড়ুন
Advertisement