Women Empowerment

সম্পাদক সমীপেষু: সংসারের দুর্গারা

সব কিছু সহ্য করেও সংসার আর চাকরি টেনে চলতে হয়। নিগৃহীত লাঞ্ছিত জর্জরিত জীবন। তবু সর্বং সহা। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের সমাজে বিবাহবিচ্ছিন্ন কম। কিসের বিনিময়ে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৭:০৭
An image of Tea Garden

—প্রতীকী চিত্র।

ঈশানী দত্ত রায়ের ‘তা বলে কি প্রেম দেব না’ (৩০-৯) প্রবন্ধটি সমাজের বৃহত্তর পটভূমির আলো-আঁধারির গুরুত্বপূর্ণ ছবি। প্রবন্ধকার যা তুলে ধরেছেন, তার সূত্রগুলো আমাদের অনেক ক্ষেত্রকেই চিনিয়ে দেয়। বেশ কিছু বিষয় আছে, যেগুলো চোখের সামনে দেখেও দেখি না। তেমন ভাবে উঠে আসে না। বছরের পর বছর আড়ালে থেকে গিয়ে ভুক্তভোগী মানুষের কাছে ভবিতব্য বলেই মনে হয়। এই যে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে দশ হাতযুক্ত দুর্গা প্রতিমা যুগ যুগ ধরে সবাই দেখে আসছি, প্রণাম করছি, আনন্দ পাচ্ছি, আমাদের মাথাতেও তো ধরা দিচ্ছে যে, দুর্গা অসুর বধ করতে পারে। ছেলেপুলে নিয়ে বাপের বাড়ি আসে, আবার কৈলাসে শিবানী হয়ে সংসার সামলায়। দুর্গা অনেক কাজ করতে পারে। আমাদের ঘরে মা সর্বজয়াও দুর্গা, মেয়েও দুর্গা। আর অপু ছেলে। সে খোঁজে স্বপ্ন। দুর্গা খোঁজে অন্ন। আর এখান থেকে মনে হয় দুর্গাদের ছক বাঁধা জীবনের জাঁতাকলে পড়ে নিষ্পেষিত হওয়া শুরু। দুর্গারা ঘরে-বাইরে জোগাড় করে খেটে মরে। খনিতে, ইটভাটায়, পিচের রাস্তা তৈরিতে ধান কাটা রোয়া ঝাড়াইয়ে। ঘরে, হোটেলে, রেস্তরাঁতে, বাসন মাজতে, চা বাগানে পিঠে শিশুকে বেঁধে নিয়ে কাজ করতে, তাঁত চালাতে, সমবায় চালাতে। সেই সঙ্গে ঘরে-বাইরে মারও খেতে। এই দুর্গারা কোনও কিছু ভাবে না। জঙ্গলে কাঠ কুড়োয়। সুন্দরবনে কাঁকড়া ও মীন ধরে। মনে করে, এটাই তো জীবন। এমনই তো হয়।

Advertisement

কেউ কেউ আবার লেখাপড়া শিখে চাকরিও পায়। অনেকটা রাস্তা ঠেঙিয়ে ভোর থেকে রাত্রি পর্যন্ত বাইরে কাটাতে হয়। সময় পেলে ঘুমন্ত বাচ্চাকে জড়িয়ে অপরাধ আর অসহায়তা বোধে চোখের জল ফেলে। অসুস্থ স্বামী আর ছেলেকে দেখাশোনার জন্য মামলা লড়ে বাড়ির কাছাকাছি চাকরি পেতে হয়। এমনও পড়েছি সংবাদপত্রে, রাস্তায় যাতায়াতের ধকল সহ্য করতে না পেরে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। ঘরে-বাইরে চলে এক বিচ্ছিন্নতার যুদ্ধ। ভুল বোঝাবুঝির লড়াই। সব কিছু সহ্য করেও সংসার আর চাকরি টেনে চলতে হয়। নিগৃহীত লাঞ্ছিত জর্জরিত জীবন। তবু সর্বং সহা। পরিসংখ্যান বলছে, আমাদের সমাজে বিবাহবিচ্ছিন্ন কম। কিসের বিনিময়ে? অবদান, না আত্মত্যাগ? এই দুর্গাদের হাতেই ধরা থাকে জীবনের বন্ধনের এক অদৃশ্য সুতো। এটাই কি ইউনেস্কোর ‘আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’?

প্রতিমা মণিমালা, হাওড়া

মিথ্যার বেসাতি

ঈশানী দত্ত রায়ের প্রবন্ধটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও সময়োপযোগী। প্রতীকী চিত্রটিও গভীর এবং ব্যঞ্জনাবহ। তাঁর লেখাটি সমৃদ্ধ হওয়ার মূলে আছে সমাজনীতি, অতীতের রাজনীতি, চলচ্চিত্র, কাব্য-সাহিত্য রোমন্থনের মধ্য দিয়ে এ-কালের বিশ্লেষণ। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ছে, ‘চণ্ডীমঙ্গল’ কাব্যের ভাঁড়ু দত্তকে। সে বাজারে মিথ্যার বেসাতি করে সমস্ত পণ্যসামগ্রী বাড়ি নিয়ে যায়। চালওয়ালা ধনা চাল দিতে অস্বীকার করলে ভাঁড়ুর অভিব্যক্তি— “ভাল মোর অধিকার আছয়ে নগরে।/ কালুকা পাইমু তোরে হস্তের উপরে।।” ফলে ভীতসন্ত্রস্ত ধনা চাল দিতে বাধ্য হয়। আসলে এ এক ধারাবাহিক ব্যাধি। সভ্যতার উষালগ্ন থেকে ছিল; আজও আছে, থাকবেও হয়তো। রাজনৈতিক সাঙ্গোপাঙ্গরা তো থাকবেই। এরাই তো সরকারের মুখ। অতীতেও ছিল। প্রবন্ধকার যথার্থই বলেছেন, “বাংলা এবং হিন্দি বাণিজ্যিক ধারার ছবিতে একটি চেনা চিত্রনাট্য হচ্ছে ছানা আর পোনাদের রাজত্ব।” এরা কী-না করে! চোখ রাঙানো, শাসানো, মারধর, এমনকি মহিলাদেরও এদের থেকে মুক্তি নেই! কারণ, তারা অমুকের ভাই, ছেলে, শ্যালক, ভায়রাভাই, বোনপো, নয়তো তুতোভাই, এমনকি পাড়াতুতো ইত্যাদি রূপে বিরাজমান। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর ‘উলঙ্গ রাজা’ কবিতার চিত্রনাট্য আর কি। “কেউ-বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে;/ কেউ-বা পরান্নভোজী, কেউ/ কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক।” তবুও কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা প্রতিবাদে সরব হন। আজও কলমওয়ালারা কলম হাতে রাখেন, সম্মিলিত হন, দানা বাঁধেন, পথে নামেন। শিরদাঁড়া সোজা রাখা মানুষগুলো আছেন বলেই কবির কলমে উঠে আসে— “বরং তাকেই একদিন রাস্তা ছাড়তে হয়,/ যার স্পর্ধা আকাশ ছুঁয়ে যায়।” আসলে অতীত রোমন্থনে দেখা যায়, “কেউ কারোকে রাস্তা ছেড়ে দেয় না,/ যত দিন এই পৃথিবীতে গান থাকে,/ গানের মানুষ থাকে, স্বপ্ন থাকে...।” (বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়)।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

পোনাদের দাপট

ঈশানী দত্ত রায়ের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বলি, বর্তমানে এ রাজ্যে যা যা ঘটে চলেছে, তাকে যে ভাবেই ব্যাখ্যা করি না কেন, প্রায় সকলেই স্বীকার করি মনে মনে যে, আমরা ভাল নেই। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন? আপনি তো লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্বাস্থ্যসাথী, কন্যাশ্রী ইত্যাদি পাচ্ছেন! চার দিকে কত রাস্তা হয়েছে। হ্যাঁ, এ সব তো সত্যিই হয়েছে। তা হলে আমাদের অসুখের কারণটা কী? উত্তর হল, পশ্চিমবঙ্গ এখন (প্রবন্ধ অনুসারে) প্রায় পুরোপুরি ‘সরকারি পোনাদের’ দখলে।

‘পোনা’ শব্দটা দেখতে নিরীহ বটে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি আসুরিক শক্তিতে বলীয়ান। কেউ যদি ‘পোনা’ শব্দটির পরিবর্তে লুম্পেন, তোলাবাজ, গুন্ডা-মস্তান, দালাল বা অন্য কিছু ব্যবহার করতে চান, তবে তা করতেই পারেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, সাধারণ মানুষ, মানে আমরা এ সব মেনে নিচ্ছি কেন? এর উত্তর হল, ভয়। প্রতিবাদ করতে গেলে এমনি এমনি আপনাকে ওরা ছেড়ে দেবে না। আপনার কিছু প্রাপ্তি জুটবে। সেটা শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শাস্তি হতে পারে। আর্থিক লোকসান হতে পারে। গাঁজা বা মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগ হতে পারে। আরও অনেক কিছুই হতে পারে। তা হলে কি আমরা এর প্রতিবাদ করব না? প্রবন্ধকার যে-হেতু নিজে এক জন নির্ভীক সাংবাদিক, তাই তিনি লিখেছেন— “আমরা লিখতে পারি, বলতে পারি, ছবি তুলতে পারি। সরকারি ছানা আর পোনারা আমাদের শেষ পর্যন্ত কিছুই করতে পারবে না।” না, আমরা সবাই এ সব পারি না। তার কারণটা কী, তার উত্তর প্রবন্ধকার নিজেই দিয়েছেন: “নিজেরা বেশি কিছু করার ঝুঁকি নেব না। কিন্তু যারা নেবে তাদের ভয়ানক বিপদ।”

প্রবন্ধকার অবশ্য আশাবাদী ও এই প্রসঙ্গে তিনি ‘দায়বদ্ধতা’ শব্দটা টেনে এনেছেন। কিন্তু সত্যিই কি আমরা দায়বদ্ধতা দেখাতে পারছি? ক’জন সাংবাদিক এই গুন্ডারাজের বিরুদ্ধে কলম ধরতে পেরেছেন? আসলে এর পিছনে অন্য গল্পও লুকিয়ে আছে। সেটা হল— সরকারের এক দারুণ অস্ত্র আছে। তার নাম ‘সরকারি বিজ্ঞাপন’। এবং ব্যাপারটা শুধু এখানেই থেমে থাকে না। পোনাদের বা সরকারের বিরুদ্ধে গেলে অনেক ক্ষেত্রে বেসরকারি বিজ্ঞাপনও বন্ধ হয়ে যায় অদৃশ্য ইশারায়। এই সব বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে সত্যের পথে থেকে যে সব সাংবাদিক মাফিয়ারাজের প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের সেলাম জানাই। রাজধর্ম পালন, দুষ্টের দমন, শিষ্টের পালন, এ সব কথা এখন রূপকথা মনে হয় এই রাজ্যে।

অথচ, মানুষের মন আশা করতে ভালবাসে। কিন্তু শুধু আশার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না, সমাজকে কলঙ্কমুক্ত, শোষণমুক্ত ও জঞ্জালমুক্ত করতে হলে তাই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ দরকার। এবং সে কাজটি শুধুমাত্র সাংবাদিকদের উপর চাপিয়ে দিলে হবে না, সমাজের সকল স্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।

অশোক বসু, বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

চলমান সিঁড়ি

দমদম জংশন রেল স্টেশনের দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মের চলমান সিঁড়িটি প্রায় পাঁচ বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। কখনও কখনও উল্টো দিকে চলে, যা যাত্রীদের কোনও কাজে লাগে না। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিজন বিহারী হাজরা, কলকাতা-৭৭

আরও পড়ুন
Advertisement