agricultural cooperatives

সম্পাদক সমীপেষু: সমবায়ের দৈন্যদশা

প্রয়োজনীয় সমষ্টিগত উদ্যোগ ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে বর্তমানে না হচ্ছে অনাদায়ি ঋণের পুনরুদ্ধার, না আসছে নতুন কোন‌ও আমানত।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২৪ ০৫:০৪

—ফাইল চিত্র।

বঙ্গের কৃষিজীবী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের একটা বড় অংশ, বিশেষত ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিদের কাছে কয়েক বছর আগে পর্যন্ত‌ সমবায় সমিতিগুলি ছিল অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান। যেখানে ফসল উৎপাদন খাতে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন শস্যবীজ, জৈব ও রাসায়নিক সার, অণুখাদ্য, কীটনাশক প্রভৃতির মতো হরেক জরুরি কৃষি-উপকরণ তো বটেই, সরকারি প্রকল্পের আওতায় সরল সুদে, নমনীয় শর্তে মিলত ঋণপ্রাপ্তির বাড়তি সুবিধাও। যে অর্থের কিয়দংশ‌ই আবার কাজে আসত চাষাবাদে, প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত ক্ষয়ক্ষতি অথবা আর্থিক লোকসানের ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে। কিন্তু, প্রশাসনিক উদাসীনতা এবং অভ্যন্তরীণ নানা নীতিগত জটিলতায় রাজ্য জুড়ে অসংখ্য সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি আজ এক প্রকার অঘোষিত অচলাবস্থার শিকার।

Advertisement

এ-হেন অনাকাঙ্ক্ষিত দৈন্যদশার নেপথ্যে প্রধানতম কারণ হিসাবে দীর্ঘ দিন যাবৎ পরিশোধ না হ‌ওয়া বিপুল অঙ্কের খেলাপি ঋণের বোঝাকে দায়ী করার যৌক্তিকতা পূর্ণমাত্রায় রয়েছে ঠিক‌ই, তবে তার‌ই পাশাপাশি ভোট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়ান্তর নির্বাচিত সমবায় বোর্ড গঠন না করে, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের উপরে সমিতি পরিচালনার যাবতীয় দায়ভার সঁপে দেওয়ার মতো নেতিবাচক সিদ্ধান্তের ভূমিকাও কোন‌ও অংশে কম নয়। সেই সঙ্গে, কৃষি সমবায় শিল্পের বিবিধ জটিলতর সমস্যার আশু প্রতিকার তথা সার্বিক উন্নতিবিধানের প্রশ্নে সরকারি মহলের গয়ংগচ্ছ মনোভাব কালক্রমে ক্ষেত্রটিকে পৌঁছে দিয়েছে খাদের কিনারায়। প্রয়োজনীয় সমষ্টিগত উদ্যোগ ও পর্যাপ্ত লোকবলের অভাবে বর্তমানে না হচ্ছে অনাদায়ি ঋণের পুনরুদ্ধার, না আসছে নতুন কোন‌ও আমানত। উপরন্তু, ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে সদস্যপদ সঙ্কোচনের প্রবণতা। অবাক লাগে এই কথা ভেবে, আঞ্চলিক স্তরে কৃষিনির্ভর গ্ৰামীণ অর্থনীতির স্বাভাবিক বিকাশপ্রক্রিয়া একদা ত্বরান্বিত হত যে সমবায় প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতায়, সেই শিল্পের‌ই ভবিষ্যৎ আজ ঘোর অনিশ্চয়তার দোলাচলে।

তন্ময় মান্না, বৃন্দাবনপুর, হাওড়া

অপুষ্ট ভারত

সম্পাদকীয় ‘কাপুরুষের নীরবতা’ (২৬-১২) প্রসঙ্গে এই চিঠি। আমরা জানি ভারত দীর্ঘ দিন ধরে ক্ষুধার্ত এবং অপুষ্ট। সদ্যোজাত শিশু ও মায়ের মৃত্যুতে ভারত বিশ্বে প্রথম সারিতে। কিন্তু দেশের বর্তমান শাসকরা এক দরিদ্র-অপুষ্ট ভারতকে ‘মহান’ এবং বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তিধর হিসাবে তুলে ধরতে এতই ব্যস্ত যে, কখন তার ভিতরের বাঁশ-খড় বেরিয়ে পড়েছে, তা খেয়ালও করেননি। মাঝে কিছুকাল স্বস্তি ছিল যে-হেতু অর্ধশতবর্ষ পূর্বে ভারতে সংঘটিত প্রথম সবুজ বিপ্লব এবং তার পরিণতি হিসাবে ধান এবং গমের মতো দানাশস্যের, যা ভারতের স্থানীয় মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত ও রুটির জোগান দেয়, উৎপাদন বহু গুণ বেড়েছিল। ফলে উনিশ শতকের মাঝামাঝি দেশে খাদ্যাভাব কমেছিল।

জন বোরলগ-সহ ভারতীয় বিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের পরামর্শে দেশের কৃষকরা প্রাকৃতিক উৎস যথা ভূমিজাত জল, আধুনিক প্রযুক্তি, রাসায়নিক সার, কৃষিবীজ ইত্যাদি ব্যবহার করে পর্যাপ্ত ফলন পেয়েছিলেন। সরকারও তার সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে গণবণ্টন ব্যবস্থার (পিডিএস) মাধ্যমে তা দেশবাসীর মধ্যে সরবরাহ করে খাদ্যের অভাব কিছুটা কমিয়েছিল। কিন্তু প্রশ্ন ছিল, দানাশস্যে পেট ভরানো মানে তো শুধু ক্ষুন্নিবৃত্তি করা, কিন্তু তাতে মানুষের প্রকৃত পুষ্টিলাভ হচ্ছে কি? ভাত-রুটির মতো শর্করা জাতীয় খাদ্য মোটেই সুষম পুষ্টির সমর্থক নয়। তার জন্য চাই মাছ, মাংস, ডিমের মতো প্রোটিন, আনাজ, ফলমূল এবং মশলাপাতির এক সুষম অনুপাত। শুধু সবুজ বিপ্লবে, যা মূলত ধান-গম-আনাজ উৎপাদনের প্রাচুর্য দেয়, তা যথেষ্ট নয়। এর জন্য শ্বেত বিপ্লব (দুগ্ধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি), গোলাপি বিপ্লব বা মাংস এবং পোলট্রি প্রক্রিয়াকরণ ক্ষেত্রের আধুনিকীকরণ এবং পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি, নানা রকম আনাজপাতি, ফলমূল, মশলাপাতি উৎপাদনেও প্রাচুর্য চাই। তবেই নিশ্চিত হবে জাতির সুস্বাস্থ্য।

এ দিকে আমরা অন্য বিপদেরও সম্মুখীন। সবুজ বিপ্লবের কারণে উদ্ভূত পরিবেশের ধ্বংসের খবর যেমন পাওয়া যাচ্ছে, তেমনই মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার এবং মানুষের চাহিদা বৃদ্ধির জেরে প্রাকৃতিক উৎসগুলি, যেমন মাটির ভিতরের জল, মাটির উর্বরতা নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এ রাজ্যের বহু এলাকার জমিতেই আর ভূগর্ভের জলের স্তর নলকূপেও নাগাল পাচ্ছে না। মাটি এখন ক্লান্ত, রিক্ত। তার পরিপূরক দ্রব্য অবশ্যই কিছু বিষাক্ত রাসায়নিক নয়, আধুনিকীকরণ সত্ত্বেও মাটির জীববৈচিত্রকে বাঁচিয়ে রাখার উপযুক্ত জোগান কৃষকদের পক্ষেও সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পুষ্টির প্রশ্নে নেতানেত্রীদের নীরবই থাকতে হচ্ছে।

তপোময় ঘোষ, কেতুগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান

কংগ্রেসের ভুল

সুমিত মিত্রর উত্তর সম্পাদকীয় ‘মোক্ষম এক শিক্ষা’ (১৩-১২) প্রসঙ্গে এই পত্রের অবতারণা। সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটে উত্তর ভারতের তিনটি বৃহৎ রাজ্যে কংগ্রেসের পরাজয় বিজেপির জয়ের থেকেও বেশি আলোচিত। এটা বললে ভুল হবে না যে, জনগণের আস্থা অর্জনে কংগ্রেসের ব্যর্থতাই বিজেপিকে জয়লাভ করতে সাহায্য করেছে। আগের বার যেখানে তিনটি রাজ্যেই সরকার গড়েছিল কংগ্রেস, সেই তিনটি রাজ্যেই বাজিমাত করেছে গেরুয়া শিবির। একমাত্র সান্ত্বনা পুরস্কার হিসাবে তেলঙ্গানায় ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, কংগ্রেস-সহ সকল বিরোধী গোষ্ঠীই উত্তর ভারতের ভোটারদের কাছে তাদের আবেদন রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

কর্নাটক ও হিমাচলপ্রদেশে শক্তিশালী জয়ের পর ভারতে কংগ্রেসের বিরোধী জোটে শক্তিশালী স্তম্ভ হয়ে ওঠার পথে এই পরাজয় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে চলেছে। হিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে কংগ্রেসের এই লজ্জাজনক পরাজয়ের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী কিন্তু কংগ্রেস নিজেই। কর্নাটক ও হিমাচলপ্রদেশে জয়লাভের পর কংগ্রেসের মধ্যে অত্যধিক আত্মবিশ্বাস এসেছিল। দলীয় সূত্রের মতে, কংগ্রেস নেতারা জাতীয় নেতৃত্ব এবং দলের প্রতিক্রিয়া উপেক্ষা করেছিলেন এবং নিজস্ব জেদ ও ইচ্ছার ভিত্তিতে নির্বাচনী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যার পরিণতিতে দলের এই পরাজয়। সরকারের ভাল কাজ সত্ত্বেও, বিধায়কদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ এবং পারস্পরিক দলাদলি রাজস্থানে দলকে ডুবিয়েছে। মধ্যপ্রদেশে কমলনাথের একক ভাবে দল এবং কংগ্রেস পরিচালনার ফলে দলের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। ইন্দোরে কংগ্রেসের এক নেতা জানিয়েছেন যে, দলের কর্মীদের বিশ্বাস করার পরিবর্তে, কংগ্রেসের বড় নেতারা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের এবং ভাড়া করা ‘সেনাবাহিনী’কে বেশি বিশ্বাস করেছিলেন।

মধ্যপ্রদেশে পরাজয়ের পিছনে সনাতন ধর্ম বিতর্কও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল। যেখানে ইন্ডিয়া জোটের ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিন সনাতন ধর্মকে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার সঙ্গে তুলনা করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন। সেখানে কংগ্রেসের নীরবতা ও আত্মরক্ষার চেষ্টায় কিছু নেতার অসংযত বক্তব্য পরিবেশকে নষ্ট করেছে।

অন্য দিকে, ছত্তীসগঢ়ের ভূপেশ বাঘেল সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা, প্রবীণ নেতাদের মধ্যে দলাদলি এবং বাঘেলের স্বেচ্ছাচারী সরকার পরিচালনাকে দায়ী করা হচ্ছে। এই ফলাফলগুলিও ইঙ্গিত করে যে, হিন্দি অঞ্চলে কংগ্রেস যে আক্রমণাত্মক পদ্ধতিতে জাতশুমারি এবং অন্যান্য অনুন্নত শ্রেণির বিষয়টি উত্থাপন করছিল, জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতিতে এ বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে কংগ্রেসকে যথেষ্ট গুরুত্ব সহকারে তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর

আরও পড়ুন
Advertisement