Work Pressure

সম্পাদক সমীপেষু: ‘না’ বলা জরুরি

প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ‘না’ বলতে শেখাটাও খুব জরুরি? কিন্তু সমস্যা হল, কঠিন হওয়া সহজ নয়! কাজ হারালে তখন কী হবে?

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৪৯

পুণের এক সংস্থায় চাকরি করতেন ২৬ বছরের তরুণী অ্যানা সেবাস্টিয়ান পেরিল। তিনি ছিলেন এক জন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সংস্থায় যোগ দেওয়ার চার মাসের মাথায় তাঁর মৃত্যু ঘটে। অভিযোগ ওঠে প্রচণ্ড কাজের চাপ সহ্য করতে না পেরেই তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে, যার পরিণামে এই মৃত্যু। অ্যানার মা জানিয়েছেন— অ্যানা স্কুল-কলেজের সমস্ত পরীক্ষাতেই শীর্ষে থাকত। সে কখনও না-বলতে পারত না। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ‘না’ বলতে শেখাটাও খুব জরুরি? কিন্তু সমস্যা হল, কঠিন হওয়া সহজ নয়! কাজ হারালে তখন কী হবে?

Advertisement

২০২১ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন আইনে অতিরিক্ত কাজের কুফল সম্পর্কে একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা গিয়েছিল, সপ্তাহে ৫৫ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় ধরে কাজ করলে অকালমৃত্যুর আশঙ্কা থেকে যায়। ২০১৯ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, মুম্বই পৃথিবীর সবচেয়ে পরিশ্রমের শহর। চতুর্থ স্থানে ছিল দিল্লি। ২০১৮-র পর্যবেক্ষণ বলছে, ছুটি উপভোগ করার ক্ষেত্রে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে ভারত। আইএলও-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে অল্পবয়সি যুবকযুবতীরা সপ্তাহে ৫৮ ঘণ্টারও বেশি কাজ করে। ৩০ বছর ছুঁলে সেটা হয়তো ৫৭ ঘণ্টা হয়। তা সত্ত্বেও আন্তর্জাতিক শ্রম আইনে যে ৪৮ ঘণ্টা কাজের কথা বলা হয়েছে, তার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করা হচ্ছে। ‘হু’ ও ‘আইএলও’-র সূত্রে দেখা যাচ্ছে, ২০১৬ সালে বেশি সময় কাজ করার ফলে ৭ লক্ষ ৪৫ হাজার কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন ইস্কেমিক হার্ট ডিজ়িজ় ও স্ট্রোকের কারণে।

সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনে ১২ ঘণ্টার বেশি কাজে শরীর-স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব পড়ে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। অতিরিক্ত সময় ধরে কাজে যুক্ত থাকার অর্থ ব্যক্তিগত কাজে সময় সঙ্কুলান না-হওয়া। সংশ্লিষ্ট সংস্থার উৎপাদন কমে যাওয়ার সঙ্গে মানসিক চাপও অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ে। জাপানি ভাষায় একটি শব্দ আছে— কারোশি। মাত্রাতিরিক্ত কাজের পরিণতিতে আকস্মিক মৃত্যু। এই ধরনের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। কাজের চাপের ফলে সময়ে প্রয়োজনীয় খাওয়া-দাওয়া ছাড়াও জীবনযাপনের শর্তগুলো পূরণ হয় না। ফলে শরীরে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। তা হলে স্ট্রেস থেকে মুক্তির উপায় কী? বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এর জন্য মানসিক প্রস্তুতি দরকার। এবং ক্ষেত্রবিশেষে অবশ্যই ‘না’ বলতে শিখতে হবে। সঠিক খাওয়া-দাওয়া, স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন থাকাও জরুরি।

শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া

স্বাস্থ্যের পথ

ভারতে জনস্বাস্থ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল ‘টার্গেট ফ্রি’ স্বাস্থ্য পরিষেবা, যা শুরু করেছিল ছত্তীসগঢ়। ১৯৯৬ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যসচিব জে সি পন্থ কেন্দ্র-নির্দিষ্ট সংখ্যা বা ‘টার্গেট’-এ পৌঁছনোর রীতি বর্জন করেন। পরিবার পরিকল্পনা এবং ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণের জাতীয় স্বাস্থ্য প্রকল্প শুরু হওয়ার পর থেকেই কেবলই সংখ্যা পূরণের উপর নজরদারি চলত। টার্গেট আর সংখ্যার কোনও মানবিক মুখ নেই, পরিষেবা প্রাপকের অধিকার কিংবা তাঁদের সন্তুষ্টি বোঝার উপায় নেই। তা থেকে পরিকল্পনা সরিয়ে আনা হয় অন্য বিকল্পে— স্থানীয় মানুষের চাহিদার সমীক্ষা করায়, তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার পরিকল্পনায় ও রূপায়ণে জড়িয়ে নেওয়ায়।

প্রায় এক দশক পরে যখন জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের সূচনা হয় (২০০৫), তখন দেখা যায় যে স্থানীয় মানুষকে এ ভাবে জড়িত করা, তাঁদের কাছে স্বাস্থ্য প্রকল্পের পরিকল্পনা নিয়ে যাওয়াকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গ্রামীণ মানুষ যাতে স্বাস্থ্য পরিষেবার নাগাল পায়, এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষত দরিদ্র মহিলা ও শিশুরা যাতে সুলভ ও কার্যকর প্রাথমিক চিকিৎসা পায়, তা নিশ্চিত করাই ছিল এই মিশনের উদ্দেশ্য। তার রূপায়ণ করতে তৃণমূল স্তরের কর্মী, যেমন আশা, এএনএম, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা হয় ও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, গ্রামীণ স্তরে স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জল ও নিকাশি কমিটি তৈরি হয়, প্রাথমিক, ব্লক ও জেলা স্তরের হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি তৈরি হয়। স্বাস্থ্য পরিষেবাকে স্বচ্ছ ও দায়বদ্ধ করা এবং গ্রাহকের সন্তুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যও নেওয়া হয়।

এই ব্যবস্থাগুলি জনস্বাস্থ্যের কোনও পাঠ্যবইয়ের থেকে নেওয়া হয়নি। ছত্তীসগঢ়ে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের জন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করার উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছিল ‘স্টেট হেলথ রিসোর্স সেন্টার’ (এসএইচআরসি)। ২০০০ সাল থেকে এই ব্যবস্থার ক্রম-বিবর্তনের ফলেই জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের জনমুখী মডেলে উপনীত হওয়া গিয়েছিল। নাগরিক সমাজ এবং রাজ্য সরকারের আলোচনার ভিত্তিতে এসএইচআরসি গঠিত হয়, এবং দ্রুত শুরু হয় ‘মিতানিন’ (মেয়েদের বন্ধু) বাছাই ও প্রশিক্ষণের কাজ। প্রতি হাজার জনসংখ্যায় এক জন মিতানিন নির্দিষ্ট হয়। এই ব্যবস্থাই জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনে ‘আশা’ কর্মী তৈরির ভিত্তি।

প্রশিক্ষণ ব্যবস্থায় নানা উদ্ভাবনের জন্য স্বল্পশিক্ষিত মিতানিনরাও যে জ্ঞান ও দক্ষতা লাভ করেন, তা বিস্ময়কর। বাড়ি বাড়ি তথ্য সংগ্রহ ছাড়াও তাঁরা ‘দাওয়া পেটি’ (ওষুধের বাক্স) থেকে অসুখের লক্ষণ দেখে সাময়িক স্বস্তির জন্য ওষুধ দেন, শিশু ও মায়েদের টিকাকরণ ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য একত্র করেন। তাঁরা ‘কিট’ ব্যবহার করে গর্ভাবস্থা নির্ণয় করেন, যক্ষ্মা ও ম্যালেরিয়া নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করেন, কুষ্ঠের ওষুধও দেন। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন শুরু হওয়ার আগে প্রায় তিন বছর মিতানিনরা এই সব পরিষেবা প্রদান করেছেন বিনামূল্যে। গ্রামের মানুষের দেওয়া সম্মানই ছিল তাঁদের একমাত্র অর্জন। ২০০৫ সাল থেকে তাঁরা আশা কর্মীদের মতো সাম্মানিক পেতে শুরু করেন।

পাশাপাশি, এসএইচআরসি রাজ্যের স্বাস্থ্যক্ষেত্রকে তাদের বার্ষিক পরিকল্পনা ও বাজেট বরাদ্দ করতে সহায়তা করেছে। কর্মীর অভাব পূরণ, প্রশিক্ষণ, আপৎকালীন প্রসব ও নবজাতকের পরিচর্যা, যানবাহনের ব্যবস্থা ইত্যাদি কাজে সহায়তা করেছে। নগর স্বাস্থ্য মিশনের রূপায়ণেও প্রধান উদ্যোক্তা ছিল এসএইচআরসি। এর ফলে অন্যান্য রাজ্যেও এসএইচআরসি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় জাতীয় স্তরে। বর্তমানে ১৮টি রাজ্যে এসএইচআরসি কাজ করছে।

দুর্ভাগ্য এটাই, যে এসএইচআরসি দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, এখন তারই ভূমিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের রাজ্য ইউনিট এসএইচআরসি-র মিতানিন ও আশা প্রশিক্ষণের বিভাগগুলি গ্রহণ করেছে। চুক্তি শেষ হওয়ায় এসএইচআরসি-র কর্মীদের ভবিষ্যৎ অজানা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের স্বাতন্ত্র্য ছেঁটে ফেলে রাজ্য আবার ঝুঁকেছে বাঁধাধরা প্রকল্পের নির্দেশের দিকে। এই পশ্চাৎমুখী পথ থেকে এখনই সরে আসা দরকার।

কে আর অ্যান্টনি, প্রাক্তন এসএইচআরসি অধিকর্তা, ছত্তীসগঢ়

বাগানে গাড়ি

সম্প্রতি ভাইফোঁটার দিন আমার সুযোগ হয়েছিল হাওড়ার বটানিক্যাল গার্ডেন দেখার। বাগানে প্রবেশ করেই প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি আমার মনকে মুগ্ধ করে দেয়। গাছ-গুল্মের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে বেশ কিছুটা সময় চলে যায়। যা-ই হোক, কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আবার চলতে শুরু করি। কিন্তু কিছু ক্ষণ চলার পর আমার হাঁটু অসহযোগিতা করতে শুরু করে। ওই বিশাল বাগানে প্রায় পৌনে ৩ ঘণ্টা হেঁটেও আমি বাগানের এক-চতুর্থাংশ দেখতে পেরেছি কি না, সন্দেহ আছে। ইচ্ছে ছিল আরও খানিকটা দেখার, কিন্তু শারীরিক সমস্যার কারণে মনের অতৃপ্তি নিয়েই আমাকে ফিরে আসতে হয়েছে।

বাগান কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আবেদন, যদি আমাদের মতো প্রবীণ নাগরিকদের কথা ভেবে বাগানের মধ্যে যন্ত্রচালিত গাড়ির ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে ঘুরে দেখার ক্ষেত্রে অত্যন্ত উপকার হয়।

কনক কুমার চক্রবর্তী, কলকাতা-১৪৬

আরও পড়ুন
Advertisement