Fake Documents

সম্পাদক সমীপেষু: জাল নথির কুটিরশিল্প

গত কয়েক মাসে যে হারে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বাংলা, ত্রিপুরা এবং অসমে জঙ্গি ঘাঁটি নির্মাণ করে এ দেশের একাংশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে, তা সত্যিই উদ্বেগের।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৪৭

দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা ‘কান্ডারি কতটা হুঁশিয়ার’ (২-১) প্রবন্ধের নিরিখে এই চিঠি। গত অগস্ট মাসে ক্ষমতা বদলের সঙ্গে ধর্মীয় বিদ্বেষ ও অস্থিরতার রাজনীতি বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে। আর সেই ধর্মীয় বিদ্বেষের সুনামি আছড়ে পড়েছে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর। নারী-নির্যাতন, মন্দিরে আগুন, পূজামণ্ডপ ভাঙচুর, চাকরি থেকে হিন্দুদের বলপূর্বক ইস্তফা দিতে বাধ্য করা— কিছুই বাদ নেই। গত কয়েক মাসে যে হারে জঙ্গি অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে বাংলা, ত্রিপুরা এবং অসমে জঙ্গি ঘাঁটি নির্মাণ করে এ দেশের একাংশে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলেছে, তা সত্যিই উদ্বেগের। যে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জন করতে সমস্ত রকম ভাবে সাহায্য করেছিল ভারত, আজ সেই বাংলাদেশই হয়ে উঠেছে এ দেশের গলার কাঁটা। অসমের পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যায় এ রাজ্যে লুকিয়ে থাকা দু’জনকে এবং কাশ্মীর পুলিশের জালে ক্যানিং থেকে ধৃত আর এক জন জঙ্গি। মুর্শিদাবাদে ধৃত তো অবৈধ মাদ্রাসা খুলে জঙ্গি কার্যকলাপ চালাচ্ছিল। পুলিশ-প্রশাসন থেকে শাসক দলের রাজনৈতিক নেতা— কারও মনে কি প্রশ্ন জাগল না এদের অস্তিত্ব নিয়ে, না কি সব জেনে বুঝেই তাঁরা চুপ ছিলেন। এমন যদি হয়, তবে এই ধৃত জঙ্গিদের থেকে অপরাধ তাঁদের কম কোথায়? গত এক দশকে এ রাজ্য দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। কাটমানি বা দুর্নীতির ছোঁয়া না পেয়ে এ রাজ্যে কোনও কাজ পাওয়া প্রায় অসম্ভব। প্রবন্ধকার ঠিকই বলেছেন, জাল নথি তৈরি তো প্রায় কুটিরশিল্প। এ ভাবে যারা এখানে কাগজপত্র বানিয়ে দিব্যি ভোটার হয়ে বসেছিল, অসমের পুলিশ এসে ঘুম না ভাঙালে তারা হয়তো বাংলায় বসে কোনও বড় নাশকতার ষড়যন্ত্রী হত। পাসপোর্ট, আধার কার্ড, বা ভোটার কার্ড করে দেওয়ার দালালের অভাব নেই এই রাজ্যে। সবই চলেছে রাজনীতির দাদাদের আশীর্বাদের কারণে। মধ্যমগ্রাম থেকে বারাসত জাল নথি করার শিল্প, না-ই বা থাকুক এ রাজ্যে অন্য বড় শিল্প। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক সময় বিরোধী নেত্রী হিসেবে ভুয়ো ভোটারদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন, ভোটার কার্ড ছাড়া ভোট নয়— দাবিতে মুখর হয়েছিলেন, আজ তিনি নীরব কেন?

Advertisement

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

সমস্যা গভীর

‘কান্ডারি কতটা হুঁশিয়ার’ প্রবন্ধটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই প্রাসঙ্গিক। বেআইনি অনুপ্রবেশ আমাদের রাজ্যে এক গভীর সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জাল ভোটার কার্ডের রমরমা। ভোটার তালিকার চলতি সংশোধনের সময় খসড়া তালিকায় রাজ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের সন্ধান মিলেছে বলে বিরোধীদের অভিযোগ। এখন প্রশ্ন— রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে কোথায়, কী ভাবে নামগুলি ছড়িয়ে আছে? কেননা এর উপর যেমন দলগুলির ভোট-ভবিষ্যৎ খানিকটা নির্ভর করে, তেমনই আঁচ পাওয়া যেতে পারে এই সব জাল-জালিয়াতের চক্কর কোন এলাকায় বেশি। ভুয়ো ভোটারের ভূত যে তালিকায় বাসা বেঁধেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং সেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি আঙুল তুলেছেন বুথ স্তরের অফিসার বা বিএলও-দের দিকে। মমতা যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, তখন ভুয়ো ভোটারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন করেছিলেন। অথচ, আজ তিনি মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর রাজ্য থেকেই ভুয়ো ভোটার বা জাল ভোটার কার্ড চক্র ধরা পড়ছে। এর শিকড় অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়েছে। আজ কান্ডারি হুঁশিয়ার না হলে সমূহ বিপদ।

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

পদক্ষেপ জরুরি

দেবাশিস ভট্টাচার্যের প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যেতে পারে বাংলাদেশে মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার জেলবন্দি ৭০০ জঙ্গিকে মুক্ত করেছে। এই সরকার শপথ গ্রহণ করেছিল ৮ অগস্ট। ঠিক তার পরের দিন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরের জঙ্গিরা ঢাকার রাজপথে মিছিল ও সমাবেশ করে। তাদের ঘোষণা, হাসিনা-বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে তারা ছিল একেবারে সামনের সারিতে। সুতরাং, অবিলম্বে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। স্মর্তব্য, হিযবুত তাহরীর নামক জঙ্গি সংগঠনের নাম সামনে আসে গুলশনে ‘হোলি আর্টিজ়ান’ রেস্তরাঁয় জঙ্গি হানার পরে। সেই ভয়ানক হামলায় যে পুলিশরা নিহত হন, তাঁদের স্মরণে রেস্তরাঁটির সম্মুখে যে মুরাল বসানো হয়েছিল, জঙ্গিরা সেটি চুরমার করে দিয়েছে। “জেহাদিদের ‘করিডর’ রাজ্য, দাবি” প্রতিবেদনে (২৯-১২) ইউনূস সরকারের আমলে জঙ্গি সংগঠনগুলোর যুদ্ধকালীন তৎপরতার ছবি অনিবার্য ভাবে আশঙ্কিত করে এই ভাবনায়, ভারতকে যেন তেন প্রকারেণ জঙ্গি হামলায় বিপর্যস্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনগুলো। সীমান্ত দিয়ে চোরাগোপ্তা পথে অনুপ্রবেশ এখন নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। জাল পাসপোর্ট তৈরি করছেন এই রাজ্যের বাসিন্দারা। কাদের সুবিধে করে দিচ্ছেন তাঁরা অর্থের জন্য? এঁরা দেশদ্রোহী নন? বেআইনি ভাবে এ দেশে ঢোকা বাংলাদেশিদের জাল আধার, ভোটার কার্ড বানিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করার সুযোগ এবং ভোট প্রদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার আড়ালে কোন চক্র কাজ করে? ভুয়ো নথিপত্র যাচাই করা হয় না ভোটের পূর্বে? তাও ভোটার তালিকা সংশোধনের পর্বে রাজ্যে প্রায় ১৭ লক্ষ ভুয়ো ভোটারের সন্ধান পাওয়ার বিষয়ে বিস্ময় উদ্রেক করে।

ওই দেশে হিন্দুরা প্রতি মুহূর্তে নির্যাতিত হচ্ছেন। তাঁদের বসতভিটে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। একের পর এক ধর্মস্থান গুঁড়িয়ে দেওয়া এখন উল্লাসের অঙ্গ। একটি স্বাধীন দেশ ধারাবাহিক ভাবে হিন্দুদের স্বদেশ থেকে বিতারণের জন্য মরিয়া ভূমিকা গ্রহণ করছে, আর বিদেশি রাষ্ট্রের নীতি বিষয়ে নাক না গলাতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের হিরণ্ময় নীরবতা পালনে ব্যস্ত। আর কত সহ্য করবেন ও পারের হিন্দুরা? তাঁদের হয়ে গলা ফাটাবেন শুধু বিরোধীরা?

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী, কলকাতা-১২৫

স্মৃতির গুড়

পাটালিগুড়ের কথা মনে আছে? সকালের টিফিনে দুধরুটি, সঙ্গে কয়েক টুকরো পাটালি। কিংবা শুধু রুটির সঙ্গে একটা বড় ফটকিরি সাইজ়ের পাটালির টুকরো। সন্ধেবেলায় মুড়ির আড্ডায় পাটালি। স্কুলের টিফিন বক্সেও দু’তিন মাসের জন্য তার স্থায়ী জায়গা। বাতাসে উত্তুরে হাওয়া লাগামাত্রই দু’-চার দিন পর পর চলত মা-ঠাকুমার পিঠেপুলি বানানোর কর্মব্যস্ততা। সেদ্ধ পিঠে, পুলি পিঠে, পাটিসাপ্টা, দুধপুলি, পায়েসের সুগন্ধে সারা বাড়ি ‘ম-ম’ করত। বাড়ির চৌহদ্দি পেরিয়ে সুঘ্রাণ পৌঁছে যেত আশপাশে। ঠাকুমা তখন ছিলেন বেশ শক্তপোক্ত। নাটাইচণ্ডী বলে তাঁর এক আরাধ্য ছিল। তাঁর পূজা হত সংক্রান্তি বা আশপাশের কোনও একটা দিন। ভোর থেকে চলত তার প্রস্তুতি। শীতে কম করে পাঁচ-ছ’বার বসিরহাটে পিসির বাড়ি হানা দেওয়ার মধ্যে খেজুর গুড় একটা প্রধান আকর্ষণ ছিল। সেই কাকভোরে উঠে সাইকেলে চেপে খেজুর গুড়ের আড়তে হানা দিয়ে চাষিকাকাদের কাছ থেকে তাজা রস আকণ্ঠ পান। পিসির পাড়া খেজুর গাছে ভর্তি। সকালে বিকেলে তাজা গোটা খেজুরও তাই দিব্যি জুটে যেত, না চাইতেই। আমাদের বাড়িতে সারা বছর মিষ্টি নিয়ে আদিখ্যেতা ছিল না কোনও কালেই। কিন্তু শীতের স্পেশাল আইটেমগুলোর বরাবরই একটা আলাদা কদর ছিল।

বছর দুয়েক আগে পিসির বাড়ি গেছি এই শীতের সময়েই। মনে আশা, ছোটবেলার খেজুরে মজাটাকে আবার আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরা। কিন্তু কোথায় সেই পাটালি, কোথায় সেই তাজা খাঁটি রস! খেজুর বাগানগুলো নেই। তার জায়গায় ঘেঁষাঘেঁষি ইমারতি সজ্জা। কোথায় শুনেছিলাম, কিছু ঘটনার স্মৃতিটুকুই যত্নে আগলে রাখতে হয়। কিন্তু পারছি কই?

শঙ্খদীপ কর্মকার, কলকাতা-১১৫

Advertisement
আরও পড়ুন