Burning Loud Firecrackers

সম্পাদক সমীপেষু: মানবতার অভাব

বিশেষজ্ঞরা এটাও বলে থাকেন যে, আদালত নির্দেশিত নির্দিষ্ট শব্দমাত্রাও বহু ক্ষেত্রে অসহায় মানুষজন এবং অবোলা প্রাণীদের পক্ষে সুখকর নয়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:১০

অনুরাধা রায় “শব্দবাজির ‘রাত দখল’” (২৫-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এক বিষয় বিশ্লেষণ করেছেন। অন্যান্য বছরের মতো এ বারও কালীপুজো ও দীপাবলি উপলক্ষে শব্দবাজি রাত দখল করে পশুপাখি, শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষদের নিদ্রা ও সুস্থতা কেড়ে নিল। এর প্রতিকার থেকেও নেই। নিষেধাজ্ঞা আছে, আইন আছে। কিন্তু মহামান্য আদালতের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে কিছু মানুষ অ-মানবিক ভাবে শব্দবাজির তাণ্ডবলীলা চালিয়ে যায়। আর, প্রশাসন দর্শকের ভূমিকায় থেকে যায়। অবলা সব প্রাণী এবং অসহায় মানুষজনের সমস্যার প্রতি অনেকেরই সহানুভূতি থাকলেও চেতনাহীনদের উদাসীনতা ও তাচ্ছিল্য ক্রমবর্ধমান ও লক্ষণীয়। এরা হাসপাতালের, বৃদ্ধাশ্রমের, এমনকি চিড়িয়াখানার চার পাশে অবলীলায় শব্দবাজির তাণ্ডব চালাতে পারে।

Advertisement

চিকিৎসকরা বলেন, শব্দবাজির নির্দিষ্ট মাত্রা লঙ্ঘনে মানসিক বৈকল্য, শ্রবণ ক্ষমতা হ্রাস, রক্তচাপ বৃদ্ধি ঘটে। বিশেষজ্ঞরা এটাও বলে থাকেন যে, আদালত নির্দেশিত নির্দিষ্ট শব্দমাত্রাও বহু ক্ষেত্রে অসহায় মানুষজন এবং অবোলা প্রাণীদের পক্ষে সুখকর নয়। কিন্তু শব্দবাজি শিল্পের সঙ্গে লক্ষ মানুষের রুজি-রোজগারের সম্পর্ক থাকায় এই বাজি পুরোপুরি নিষিদ্ধ না করে, একটা নির্দিষ্ট শব্দমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।

প্রশাসনের শিথিল নজরদারির সুবিধে নিয়ে বেশিমাত্রার শব্দবাজিগুলো জনসমক্ষে বিক্রি না করে চোরাপথে বিক্রি হয়। ফলে অসুস্থ মানুষদের ভোগান্তি কিছুমাত্র কমে না। যদি রুজি-রোজগারের কথা মাথায় রেখে মানবিকতার খাতিরে একটা নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দবাজিতে ছাড় দেওয়া হয়, তবে সেই একই মানবিকতার খাতিরে যারা নিষিদ্ধ শব্দবাজির বেলাগাম ব্যবহারে অন্যদের যন্ত্রণার কারণ হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা করুক। শুধু শব্দবাজিই নয়, প্রত্যেক বছর বিশ্বে লক্ষাধিক শিশুর মৃত্যু হয় শ্বাসকষ্টজনিত কারণে। তাই যে কোনও বাজিই নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

ধ্বংসের পথে

অনুরাধা রায়ের প্রবন্ধটি পড়ে ভাল লাগল। তবে এর সঙ্গে কিছু ভাবনা সংযোজন করতে চাই। শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহারে জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। নগরায়ণ, শিল্পায়ন, প্রযুক্তিগত প্রগতি, পরিবহণের প্রসার এবং মানুষের জীবনযাপনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তনই মুখ্যত শব্দদূষণের কারণ। মানব-সভ্যতা যত আধুনিক হচ্ছে, পাল্লা দিয়ে ততই বাড়ছে শব্দদূষণ। মেলা, খেলা, বনভোজন তো বটেই, শব্দদানবের অত্যাচার থেকে বাদ যায় না হাসপাতাল, স্কুল, কলেজও।

এক সময় কলকাতা হাই কোর্টের মাননীয় বিচারপতি ভগবতীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় শব্দদানবকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছিলেন। তৎকালীন সময়ে তাঁর এক রায়ের মধ্যে দিয়ে শব্দদানবকে আপাতভাবে বোতলবন্দি করা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের শিথিল মনোভাবে সে আবার বোতলের বাইরে বেরিয়ে এসেছে। ১৯৯৬-এর এপ্রিলে মাননীয় বিচারপতি এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিলেন। মত-প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের সংবিধানসম্মত। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, শুনতে না চাওয়ার স্বাধীনতা থাকবে না। অপছন্দের কোনও কিছু শুনতে না চাওয়াটাও জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়। জীবনের জন্য শব্দের প্রয়োজন যতটুকু, নৈঃশব্দ্যের প্রয়োজনও ঠিক ততটুকু। তাই প্রবন্ধের ভাষায় প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করে, মানুষের জন্য ‘প্রাণী-শ্রেষ্ঠ’ মানুষের সমবেদনা কতটুকু? আর কেনই বা আইন করে, বল প্রয়োগ করে শব্দদূষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজন দেখা দেয়?

বায়ু অপেক্ষা জলে শব্দ চলাচল করে আরও সহজে। তাই, জলজ প্রাণীদের দর্শনেন্দ্রিয় অপেক্ষা শ্রবণেন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় এবং সংবেদনশীল। বিশেষ করে তিমি, ডলফিন-এর মতো প্রাণীর শব্দের উপর নির্ভরশীলতা অনেকটাই বেশি। পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষার্থে, শত্রুপক্ষের উপস্থিতি শনাক্ত করতে, শিকারের প্রয়োজনে এবং মিলনের প্রয়োজনে শব্দ সঙ্কেতই তাদের প্রধান ভরসা। অথচ, উন্নত সভ্যতার হাত ধরে শেষ কয়েক দশকে সমুদ্রগর্ভে শব্দদূষণের প্রাদুর্ভাব এতটাই বেড়েছে যে সমুদ্রের প্রাণীরাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। প্রবন্ধের ভাষায় বলা যায় স্থলে জলে অন্তরিক্ষে আমাদের কাণ্ডকারখানা না-মানুষ প্রাণীদের কোণঠাসা করে বিনাশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। পরিবেশকে আমরা ভরিয়ে তুলছি বিকট শব্দে ও উৎকট আলোয়।

অন্যদের ধ্বংস করে কি আমরা নিজেরাও ধ্বংস হব?

অজয় ভট্টাচার্য, বনগাঁ, উত্তর ২৪ পরগনা

বৃথা চেষ্টা

অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে প্রবন্ধ লিখেছেন অনুরাধা রায়। হেমন্তের দুপুরে মা, দিদিরা মিলে ডালায় সর্ষের তেল, সলতে দেওয়া প্রদীপ সাজাচ্ছেন। হিমেল সন্ধ্যায় একে একে বারান্দায়, ছাদের আলসেতে, জানলায় সার সার প্রদীপ জ্বলছে। প্রদীপে তেল দেওয়ার কাজে ব্যস্ত থাকতেন মা যত ক্ষণ না মণ্ডপে ঢাক বাজত। পুজো শুরু হত। বড়দের তুবড়ি বানানোর হৈমন্তিক দুপুরে আমরা ছোটরাও গিয়ে জুটতাম। তার পর, বাড়ির ছাদে বা মণ্ডপের কাছে সে তুবড়ি জ্বলত, আমাদের কিশোরবেলাটিতে হরেক রকম তারাবাজি, পটকার আওয়াজের সঙ্গে নির্মল-আনন্দ জুড়ে থাকত। বাজি-বহ্ন্যুৎসব নিয়ন্ত্রিত-সীমারেখার সীমানা পেরিয়ে যখন থেকে আমাদের দেওয়ালি-বিনোদনের অঙ্গ হয়েছে, তখন থেকেই আলোর উৎসব পীড়াদায়ক হতে শুরু করেছে। ছোট ছেলেরা সারমেয়র লেজে ছুঁচোবাজি বেঁধে আনন্দ পায়, আর বড়দের প্রাণঘাতী বাজি-বিনোদনের শিকার হন অসুস্থ, প্রবীণ মানুষেরাও। প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতি বারই নিগৃহীত হন গৃহস্বামী, এ খবর এখন চমকায় না আমাদের।

খবরে প্রকাশ, শ্রীরামপুর থানার বৈদ্যবাটি এলাকার একটি ক্লাবের পুজোতে জনগণের বিনোদনার্থে একটি উট রাখা হয়েছিল, কারণ তাদের থিম ছিল হরপ্পা-মহেঞ্জোদরো। স্থানীয় মানুষজন আপত্তি জানাতে সাময়িক ভাবে উটটিকে সরিয়ে রাখা হলেও পর দিন যথারীতি মণ্ডপের সামনে বেঁধে রাখা হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। বন দফতরের কর্মীরা পুলিশের সহায়তায় উটটিকে উদ্ধার করতে গেলে প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। অবশ্য বন দফতর শেষ অবধি উটটিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। এই যদি পুজো-বিনোদনের প্রকাশ হয়, তা হলে শব্দবাজির ‘রাত দখল’ নিয়ে গলাবাজি করা বৃথা।

ধ্রুবজ্যোতি বাগচি, কলকাতা-১২৫

নিস্তার নেই

দীপাবলি শব্দের মধ্যে নিহিত ‘দীপ’ শব্দটি। অথচ, দীপের রাতে মানুষ দূষণের বলি। আতশবাজির রোশনাই হয়তো নান্দনিক। তাই বলে বিকট আওয়াজ কি বিনোদনের উপাদান? মানুষের অদ্ভুত খেয়াল, উদ্ভট শখ। সংবাদ বা বিভিন্ন মাধ্যমে লাগাতার প্রচার কোনও ভাবেই সমাজে প্রভাব ফেলতে পারছে না এই অভ্যাস থেকে বিরত থাকার। এ বছরও শব্দময় রাতেরই পুনরাবৃত্তি ঘটল আমার পুর-শহরে। লাগাতার তিন রাত ধরে চলেছে লাগামহীন শব্দের প্রতিযোগিতা। বিষয়টা দাঁড়িয়ে গিয়েছে প্লাস্টিক বর্জনের মতো— প্রচার হচ্ছে মানুষের মধ্যে, অথচ উৎপাদনের উপর কঠোর নজরদারি নেই। যত দিন এটা না হবে, তত দিন কোনও ভাবে এর থেকে নিস্তার নেই।

আশীষ দাঁ মধ্যমগ্রাম, উত্তর ২৪ পরগনা

জল অপচয়

ছটপুজোর জন্য পাড়ার এক জায়গায় বিশাল একটি চৌবাচ্চা তৈরি করা হয়েছিল। জলের ট্রাক এনে তাতে কয়েকশো লিটার জলও ভরা হল। পুজোর পরে দেখলাম পাইপের মাধ্যমে জলটি নর্দমায় ফেলে দেওয়া হল। বহু জায়গায় যেখানে জলের কষ্ট, সেখানে জলের এই রকম অপচয় কেন?

আনন্দ দাস, কলকাতা-৩৩

আরও পড়ুন
Advertisement