West Bengal Business Hub

বাণিজ্যের লক্ষ্মী বাংলাই! আনন্দবাজার অনলাইনে লিখলেন তৃণমূলের সাংসদ

দেশের অর্থনীতি যখন হোঁচট খেতে খেতে এগোচ্ছে, তখন অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে পথ দেখাচ্ছে বাংলা। ২০১১ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিপুল কর্মসংস্থান হয়েছে।

Advertisement
সুস্মিতা দেব
সুস্মিতা দেব
শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:৫৭
West Bengal is one of the leading states in India in economic growth with huge business opportunities

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল ছবি।

ব্যবসার মাধ্যমেই লক্ষ্মীলাভ হয়— এটা বুঝতে অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আর ব্যবসায় উন্নতির জন্য চাই নতুন নতুন উদ্ভাবনী শক্তি। যুগ যুগ ধরে শিল্প ও সমাজ উন্নয়নের কারিগরেরা অর্থনীতির অগ্রগতির নেপথ্যে উদ্যোগী মানসিকতার উপর জোর দিয়ে এসেছেন। শুধুমাত্র জ্ঞানের ভান্ডার অর্থনীতির মান নির্ধারণের সূচক হতে পারে না। কোনও দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে সেই দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ক্ষমতার উপর। শিক্ষাবিদ এবং বিশেষজ্ঞেরাই এ বিষয়ে সঠিক পথ দেখাতে পারেন।

Advertisement

‘ওয়ার্ল্ড ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজ়েশন’ রাষ্ট্রপুঞ্জের অধীনে ৫৭ বছরের পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি তারা ‘গ্লোবাল ইনোভেশন ইনডেক্স ২০২৪’-এর তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকা অনুযায়ী, উদ্ভাবনী শক্তির নিরিখে সারা বিশ্বে ৪০তম স্থানে রয়েছে ভারত। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ দফতরই (ডিপার্টমেন্ট ফর প্রোমোশন অফ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বা ডিপিআইআইটি) গত ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত একটি নির্দেশিকায় ব্যবসায় উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দিয়েছে। ভারতের অর্থনীতির অগ্রগতির হার বেশ শ্লথ। চলতি বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মাত্র ৫.৪ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক বৃদ্ধি হয়েছে। অগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ভারতে শিল্পোৎপাদনের লেখচিত্র মাত্র ০.৬৯ শতাংশ উপরে উঠেছে। এমনকি, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ককেও জিডিপি-র পূর্বাভাস সংশোধন করে ৭.২ শতাংশ থেকে ৬.৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে হয়েছে।

দেশের অর্থনীতি হোঁচট খেতে খেতে এগোচ্ছে বটে। তবে একাধিক রাজ্যে অর্থনীতির বৃদ্ধি কিন্তু চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ইজ় অফ বিজ়নেস র‌্যাঙ্কিং’-এ এ বছর শীর্ষস্থান অধিকার করেছে কেরল। আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডারের প্রধান গীতা গোপীনাথ তামিলনাড়ুকে ভারতের ‘দুটি উজ্জ্বলতম বিন্দুর মধ্যে অন্যতম’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে উপযুক্ত বাণিজ্যনীতির কারণে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল সর্বোচ্চ। কর্নাটকের ‘গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্টের’ (জিএসডিপি) বৃদ্ধি এ বছর ছিল ১০.২ শতাংশ, যা এই সংক্রান্ত জাতীয় গড়কেও (৮.২ শতাংশ) ছাপিয়ে গিয়েছে।

এ বার আসি পশ্চিমবঙ্গের কথায়। বাংলায় এই মুহূর্তে ১.৪৫ লক্ষ ‘সক্রিয় সংস্থা ’রয়েছে, যা সারা দেশে চতুর্থ সর্বোচ্চ। দেশের পরিসংখ্যান বলছে, ২৫ বছরের কমবয়সি স্নাতকদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে চার জন বেকার। এই পরিস্থিতিতেও বাংলার প্রায় দেড় লক্ষ সংস্থায় প্রতি বছর বিপুল কর্মসংস্থান হয়ে থাকে। গত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গে ৫৭ লক্ষ নতুন কর্মোদ্যোগ চালু হয়েছে, যাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১.৩ কোটি মানুষের। পশ্চিমবঙ্গে তাঁতশিল্পের সঙ্গে জড়িত ৫.৪ লক্ষ মানুষ, যা সারা ভারতে দ্বিতীয় বৃহত্তম। এর ফলে গত বছর বাংলার রফতানি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। বাংলায় রয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম দস্তানা তৈরির কারখানা, ৪০০টি চামড়ার কারখানা এবং আটটি নিকাশি-বর্জ্য পরিশোধনাগার। বাংলার চামড়া উৎপাদন ভারতকে এশিয়ার বৃহত্তম চামড়াজাত দ্রব্যের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত আছেন পাঁচ লক্ষ মানুষ।

ভারতে সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান হয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে। সেখানেও বাংলার অবদান ২২টি আইটি পার্ক। যার ধারণক্ষমতা অন্তত ৮৫ শতাংশ। বাংলায় রয়েছে হাজারেরও বেশি সফ্‌টঅয়্যার কোম্পানি। উইপ্রো, কগনিজ়্যান্ট, ইনফোসিস, রিলায়্যান্স জিয়ো, এয়ারটেল, ভোডাফোন, আইটিসি-র মতো বড় বড় সংস্থা বাংলায় সক্রিয়। টিসিএস একাই বাংলায় ৫৪ হাজার কর্মচারী নিয়ে কাজ করে। তারা আরও একটি ক্যাম্পাস তৈরি করছে, যেখানে আরও ২০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। সারা দেশে ১৩৮টি ডেটা সেন্টারের মধ্যে শুধু বাংলাতেই রয়েছে ১১টি। ২০১১ সালের পর থেকে বাংলার তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির প্রকল্পের মোট অর্থমূল্য ৬০ হাজার কোটি। এখানে ২.৬ লক্ষ মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান হয়েছে। গত পাঁচ বছরে ৩৪ হাজারের বেশি স্টার্টআপ ব্যবসা চালু হয়েছে বাংলায়। কর্মসংস্থান হয়েছে আরও ৩০ হাজার মানুষের।

তামিলনাড়ু এবং কর্নাটকের মতো রাজ্যগুলির সঙ্গে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাতেও। কারখানার সংখ্যাই বেড়েছে ১৭ শতাংশ। বাংলার বিভিন্ন উৎপাদন ক্ষেত্রের ‘গ্রস স্টেট ভ্যালু অ্যাডেড’ (জিএসভিএ) বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৩ শতাংশ। মনে রাখতে হবে, এই সংক্রান্ত জাতীয় গড় মাত্র ৬.৫ শতাংশ।

বাংলায় পর্যটন শিল্পের মাধ্যমেও বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে, যা ইউনেস্কোর নজর এড়ায়নি। সারা বাংলাকে ঐতিহ্য পর্যটনের শ্রেষ্ঠ গন্তব্য হিসাবে চিহ্নিত করেছে তারা। রাজ্যে নতুন করে প্রায় ২৫০০ ‘হোম স্টে’ খুলেছে, যা বিভিন্ন পরিবারকে তাদের সম্পত্তি কাজে লাগিয়ে লক্ষ্মীলাভের সুযোগ করে দিয়েছে।

এই সমস্ত দিকগুলি বিবেচনা করে এটা তো বলাই যায় যে, ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির নেপথ্যে তার রাজ্যগুলির অবদানই সবচেয়ে বেশি। তার মধ্যে বাংলা ভারতের ‘লক্ষ্মী’।

(লেখক তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ। মতামত নিজস্ব)

Advertisement
আরও পড়ুন