প্রতীকী চিত্র।
উচমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলের দিন ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হল। কোন কোন ওয়েবসাইটে গিয়ে ঠিক ক’টায় রেজাল্ট জানা যাবে, সবই জানানো হল প্রতিবারের মত। ঠিক দু’বছর আগে মাধ্যমিক দিয়েছিলাম। ঠিক এমনই ফলাফল প্রকাশের দিন জানিয়ে যখন বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পর্ষদ, উত্তেজনায় রাতে ঘুম আসেনি।
এ বার কিছুই হল না। ঘুম এমনিতেও রাতে আসে না আর। শুধু আমার নয়, আমার ব্যাচের অনেকেরই আসে না। পরীক্ষা হয়নি । পরীক্ষা হবে কি হবে না, তা নিয়ে নানা দোলাচলে কেটেছে প্রায় ছ’মাস। আমরা বছরভর ক্লাস পাইনি। তবু দিদিমণিরা হাতে লিখে, ফোনের মাধ্যমে আমাদের তৈরি করেছিলেন। তার পর মুখ্যমন্ত্রী যখন আমাদের সকলকে ১০ হাজার করে টাকা দিলেন অনলাইন ক্লাস করার ট্যাব কেনার জন্য, আমরা কিনলাম। তার রসিদ জমা দিতে হল ইস্কুলে। ক্লাসও শুরু করলাম।
কিন্তু পরীক্ষা হল না! তবে ভোট হল। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ রাস্তায় মিছিল করলেন। মিটিং হল। এই জমায়েতগুলোতে বেশিরভাগের মুখেই মাস্ক ছিল থুতনির নীচে। করোনা বাড়ল। ছড়াল।
দু’মাসের জন্য স্কুল খুলেছিল নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি অবধি। তার পর আবার তালা পড়ল ক্লাসরুমের দরজায়। ‘পড়া পড়া খেলা’ নিয়ে দিন কাটতে লাগল অনিশ্চয়তায়। কেন্দ্রীয় বোর্ডগুলো পরীক্ষা বন্ধ করে দিল। তার পর আমাদের মাধ্যমিক আর উচমাধ্যমিকও বাতিল হল। কীভাবে তবে তৈরি হবে রেজাল্ট? জানলাম ‘বিকল্প’ তৈরি হচ্ছে। ফাইনাল পরীক্ষারও ‘বিকল্প’ হয় তবে? এই যে জন্মানো ইস্তক শুনে এলাম পরীক্ষার কোনও বিকল্প নেই? বিশ্বাস করলাম পরীক্ষার রেজাল্টের ওই কাগজটাই আমার ইহকাল-পরকাল?
ঘুম আসে না!
তার পর একদিন ‘বিকল্প’ জানা গেল। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট আর উচমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার রেজাল্ট ভিত্তি করে তৈরি হবে আমাদের চূড়ান্ত ভাগ্যলিপি। তা-ই যদি হয়, তবে এত কাল আমাদের পরীক্ষার ভাগ্যবিধাতারা নবম বা একাদশ শ্রেণির পড়াশোনার কোনও গুরুত্বই রাখলেন না কেন মাধ্যমিক আর উচমাধ্যমিকের সামগ্রিক পরীক্ষায়? যেমন ছিল আগে আমাদের মায়েদের সময়?
আমাদের সকলের হাতে তো সরকারের দান ফোন বা ট্যাব আছে। তাতে কি একটা অল্প নম্বরের হলেও অনলাইন পরীক্ষা হতে পারত না! দাদাদিদিদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে তো হচ্ছে অনলাইন পরীক্ষা। শুধু আমাদের গায়ে সারাজীবনের মতো ছাপ পড়ে গেল বিনা পরীক্ষায় পাশ করার!
দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষাকে সিরিয়াসলি নিতে হবে জেনেছি। তা-ই নিয়েছিলাম। আমরা কেউই পরীক্ষা দিতে ভালবাসি না। কিন্তু পরীক্ষার বিকল্প তো ভাবেননি কেউ। যেমন ভাবা হয়নি ভোটের বিকল্প। জানলাম, পরীক্ষার বিকল্প হতে পারে পুরনো পরীক্ষা। অতিমারির কারণে। কিন্তু ভোটের বিকল্প হয় না। মানুষ মরলেও না। আমাদের ঘুম চলে গেলেও না। সমস্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী প্রবেশিকা নিষিদ্ধ হল। ফাইনাল পরীক্ষায় যাদের যথার্থ মূল্যায়ন হল না, তাদের ভাল কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা ছাড়া কী ভাবে বেছে নেবে? আর আমাদের কোনও সুযোগ থাকবে না ছোটবেলা থেকে স্বপ্নে দেখা নামী কলেজের দরজা দিয়ে ভিতরে গিয়ে নিজেকে প্রমাণ করার?
আমরা কোথায় যাব তবে?
(লেখক কোচবিহারের একটি স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। মতামত একান্ত ব্যক্তিগত)