পুস্তক পরিচয় ২

লোকনাট্যের অনেকটাই আজও অধরা

প্রথম স্মৃতিযাপনটিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন ‘ইস্কুলে থাকতেই দু-একটি যাত্রা দেখেছিলাম হাওড়ায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০১

আমাদের লোকনাট্যের আঙ্গিকের অনেক কিছু আজও অজানা-অধরা। সে কারণেই বহুরূপী-র ‘বিশেষ বাংলা যাত্রা সংখ্যা’। সম্পাদক প্রভাতকুমার দাস স্পষ্ট করেছেন অভিপ্রায়: ‘অনেকে ভারতীয় লোকনাট্যের ঐতিহ্যের সঙ্গে হয়তো কিছুটা হলেও পরিচিত, তুলনায় বাংলার নানা প্রান্তে আজও কতরকমের নাট্যাভিনয় প্রবহমান— তার আঙ্গিক, সংগীত, সংলাপ, উপস্থাপন রীতির সঙ্গে পরিচয় ঘটাতেই’ এই সংখ্যা। এতে ‘যাত্রা: ফিরে দেখা’ অংশটির সমস্ত রচনাই স্মৃতিচারণ। উঠে এসেছে এই লোকনাট্য সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা, মুগ্ধতা, শ্রদ্ধা, এমনকী উত্তরাধিকারের কথাও। প্রথম স্মৃতিযাপনটিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন ‘ইস্কুলে থাকতেই দু-একটি যাত্রা দেখেছিলাম হাওড়ায়। সেও তো ষাটপঁয়ষট্টি বছর আগে— ভালো করে তার সব কথা মনে পড়ে না। এইটুকু মনে আছে দুটো পালারই প্রধান অভিনেতা ছিলেন এক অসামান্য নট— ফণিভূষণ বিদ্যাবিনোদ। আসরে তাঁর উপস্থিতি দর্শকের মনে বিদ্যুৎ সঞ্চার করত।’ সৌরীন ভট্টাচার্য তাঁর স্মৃতি থেকে জানিয়েছেন ‘আমার তিনরকমের যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা আছে।... একেবারে মাচা বেঁধে করা যাত্রা, খোলা জায়গায় মাঝখানে গোল করে অভিনয়ের চত্বর, আর একেবারে বন্ধ প্রেক্ষাগৃহের মঞ্চে। এসবই বলছি গ্রামীণ যাত্রার কথা।’ রচনাদির সঙ্গে আছে অনেক দুর্লভ প্রামাণ্য আলোকচিত্রও।

জলদর্চি-র (সম্পা: ঋত্বিক ত্রিপাঠী) বিষয়: ‘স্মৃতি: প্রসঙ্গ ও প্রয়োগ’। তাতে উজ্জ্বল উদ্ধার দেবেন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী, বিনোদিনী দাসী, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য্য, হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র-র স্মৃতিলেখ। ‘এই সংখ্যায় লেখকগণ সেই সব স্মৃতির প্রসঙ্গ এনেছেন যা তাঁদের সৃষ্টিতে বেশি প্রভাব ফেলে। এই সূত্রে স্মৃতিচিত্রণে ধরা দিয়েছে দেশ-কাল-সমাজ এবং অবশ্যই ব্যক্তির একান্ত আত্মোপলব্ধি।’ জানানো হয়েছে সম্পাদকীয়-তে। একালের স্মৃতিকথায় কলম ধরেছেন বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় লিখেছেন ‘লেখার বিচিত্র উপাদান খুঁজে পাই স্মৃতি অভিজ্ঞতা থেকে।’ আর মণীন্দ্র গুপ্ত লিখেছেন ‘আমি পৃথিবীকে পেয়েছি জন্মসূত্রে— এটি প্রদত্ত পৃথিবী। আর একটি পৃথিবীকে আমি তৈরি করেছি স্মৃতি দিয়ে— এটি আমার একার পৃথিবী... যে পৃথিবীর কথা লিখি কবিতায় সে এই পৃথিবী।’

Advertisement

চিন্তা উসকে দেবে বা জানার পরিধি বিস্তৃত করবে এমন প্রবন্ধাদি নিয়েই জলার্ক (সম্পা: মানব চক্রবর্তী)। বাংলা উপন্যাসে উদ্বাস্তু নারী, হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের বিচারে আত্মহনন, ব্রহ্মসংগীতে গোড়ার কথা, অরবিন্দ ঘোষ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা।

‘রবীন্দ্রনাথের ঘরে বসে ডক্টর শীলকে অদ্বৈত তত্ত্ব, বেদান্ত দর্শন ও শঙ্করাচার্য্যের সংস্কৃত কবিতা আলোচনা করতে শুনেছি।’ কালিদাস নাগ লিখেছেন ‘আচার্য্য ব্রজেন্দ্রনাথ’কে নিয়ে। শুভশ্রী-র (সম্পা: শান্তনু সরকার) এই সংখ্যাটির শিরোনাম— ‘একটি জীবন’: স্মরণীয় জীবন কথা। মহারাজ নন্দকুমার থেকে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মতো স্মরণীয় ও বিতর্কিত স্বদেশ-ব্যক্তিত্বদের নিয়ে রচনা। পত্রিকাটির প্রথম চল্লিশ বছরে প্রকাশিত বিভিন্ন সংখ্যা থেকে গৃহীত সেগুলি।

ঋদ্ধি-র (সম্পা: তন্ময় ভট্টাচার্য) বিষয়: ‘ভারসাম্য’। সম্পাদকীয়-তে মন্তব্য করা হয়েছে: ‘ভারসাম্য বলতে প্রথমেই মনে আসে— প্রাকৃতিক ভারসাম্য। ভারসাম্য অবশ্য জীবনের প্রতি পদে পদে।... সমাজ ও সংসারের শান্তি বজায় রাখতে ভারসাম্য রেখেই চলতে হয়।’ লিখেছেন বিশিষ্টজন।

অন্তঃসার (সম্পা: রত্নাংশু বর্গী) শুরু হয়েছে শঙ্খ ঘোষের কবিতায়: ‘বিদায় নেবার আগে/ দুগালে দুটো পানের পাতা বুলিয়ে দিতে দিতে/ ঠাকুমা বলেছিলেন: এসো আবার।’ পুলক চন্দ সম্পাদিত অপ্রকাশিত অগ্রন্থিত সমর সেন উপলক্ষে তাঁকে নিয়ে একটি পত্র-প্রবন্ধ লিখেছেন রণজিৎ গুহ, ‘তাঁর ধারণা ছিল যে রচনার জন্য মানুষের জাগতিক অভিজ্ঞতার বহুত্ব ও বিচিত্রতাই যথেষ্ট।’ আর নিত্যপ্রিয় ঘোষ ‘শ্রীভবনের অব্যবস্থা, গুরুদেবের উদ্বেগ’ প্রবন্ধে লিখেছেন ‘শ্রীভবনের ইতিহাস তেমন মসৃণ নয়।’

পুরবৈয়াঁ-য় (সম্পা: বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য) সমর সেন, পুষ্কর দাশগুপ্ত, পরেশ মণ্ডল— এই তিন কবিকে নিয়ে রমানাথ রায়ের রচনা মৌলিক চিন্তায় ভাবাবে পাঠককে।

উত্তরধ্বনি-র (সম্পা: বীরেন চন্দ) শুরুতেই জানানো হয়েছে ‘ওপার বাংলায় আধুনিক বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্য-কবিতা ও চলচ্চিত্র নিয়ে যে আন্তরিক অনুশীলন চলছে, আমাদের এ-বাংলায় তার খবর অনেকেই রাখেন না।... এই সকল স্রষ্টাগণ আমাদের নিকট পড়শি, প্রতিবেশী। তাঁদের সৃষ্টির যে বৈচিত্র তা তুলে ধরতেই’ এ প্রয়াস। সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বা আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো সাহিত্যিকদের সঙ্গে তানভীর মোকাম্মেল বা তারেক মাসুদের মতো চলচ্চিত্রকারদের নিয়েও বিবিধ আলোচনা।

কবিতীর্থ-এর (সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য) বিশেষ ক্রোড়পত্রে বরিস পাস্তেরনাক, সল বেলো, পাবলো পিকাসো, গ্যুন্টার গ্রাস। তাঁদের নিয়ে আলোচনা, সাক্ষাৎকার, নোবেল অভিভাষণ, জীবনপঞ্জি ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ অমিয় চক্রবর্তীর ‘বরিস পাস্তেরনাকের সাক্ষাৎকার’।

ফজলি পত্রিকা-র নিবেদন ভবানী-চর্চা-য় (সম্পা: নির্মলেন্দু শাখারু) ছড়ার জগতের জাদুকর ভবানীপ্রসাদ মজুমদারকে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা। তাতে ছড়া ও ছন্দশিল্পী হিসেবে তো বটেই, জীবনশিল্পী হিসেবেও কতটা তিনি অনবদ্য, তার হদিশ।

আরও পড়ুন
Advertisement