পুস্তক পরিচয় ২

ফকিরের গানেই প্রাণিত হন রফি

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাচীন ধারা ধ্রুপদ-এর বড় বিস্ময় যে, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম গেয়ে চলেছেন ডাগর পরিবার। নিয়োগী বুকস প্রকাশ করেছে ডিভাইন লিগ্যাসি/ ডাগরস অ্যান্ড ধ্রুপদ (১৫০০.০০)। দুর্লভ সব ছবি, ধ্রুপদ-সাধক ডাগর-শিল্পীদের, নানা মুহূর্তের। ছবি আর লেখায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ধ্রুপদ ধারাটির রূপরেখা যেন বইটি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০১
ডাগর সপ্তক ধ্রুপদ উৎসবে ডাগর পরিবারের শিল্পীরা। মার্বেল প্যালেস, কলকাতা। ১৯৮৩ (ডাগরস অ্যান্ড ধ্রুপদ বই থেকে)

ডাগর সপ্তক ধ্রুপদ উৎসবে ডাগর পরিবারের শিল্পীরা। মার্বেল প্যালেস, কলকাতা। ১৯৮৩ (ডাগরস অ্যান্ড ধ্রুপদ বই থেকে)

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের প্রাচীন ধারা ধ্রুপদ-এর বড় বিস্ময় যে, তা প্রজন্মের পর প্রজন্ম গেয়ে চলেছেন ডাগর পরিবার। নিয়োগী বুকস প্রকাশ করেছে ডিভাইন লিগ্যাসি/ ডাগরস অ্যান্ড ধ্রুপদ (১৫০০.০০)। দুর্লভ সব ছবি, ধ্রুপদ-সাধক ডাগর-শিল্পীদের, নানা মুহূর্তের। ছবি আর লেখায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে ধ্রুপদ ধারাটির রূপরেখা যেন বইটি। লেখক হুর্মা কুরেশি ভূমিকা-য় জানিয়েছেন, আশির দশকের মধ্যপর্বে যখন প্রথম ধ্রুপদ শোনেন, মন্ত্রমুগ্ধের মতো তিনি যেন অন্য কোনও স্তরে উন্নীত হয়েছিলেন বলে মনে হয়েছিল তাঁর। গাইছিলেন জাহিরুদ্দিন ও ফৈয়াজুদ্দিন ডাগর, ‘... দেয়ার ওয়াজ সামথিং ডিভাইন অ্যাবাউট দেয়ার রেনডারিং; দেয়ার ভয়েসেজ ওয়্যার জেনট্‌ল, ইয়েট হন্‌টিং।’ ‘হোয়াট ইজ ধ্রুপদ’ অধ্যায়টি পাঠককে ধ্রুপদের সাঙ্গীতিক কাঠামো এবং ডাগর পরিবারের প্রজন্মবাহিত পরম্পরা বুঝতে সাহায্য করবে। নানা অধ্যায় জুড়ে ডাগর-শিল্পীদের পরিচয়, তাঁদের ঐতিহ্য পালন, তাঁদের পরিবেশিত ধ্রুপদ-এর ধরনধারণ— লেখায়, স্থিরচিত্রে এক জীবন্ত ইতিহাস। আছে ডাগরদের বংশলতিকাও। মুখবন্ধ লিখেছেন জহর সরকার।

শান্তনু মৈত্র সুরকার হিসেবে এখন ফিল্মের সঙ্গীত দুনিয়ার নয়নের মণি। বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করার সময় ক্লায়েন্টের ফরমায়েশ জোগানোই ছিল তাঁর কাজ, কিন্তু বিধুবিনোদ চোপড়ার ‘পরিণীতা’ থেকে পূর্ণাঙ্গ সঙ্গীতকার, এখন তাঁর দর্শকের মনের মতো ‘মিউজিক’ তৈরিই একমাত্র কাজ। লাগে রহো মুন্নাভাই, হাজারোঁ খোয়াইশেঁ অ্যায়সি, থ্রি ইডিয়টস ছবির গান তো এখন মুখে-মুখে ফেরে শ্রোতাদের। জাতীয় পুরস্কারেও ভূষিত সঙ্গীত নির্দেশক তিনি। এমন একটা মানুষের হয়ে-ওঠার কাহিনি অন দ্য উইংস অব মিউজিক/ আ বুক অব জার্নিস (হার্পার কলিন্স, ৩২৫.০০)। আত্মস্মৃতি নিয়ে শান্তনুর একটি বাংলা বই এবং তাঁর সঙ্গে কথোপকথন-বোঝাপড়ার ভিত্তিতে অরুণা চক্রবর্তী তৈরি করেছেন বইটি। জীবনের নানা অনুষঙ্গ, টুকরো স্মৃতির ঝাঁপি খুলে গল্পে-স্মৃতিতে মেতেছেন শান্তনু, ভূমিকা-য় লিখেছেন ‘দেয়ার আর সো মেনি আদার ওয়ার্ল্ডস টু ডিসকভার—’। বইটির মুখবন্ধে লিখেছেন গুলজার ‘শান্তনু মৈত্র ইজ আ লাইভ অ্যান্টেনা’।

Advertisement

গুলজার তো প্রথমে কবি, তারপর চলচ্চিত্রকার। কী না লেখেন তিনি! আখ্যান, নিবন্ধ, ছবির চিত্রনাট্য, গান, সংলাপ— এ দেশের সিনেমার দাদাসাহেব ফালকে তিনি। তাঁর উর্দু-হিন্দুস্থানি কবিতার অনুবাদ আগেও হয়েছে, আবারও বের করল হার্পার কলিন্স: প্লুটো পোয়েমস (২৯৯.০০)। অনুবাদক নিরুপমা দত্ত। কবিতার সঙ্গে বাড়তি পাওনা গুলজারেরই ইলাস্ট্রেশন, এতেই এ-বই এক লাফে যেন চাঁদ ছুঁয়ে ফেলল। রুখুসুখু এক গাছের স্কেচ তাঁর ‘আ সিজন ফর পোয়েমস’ কবিতায়, সে পদ্যের শেষ দু’টি লাইন: ‘কালারস ফেড, অ্যান্ড দ্য পোয়েম/ ড্রিফট্‌স লাইক ফলেন অটাম লিভস।’

গুলজার, রাহুল দেব বর্মন সম্পর্কে বলেছেন ‘আই ওয়াজ অ্যামেজড অ্যাট হিজ ইমাজিনেশন।’ খগেশ দেব বর্মন তাঁর বইটিতে, আর. ডি. বর্মন/ দ্য প্রিন্স অব মিউজিক (রূপা, ৭৯৫.০০), সুরকার রাহুল দেব বর্মনের সঙ্গীত-কর্মকাণ্ডকে পরপর কয়েকটি দশকের কালপর্বে ভাগ করেছেন, ১৯৫০ থেকে ১৯৯০। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত রাহুলের কলকাতা পর্বেরও আলোচনাও আছে বইটিতে। তাঁর কাজের সঙ্গে পরিশিষ্টে রয়েছে জীবনপঞ্জিও, আর শুরুতে বংশলতিকা। গোটা বইটিই শচীনকর্তার পুত্রের প্রতিভার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় পাঠককে।

অমৃতসরের কাছে যে গ্রামটিতে জন্ম মহম্মদ রফির, সেখানে এক ফকির আসতেন, তাঁর কণ্ঠের আশ্চর্য জাদুতে প্রাণিত হন রফি। মাত্র ছাপ্পান্ন বছরের জীবনেই গায়ক হিসেবে তিনি এ দেশের শীর্ষে, হিন্দি ছবির প্লেব্যাক গায়ক হিসেবে এখনও তাঁর সেরা-র শিরোপা। তাঁর কাজ ও জীবন নিয়ে বেরিয়েছে সুজাতা দেব-এর মহম্মদ রফি/ গোল্ডেন ভয়েস অব দ্য সিলভার স্ক্রিন (ওম, ৫৯৫.০০)। রফি-পুত্র শাহিদ রফিও স্বীকৃতি ও অনুমোদন জানিয়েছেন জীবনীটিকে। রফির গায়নভঙ্গি নিয়ে বিশিষ্ট সুরকারেরা বলেছেন বইটিতে, যেমন নওশাদ: ‘আই হ্যাভ নেভার সিন রফি মেকিং এনি মিসটেক।’ গুরুত্বপূর্ণ তথ্যনথিতে সাজানো এ-বইয়ের মুখবন্ধে দিলীপকুমার লিখেছেন ‘হি ওয়াজ আ কর্মযোগী ইন দ্য রিয়েল সেন্স অব ওয়ার্ড।’

আরও পড়ুন
Advertisement