পুস্তক পরিচয় ৩

নব রূপে অবহেলিত আকরসূত্র

ভারতে কোম্পানি সরকারের নথিপত্র বোধহয় বিশ্বের সেরা ঐতিহাসিক নথি: সেখানে প্রতিটি কাজেরই কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।’ লিখেছিলেন গ্র্যান্ট ডাফ, তাঁর হিস্টরি অব দ্য মারাঠাজ (১৮২৬) বইয়ে। নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাগজপত্র (বিভিন্ন ভাষায় লেখা সেই সব নথির মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ পৃষ্ঠার কাছাকাছি!)

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০১

ভারতে কোম্পানি সরকারের নথিপত্র বোধহয় বিশ্বের সেরা ঐতিহাসিক নথি: সেখানে প্রতিটি কাজেরই কারণ খুঁজে পাওয়া যায়।’ লিখেছিলেন গ্র্যান্ট ডাফ, তাঁর হিস্টরি অব দ্য মারাঠাজ (১৮২৬) বইয়ে। নানা জায়গায় ছড়িয়ে থাকা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাগজপত্র (বিভিন্ন ভাষায় লেখা সেই সব নথির মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ পৃষ্ঠার কাছাকাছি!) গুছিয়ে রাখার উদ্যোগ শুরু হয় ১৮৯১-এ, জি ডব্লিউ ফরেস্ট-এর তত্ত্বাবধানে গড়ে ওঠে ‘ইম্পিরিয়াল রেকর্ড’ বিভাগ। পরে সি আর উইলসন ফার্সি নথিপত্র তালিকাবদ্ধ করার পরিকল্পনা করেন, যা কাজে পরিণত হয় তাঁর উত্তরসূরি ই ডেনিসন রস-এর আমলে। রস আলাদা ওরিয়েন্টাল সেকশন গড়ে তোলেন, মৌলভি জরিফ মহম্মদের নেতৃত্বে পুরোদমে কাজ শুরু হয়। ১৯১১-য় প্রকাশিত হয় ক্যালেন্ডার অব পার্সিয়ান করেসপন্ডেন্স-এর প্রথম খণ্ড, যেখানে সংকলিত হয় ১৭৫৯-’৬৭ সালের ফার্সি চিঠির বিবরণ। ১৯৫৯ সালে দশ খণ্ডে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়, ১৭৯৩ পর্যন্ত নথির হদিশ ছিল সেখানে। পরে ১৯৬৯-এ ১৭৯৪-’৯৫-এর আর একটি খণ্ডও প্রকাশিত হয়। এত দিনে নতুন সংস্করণে প্রকাশ পাচ্ছে খণ্ডগুলি। ন্যাশনাল আর্কাইভসের দায়িত্বে থাকাকালীন মুশিরুল হাসান বিভিন্ন প্রকাশনার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ‘আর্কাইভস ইন ইন্ডিয়া হিস্টরিক্যাল রিপ্রিন্টস’ প্রকল্পে এমন নানা বই পুনর্মুদ্রণে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এ পর্যন্ত পাঁচটি খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে, যার সময়সীমা ১৭৫৯-’৮০ (ক্যালেন্ডার অব পার্সিয়ান করেসপন্ডেন্স, খণ্ড ১-৫। প্রাইমাস বুকস, মোট ৮৭৩০.০০)।

নিছক পুনর্মুদ্রণ নয়, এটিতে মূল্যবান দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছেন মুজফফর আলম ও সঞ্জয় সুব্রহ্মণ্যম। ত্রিশ পাতার ভূমিকার শেষে তাঁরা প্যারিসের বিবলিওথেক নাশিওনাল-এ রক্ষিত ছ’টি ফার্সি নথির মূল পাঠ এবং তাঁদের করা অনুবাদও সংযুক্ত করেছেন, যার তিনটি মিরকাশিম ও একটি শাহ আলমের লেখা। কালপর্বের বিচারে আঠেরো শতকের শেষার্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, পলাশির যুদ্ধের পরে সবে কোম্পানির শাসন শিকড় বিস্তার করছে নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে, অন্য দিকে মোগল সাম্রাজ্য দ্রুত বিলুপ্তির পথে। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির সঙ্গে ভারতীয় সমাজের ‘কমিউনিকেশন’ কী ভাবে তৈরি হচ্ছিল, দেশীয় পদ্ধতি-প্রকরণ পুরো আয়ত্ত করতে সাহেবদের ব্যর্থতা কী ধরনের সংঘাত সৃষ্টি করছিল, ভূমিকায় এই বিষয়টিই তুলে ধরেছেন দুই ইতিহাসবিদ। কম ব্যবহৃত এই আকরসূত্রের দিকে গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তাঁরা।

Advertisement
আরও পড়ুন
Advertisement