পুস্তক পরিচয় ২

‘দর্শক উন্নীত হোক দ্রষ্টার জগতে’

জরুরি অবস্থা, ১৯৭৫। শারদীয় সংখ্যার আয়োজন চলছে। সাগরময় ঘোষ টেলিফোনে জানালেন শঙ্খ ঘোষকে: ‘দেশ-আনন্দবাজার দুটো পত্রিকার কবিতাই রাইটার্স থেকে ফিরে এসেছে না-ছাপানোর নির্দেশ নিয়ে।’ কিন্তু ‘অন্য কোনো কবিতা তো পারব না পাঠাতে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৫ ০০:০২

জরুরি অবস্থা, ১৯৭৫। শারদীয় সংখ্যার আয়োজন চলছে। সাগরময় ঘোষ টেলিফোনে জানালেন শঙ্খ ঘোষকে: ‘দেশ-আনন্দবাজার দুটো পত্রিকার কবিতাই রাইটার্স থেকে ফিরে এসেছে না-ছাপানোর নির্দেশ নিয়ে।’ কিন্তু ‘অন্য কোনো কবিতা তো পারব না পাঠাতে। কেননা যা-কিছু লিখছি এখন, তার সবটাই তো ও-রকম সরকারি হুকুম নিয়ে ফিরে আসতে পারে।’ জানিয়ে দেন কবি। কবিতা দু’টির প্যাকেট ফেরত পেয়েছিলেন তিনি, সিলমোহর দেওয়া ‘Not to be printed’। শারদীয় নতুন কবিসম্মেলন-এর (সম্পা: শ্যামলকান্তি দাশ) শুরুতেই শঙ্খ ঘোষের গদ্য ‘জরুরি অবস্থার আতঙ্ক’। রণজিৎ দাশের ভ্রমণ-গদ্য ‘অন্তরঙ্গ ইয়োরোপ/ একটি দামাল দিনলিপি’। রজনীকান্ত সেনের কবিধর্ম নিয়ে সুধীর চক্রবর্তী আর ভিক্‌তর য়্যুগো ও বোদল্যের— দুই কবির সংঘাত নিয়ে চিন্ময় গুহর রচনা। ইয়েট্‌স সম্পর্কে সৌরীন ভট্টাচার্য (‘চোখের জলের পঙ্‌ক্তি’), মণীন্দ্র গুপ্তের গদ্য নিয়ে রুশতী সেন (‘কবিতার কাছে’)। আনিসুজ্জামান অশ্রুকুমার সিকদার পবিত্র সরকারের সাক্ষাৎকার। কমল চক্রবর্তীর উপন্যাস ‘হে কবি’, শংকর চক্রবর্তীর বিশেষ রচনা ‘কবির পাহাড়, ভালোপাহাড়’।

কোরক সাহিত্য পত্রিকা-র (সম্পা: তাপস ভৌমিক) বিষয়: ‘দুই বাংলার কবি ও কবিতা’। রবীন্দ্র-পরবর্তী বাংলা কবিতা কোন পথে হেঁটেছে, পারিপার্শ্বিক অনুষঙ্গ বা সমকালীন দহনকে নিয়ে কী ভাবে এগিয়েছে— ‘এইসব উদ্যত প্রশ্নের একটা সামগ্রিক আলোচনার প্রয়াস’। দুই বাংলার কবিদের আত্মসমীক্ষার সঙ্গে স্বল্পালোচিত কয়েক জন কবিকে নিয়ে আলোচনা। আছে বিভিন্ন প্রদেশে বসবাসকারী বাঙালি কবিদের কবিতা।

Advertisement

‘ইয়ং বেঙ্গল ও রামবাগানের দত্ত-পরিবার’ নিয়ে অলোক রায়, ‘বিস্মৃত নাট্যকর্মী ও বীণা থিয়েটার’ নিয়ে শুক্লা দত্ত, যোগীন্দ্রনাথ সরকারের সার্ধশতবর্ষ নিয়ে গৌতম নিয়োগী, এমত প্রবন্ধ কারুকথা এইসময়-এ (সম্পা: সুদর্শন সেনশর্মা)। শতবর্ষে তেলুগু কথাকার চাসো-র গল্প অনুবাদ করেছেন রামকুমার মুখোপাধ্যায়।

কথা সোপান-এর প্রবন্ধে ‘পাঠক এই দেশ, মাটি আর ইতিহাসের খোঁজ পাবেন।’ লিখেছেন সম্পাদক অমর মিত্র। নিজের ‘মহানদী’ উপন্যাস প্রসঙ্গে অনিতা অগ্নিহোত্রী: ‘নদী যে পথে এসেছে, তার উজান বেয়েই মহানদী উপন্যাস লেখা।’ দুই মনস্বীর ভাবনার প্রত্যয় গৌরী ঘোষের ‘চিঠিপত্রে রবীন্দ্রনাথ ও রামেন্দ্রসুন্দর’-এ। ক্রোড়পত্রে মনোজ মিত্রের নাট্য রচনা অভিনয় নির্দেশনা ও শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের সাহিত্যকর্ম।

অরুণ মিত্র চিত্তরঞ্জন ঘোষ, রণেশ দাশগুপ্ত মৃণাল সেনের রচনার পুনর্মুদ্রণে বিজন ভট্টাচার্য শতবর্ষ ক্রোড়পত্র পরিচয়-এ (সম্পা: বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্য), আছে অপ্রকাশিত রচনাও। ‘বিষ্ণুপুরাণ-এ যুক্তিবাদ’ নিয়ে রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্যের প্রবন্ধের সঙ্গে রামগোপাল ঘোষ প্রসঙ্গে সুবীর চট্টোপাধ্যায়। গোপাল হালদারের গল্পকার হয়ে ওঠার কথা সুমিতা চক্রবর্তীর কলমে। প্রবীর বসুর ‘ভারতীয় রাষ্ট্রীয় কংগ্রেস ও রবীন্দ্রনাথ’-এর দ্বিতীয় পর্ব।

মিলেমিশে পত্রিকায় (সম্পা: সমীরকুমার গুপ্ত) কবিতা-ছড়া-গল্পের সঙ্গে বহুবিধ প্রবন্ধ। সুধীর চক্রবর্তীর ‘বাঙালির তাজমহল’-এ উঠে এল— রবীন্দ্রনাথ শাজাহানের কীর্তির মধ্যে যে কবিকে পেয়েছিলেন, সেই কবির অশ্রুজল নিয়ে বাংলা আধুনিক গানে অনুবর্তনের রূপরেখা। চিত্তপ্রসাদকে নিয়ে অনুনয় চট্টোপাধ্যায়, ভাষাবিদ্‌ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে অলোক রায়, রবীন্দ্রনাথের পুত্রবধূ ‘আশ্রম-লক্ষ্মী প্রতিমাদেবী’কে নিয়ে স্বপনকুমার ঘোষ, তপন সিংহের ছবিতে ‘মগ্ন কবিতা’ নিয়ে অপূর্ব বিশ্বাসের আলোচনা।

প্রেতিনীর রূপকথা, জীবনানন্দ দাশের উপন্যাস অবলম্বনে নাটক লিখেছেন রবিশংকর বল। পূর্ব পশ্চিম বার্ষিক নাট্যপত্র (সম্পা: সৌমিত্র মিত্র)। ইবসেন অনুপ্রাণিত অশোক মুখোপাধ্যায়ের নাটক ‘সাদা ঘোড়া’। মেঘনাদ ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথোপকথন অংশুমান ভৌমিকের। মহর্ষি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যকে নিয়ে প্রভাতকুমার দাসের নিবন্ধ।

মাওবাদীদের গেরিলা থিয়েটার নিয়ে সৌমিত্র দস্তিদারের নিবন্ধ ব্রাত্যজন নাট্যপত্র-এ (সম্পা: ব্রাত্য বসু)। ‘আধুনিক নাটকের দর্শক সাক্ষী ও উপভোক্তা থেকে দ্রষ্টার জগতে উন্নীত হোক।’ লিখেছেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় ‘নাটক বনাম থিয়েটার: অমীমাংসিত সমীকরণ’-এ। ‘থিয়েটার— যা দেখেছি’-তে জয় গোস্বামী: ‘নাটককার নাটক লেখার সময় দেখতে পান, শুনতে পান। এখানেই নাটককে সাহিত্যের অন্তর্গত বলে আমি মনে করি।’ ‘অভিনেতা ও নির্দেশকের সম্পর্ক’ নিয়ে পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের আলোচনা। ব্রাত্য বসু রচিত-নির্দেশিত ‘বোমা’ নিয়ে ক্রোড়পত্র। নবীন নাটককারদের নাটক: চিরঞ্জীব বসুর ‘বাখ্‌তিন বাখ্‌তিন’, স্বাতী গুহর ‘ব্লুপ্রিন্ট কিংবা একটি অবাস্তব জীবন’, দেবতোষ দাসের ‘একটি লোকাল গল্প’।

অনুবাদেরই বাংলা ত্রৈমাসিক অনুবাদ পত্রিকা-র (সম্পা: বিতস্তা ঘোষাল) শারদ সংখ্যায় প্যাট্রিক মদিয়ানোর নোবেল-বক্তৃতা। বিদেশি বাতায়ন ছাড়াও স্বদেশি সাহিত্যিকদের রচনার অনুবাদ প্রতিবেশী সাহিত্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তোলে।

ছোটগল্পের পত্রিকা নতুন গল্পপত্র-এ (সম্পা: শংকর চক্রবর্তী) টাটকা গল্পের সঙ্গে শম্ভু মিত্রের গল্প নিয়ে সুমিতা চক্রবর্তীর আলোচনা। ফিরে পড়া-য় ননী ভৌমিকের ‘ধানকানা’। কবিতার কাগজ প্রতীতি-তে (সম্পা: গৌতম হাজরা) বিপুল সংখ্যক কবিতার সঙ্গে কবিকৃতির আলোচনা। শঙ্খ ঘোষের শুধু ‘রাঙামামিমার গৃহত্যাগ’ নিয়ে লিখেছেন কামরুজ্জামান।

আরও পড়ুন
Advertisement