আত্মপরিচয়ের উন্মেষে স্মরণীয়

১৯১৮ সালে প্রকাশিত সমিতির ত্রৈমাসিক মুখপত্র ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’ চলেছিল পাঁচ বছর। বেরোয় বাইশটি সংখ্যা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:৪৪

জেগে উঠিলাম/ বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি-স্মারক সুবর্ণলেখ

সম্পাদক: আমজাদ হোসেন

Advertisement

১২০০.০০
বিশ্বকোষ পরিষদ

বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের অনুপ্রেরণায় কয়েকজন উদীয়মান মুসলিম লেখক ১৯১১ সালে কলকাতায় বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। স্বতন্ত্র সমিতি গড়ার সপক্ষে মোহম্মদ শহীদুল্লাহ যুক্তি দেন, ‘‘আমরা কয়েকজন (মুসলমান) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সদস্য ছিলাম। সেখানে হিন্দু-মুসলমা‌নের কোন ভেদ না থাকলেও আমাদের সাহিত্যিক দারিদ্র্যের কারণে আমরা বড়লোক ঘরে গরীব আত্মীয়ের মত মনমরা হয়ে সভায় যোগদান করতাম। আমাদের মনে হল বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সঙ্গে সম্বন্ধ বিলোপ না করেও আমাদের একটি নিজস্ব সাহিত্য সমিতি থাকা উচিত।’’ নবীন লেখকদের সংগঠিত করে উৎসাহ জোগানো আর মুসলমানের ঐতিহ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণে গুরুত্ব দেওয়াই ছিল সমিতির উদ্দেশ্য। কোনও সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে সমিতির জন্ম হয়নি বরং সমিতির নীতি ছিল সাহিত্যক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপন। সমিতির সভায় যোগ দিয়েছেন যোগেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়, জলধর সেন, সাহিত্যিক নৃপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়, সরোজিনী নাইডু, মানবেন্দ্র রায়, হীরেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখ।

১৯১৮ সালে প্রকাশিত সমিতির ত্রৈমাসিক মুখপত্র ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা’ চলেছিল পাঁচ বছর। বেরোয় বাইশটি সংখ্যা। ১৯৩৩-এ সমিতির মাসিক মুখপত্র হিসেবে বেরোয় ‘সাহিত্যিক’— বেঁচেছিল মাত্র এক বছর। কমিউনিস্ট নেতা মুজাফফর আহমদ ছিলেন সমিতির সহকারী সম্পাদক। সমিতির দফতর ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটের দোতলায় মুজাফফর সাহেবের সঙ্গে কয়েক বছর বাস করেন প্রথম মহাযুদ্ধ ফেরত হাবিলদার কবি নজরুল ইসলাম। কাজী আবদুল ওদুদও বাস করেছেন সেই ঘরে। নজরুল তাঁর স্মৃতিচারণায় বলেছেন, ‘‘সেদিন যদি সাহিত্য সমিতি আমাদের আশ্রয় না দিত... আমার কবি হওয়া সম্ভব হত কিনা আমার জানা নেই।’’

শতবর্ষ পেরিয়ে এ বছরই প্রকাশিত হয়েছে স্মারকগ্রন্থটি। ছ’টি পর্বে বিভক্ত মহাগ্রন্থে সমিতি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এবং সমিতির বিভিন্ন অধিবেশনের সভাপতিদের অভিভাষণ ছাড়াও পনেরো শতক থেকে বাহান্নর ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত প্রায় পাঁচশো বছরব্যাপী সময়পর্বে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্যচর্চার কিছু নিদর্শন সংকলিত হয়েছে। ১৯৪৩ সালে সপ্তম ও শেষ বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ৩২ বছরে মাত্র সাতটি বার্ষিক অধিবেশন ও জুবিলি উৎসব সংগঠিত করতে পেরেছিল সমিতি। তবু মানতে হবে বাঙালি মুসলমানের সাহিত্য সৃষ্টির প্রণোদনায়, আত্মপরিচয়ের উন্মেষে এবং মুসলিম জাতীয়তাবোধের বিকাশে সমিতির ভূমিকা অবিস্মরণীয়।

সাহিত্য সংস্কৃতি সাম্প্রদায়িকতা রাজনীতি

বদরুদ্দীন উমর

৪৭৫.০০
পুনশ্চ

ষাটের দশক থেকে তাঁর লেখালিখি শুরু। যে রচনাটি দিয়ে এ সঙ্কলন আরম্ভ হয়েছে সেটির শিরোনাম ‘বাঙালি সংস্কৃতির সংকট’, ১৯৬৭-তে অবশ্য বেরিয়েছিল ‘সংস্কৃতির সংকট’ শিরোনামে। প্রবন্ধটির প্রথম বাক্যটিই অমোঘ: ‘বাঙালিত্ব এবং মুসলমানত্বের মধ্যে বিরোধের কল্পনা সম্পূর্ণভাবে সাম্প্রদায়িকতাসৃষ্ট।’ লেখাটি এগোতে এগোতে বাঙালি বলতে কাদের বোঝায়, তাও স্পষ্ট করে তুলেছেন বদরুদ্দীন উমর: ‘‘বাংলাদেশের যে-কোনো অংশে যারা মোটামুটি স্থায়ীভাবে বসবাস করে, বাংলা ভাষায় কথা বলে, বাংলাদেশের আর্থিক জীবনে অংশগ্রহণ করে এবং বাংলার ঐতিহ্য নিজেদের ঐতিহ্য বলে মনে করে, তারাই বাঙালি। কাজেই কে কোন্ ধর্মাবলম্বী সে প্রশ্ন এক্ষেত্রে খুব প্রাসঙ্গিক নয়।’’ লেখক আমাদের উপমহাদেশের প্রগতিশীল চিন্তাচর্চার অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তাঁর লিখিত প্রবন্ধাদির ঐতিহাসিক মূল্য অনস্বীকার্য এই জন্যেই যে সে সব বাঙালির আত্মপরিচয়ের সঙ্গে ওতপ্রোত। এক দিকে দেশভাগ-উত্তর পশ্চিমবঙ্গ, অন্যদিকে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র— এ দুইয়ের মনস্ক পাঠকের কাছে তাঁর ভাবনাকে পৌঁছে দেওয়ার জন্যে সঙ্কলনটি প্রয়োজনীয়।

সঙ্কলনটি বিন্যস্ত করেছেন সুশান্ত পাল, এতগুলি দশক ধরে বদরুদ্দীনের রচনার বিভিন্ন বাঁকগুলি নিয়ে আলোচনাও করেছেন তিনি গ্রন্থটির শুরুতেই, জানিয়েছেন ‘‘এই দশকেও বদরুদ্দীন উমর লিখে চলেছেন। লেখা বিরতিহীন, কেননা, সমসাময়িক ঘটনাবিশেষে তিনি বিচলিত, বিপন্ন বোধ করেছেন, মানুষের মুক্তির সংকল্পে তিনি শরিক। ভারতীয় উপমহাদেশ, বিশ্ব রাজনীতিতে যে চরম দক্ষিণপন্থা, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আধিপত্য বিস্তার করছে, তার উৎসে পৌঁছতে চেয়েছেন সাম্প্রতিক প্রবন্ধে।’’

আরও পড়ুন
Advertisement