প্রবাসী বঙ্গসাহিত্য সম্মিলন প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, এটি ‘বাঙালির অন্তরতম ঐক্যচেতনাকে সপ্রমাণ করছে।’ ঐক্যচেতনার অন্দরে প্রবেশ করলে দেখা যায় প্রবাসী ও অভিবাসন শব্দগুলির অনিবার্য আসা-যাওয়া। কিন্তু কেন প্রবাসী, রাষ্ট্রীয় কারণে না কি পেশাগত প্রয়োজনে? প্রবাসীর জীবন কৃষ্টি রাজনীতির চলনের পথটিই বা কী? এই নিয়েই ‘ডায়াস্পোরা’-র ধারণা ও তত্ত্ব। বিষয়টি সামনে রেখে ভারত ও বাংলাদেশের গন্ধ মাখা ‘বৈশ্বিক’ বাঙালির পরিচয় ও তার সঙ্গে লগ্ন বাংলা ডায়াস্পোরার সাহিত্যের গতিপথ নিয়ে ভেবেছেন গোলাম মুরশিদ, কেতকী কুশারী ডাইসন, নবনীতা দেব সেন থেকে অশ্রুকুমার সিকদার, অনেকেই। এই বিষয়টিকেই নথিবদ্ধকরণ ও বিশ্লেষণের বৌদ্ধিক কাজটি করেছেন বর্তমান বইটির লেখিকা। ছ’টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত বইটি হিরণ্ময় ভট্টাচার্য, গোলাম মুরশিদ, কেতকী কুশারী ডাইসন, দিলারা হাশেম, ঊর্মি রহমান, কৌশিক সেন-সহ বাইশ বাঙালি লেখকের সৃষ্টি নিয়ে কথা বলেছে। মূলত ব্রিটেন, আমেরিকা, কানাডা থেকে ক্ষেত্রসমীক্ষা ও উপাদান সংগ্রহ করে এই চর্চা।
বৈশ্বিক বাঙালি এবং ডায়াস্পোরার বাংলা সাহিত্য
সুমনা দাস সুর
৮৫০.০০
দে’জ়
গোড়ার প্রশ্নটি: বাঙালি ডায়াস্পোরার অঙ্গ কারা? পাশ্চাত্যের দৃষ্টিতে তা বাংলাদেশ থেকে আসা বাঙালি। ভারতীয় বাঙালির ক্ষেত্রে ভারতীয়ত্বের পরিচয় স্বাভাবিক ভাবেই বাঙালিসত্তার পরিচয় ছাপিয়ে যায়। এই দুইয়ের মধ্যে থাকা সেতু, তাঁদের আত্মপরিচয়, ফেলে আসা দেশ ও বর্তমান অবস্থানের ‘সংযোগ’ হিসাবে ভাষা ও বৃহদর্থে সাহিত্য কী ভাবে কাজ করে, তার খোঁজ করে বইটি। প্রবাসের সমাজ-রীতিনীতি-প্রকৃতির প্রতিফলন যে উনিশ শতকে, ঔপনিবেশিক আমল থেকেই বাংলা সাহিত্যে পড়ছিল, তা রবীন্দ্রনাথ, কৃষ্ণভাবিনী দাসী প্রমুখের লেখালিখির সূত্রে মেলে ধরা হয়েছে। বিশ শতকের নানা পর্বের ভ্রমণবৃত্তান্ত, কথাসাহিত্য, কবিতার সূত্র ধরে একুশ শতকে এসে এই চর্চা কোথায় দাঁড়িয়ে, সংশ্লিষ্ট লেখকদের আত্মপরিচয়ের দ্বান্দ্বিক ভাবনাটি কেমন, খোঁজ করা হয়েছে তার। এসেছে সমাজ-ইতিহাসের জটিল আবর্তের কথাও, এই সূত্রেই দাউদ হায়দার ও তসলিমা নাসরিনের প্রসঙ্গও। বইটি বুঝিয়ে দেয়, বাংলা ডায়াস্পোরার সাহিত্য বেগবান।
অশোকবিজয় রাহার কাব্যসমগ্র
সম্পা: অনাথনাথ দাস, বিশ্বনাথ রায়, অমল পাল, দেবাশিস ভট্টাচার্য
৬০০.০০
এবং মুশায়েরা
তাঁর উনিশ বছর বয়সের কবিতা পড়ে রবীন্দ্রনাথ প্রশংসা করেছিলেন। প্রথম কবিতার বই দু’টি বেরোয় ১৯৪১-এ। অশোকবিজয় রাহার জন্ম ১৯১০-এ শ্রীহট্টে, গত শতকের আদিম বন্য নিসর্গের রূপময়তা তাঁর স্বাধীন কবিতার প্রথম ভিত্তিভূমি। পাহাড়-অরণ্য সমাকীর্ণ নিসর্গকে শব্দ দিয়ে এমন ভাবে চিত্রিত করতেন কবিতায়, পাঠক স্বাদ পেতেন বর্ণিল চিত্রকলারও। কবি হিসাবে তাঁকে রবীন্দ্র-পরবর্তী আধুনিক পর্বের কবিদের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন বিষ্ণু দে বুদ্ধদেব বসু অজিত দত্ত নরেশ গুহ। ১৯৫১-য় কর্মসূত্রে পাড়ি শান্তিনিকেতনে, আমৃত্যু পাকাপাকি ঠাঁই সেখানেই। সেই নতুন পর্ব ভরে উঠতে থাকে শালবীথি বকুলবীথি আম্রকুঞ্জ শরবন আমলকীবন তালগাছ হিমঝুরিগাছ শিমুল পলাশে... কবিতায় অঙ্গাঙ্গি আশ্রমের কাচঘর ছাতিমতলা ঘণ্টাতলা বুদ্ধমূর্তি সুরুলের পথ পারুলডাঙা কোপাই নদী আর খোয়াই। তাঁর মধ্যে আজীবন মিশে ছিল তিনটি বিভিন্ন সত্তা, নিজেই বলতেন: “একটি আদিম আরণ্যক, একটি প্রাকৃত গ্রামীণ, আর একটি বিদগ্ধ নাগরিক।” দিনযাপনে আচমকা সৌন্দর্য এনে ফেলতেন কী ভাবে, তাঁর কবিতার উদাহরণ টেনে জানিয়েছেন মণীন্দ্র গুপ্ত: “মাথার উপর ডাকল পেঁচা, চমকে উঠি— আরে।/ আধখানা চাঁদ আটকে আছে টেলিগ্রাফের তারে।”
জীবন্ত শিকড়ের সেতুসম্পা: মৃন্ময় প্রামাণিক
৩৫০.০
০ক্যালকাটা কম্প্যারেটিস্টস ১৯১৯
মেঘালয়ের কবি কিনফাম সিং নংকিনরিহ্, লেখেন খাসি ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই। তাঁরই ইংরেজি কাব্য দি ইয়ার্নিং অব সিডস বাংলায় অনুবাদ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের জনা চোদ্দো পড়ুয়া, ‘ক্লাসরুম ট্রান্সলেশন’ প্রকল্পে। হাইকু, টুকরো কবিতা, বড় কবিতার বুননে ফুটে ওঠে খাসি জনগোষ্ঠীর মানুষ ও নিসর্গের ছবি, ধরা পড়ে রাজনীতি ও সময়ের সঙ্কট। ‘বাতাসের মরশুম’, ‘ছত্রাক, মিষ্টি বরইয়ের স্বাদ’— তিনটি অংশে বিন্যস্ত অনুবাদ-কবিতাগুলি: জড়তাহীন, ঝরঝরে, পড়তে ভাল লাগে। সম্পাদক বই-শেষে যোগ করেছেন টীকা ও তথ্যসূত্র, খাসি সংস্কৃতির চিহ্নবাচক শব্দগুলি প্রসঙ্গে— সেও কাজের।