book review

সাম্রাজ্যের এক শতকের সাক্ষী

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১ ০৬:৪৮

অ্যাটেন্ডেন্ট লর্ডস: বৈরাম খান অ্যান্ড আবদুর রহিম, কোর্টিয়ার্স অ্যান্ড পোয়েটস ইন মুঘল ইন্ডিয়া
টি সি এ রাঘবন
৪৯৯.০০
হার্পারকলিন্স

বইটি জীবনী। তবে দু’জনের: বৈরাম খান খান-ই-খানান ও আবদুর রহিম খান-ই-খানান। ফারসি তুর্কমেন বৈরম অভিজাত বংশের সন্তান, পঞ্চদশ শতকে যে বংশের প্রভাব ছিল পারস্য ও মধ্য এশিয়ায়। তাঁর ছেলে আবদুর রহিম। হুমায়ুনের অকালমৃত্যুর পর পাঁচ বছর মোগল সাম্রাজ্যের রাজপ্রতিনিধি ছিলেন বৈরাম, সিংহাসনে বসার উপযুক্ত হননি আকবর। আকবর ও জাহাঙ্গিরের আমলে সেনাপতি ও সভাসদ ছিলেন রহিম। পিতা-পুত্র মিলিয়ে দেখেছেন মোগল যুগের একশো বছর। সৃষ্টি ও প্রলয় দুইয়েরই সাক্ষী।

Advertisement

মহাজীবনের কাহিনি লিপিবদ্ধ করাই রেওয়াজ, তবে এ বই আরও বেশি কিছু। মধ্যযুগের দুই চরিত্র রাজনীতি ও সাহিত্যের অভিজ্ঞান। ফারসি সাহিত্যের প্রবাদপুরুষ রহিম হিন্দি সাহিত্যেও চিরস্মরণীয় তাঁর অসামান্য ‘দোহা’র জন্য। ষোড়শ শতকে সন্ত কবি তুলসীদাস ও সুরদাসের হাত ধরে পল্লবিত হয় ব্রজ ভাষা ও অওধী; ধর্মগণ্ডির বাইরে কবিতা লিখতেন কেশবদাস, হিন্দুধর্ম ও ইসলামের সঙ্গমস্থলে দাঁড়িয়ে বৈরাম-রহিম। সাহিত্যকীর্তিও তখন রাজনৈতিক উত্থানের সোপান, সাহিত্য ও আধ্যাত্মিকতার বিপুল বিকাশ সাম্রাজ্যের এক ভিত্তি, বহু যুগ পরে নিশ্ছিদ্র কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে ভারত। দুই সেনানায়ক ও রাজনীতিবিদের গল্প শোনাতে গিয়ে ক্ষমতার টানাপড়েনের বাইরেও উঠে আসে আরও অনেক কথা— জাতীয়তাবাদ, জাতিগঠনের ইতিহাস, মোগল দরবারি সাহিত্য।

পশ্চিমবাংলার বাঙালি মুসলমান: অন্তহীন সমস্যা
খাজিম আহমেদ
৩০০.০০
উদার আকাশ

প্রায় এক দশক পরে বইটির দ্বিতীয় প্রকাশেও সংস্কারের স্পর্শ দেখা গেল না। দেশভাগের পর ‘প্রায় এতিম’ হয়ে যাওয়া ‘পশ্চিমবঙ্গীয় মুসলমান’দের উপর বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্লচন্দ্র সেন, জ্যোতি বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জমানায় যে অত্যাচার ও নির্যাতনের বিবরণ লেখক তুলে ধরেছেন, তা শুধু পাকিস্তান, বাংলাদেশ বা মায়ানমারের সংখ্যালঘুদের অবস্থার সঙ্গে তুলনীয়। সরকারি, বেসরকারি ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে দাঙ্গা, এবং মুসলমানদের উচ্ছেদ করার দীর্ঘ বিবরণ রয়েছে ‘বাঙালি মুসলমান: ট্র্যাডিশন চলেছে’ নিবন্ধে। সংবাদপত্রের কলমচিদের লেখা থেকে উদ্ধৃতি আহরণ করে মুসলমানদের দুর্দশার ছবি ফোটাতে চেয়েছেন লেখক, কিন্তু তথ্য বা পরিসংখ্যানের বিপুল খামতি। অথচ সাচার বা স্ন্যাপ-এর রিপোর্টেই তা পাওয়া সম্ভব। গত কুড়ি বছরে বাঙালি মুসলমানের প্রায় নিজ উদ্যোগে শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অগ্রগতি হচ্ছে, তা জানাতে লেখক বিস্মৃত হয়েছেন। শুধু মুসলমান নয়, পুরো বাঙালি জাতির পুনরুজ্জীবনের নিয়ামক হয়ে উঠতে পারে এই অগ্রযাত্রা। গবেষণা সন্দর্ভের মতো ছত্রে ছত্রে উদ্ধৃতি-কণ্টকিত লেখার চলন মোটেই সহজ নয়। তবে এমন বই নির্মাণে যে গবেষণা, শ্রম ও নিষ্ঠা রয়েছে, সে জন্য লেখক অবশ্যই প্রশংসিত হবেন।

আরও পড়ুন
Advertisement