Investment

পড়তি বাজারের মূল মন্ত্র সতর্ক পায়ে লগ্নি

শতাংশের হিসাবে সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি কম-বেশি ১০% পড়েছে। এতটা নামার পরেও তাদের থামার কোনও লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় বাজারের উপরে সতর্ক নজর রেখে ধীরে ধীরে পুঁজি ঢালার কৌশল নিতে পারেন লগ্নিকারীরা।

Advertisement
অমিতাভ গুহ সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:০৪
সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি কম-বেশি ১০% পড়েছে।

সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি কম-বেশি ১০% পড়েছে। —প্রতীকী চিত্র।

মাস দেড়-দুই আগে পর্যন্তও প্রশ্ন উঠছিল, কবে হবে শেয়ার বাজারের অতি প্রয়োজনীয় সংশোধন! আর এখন ছবিটা এর ঠিক বিপরীত। নাগাড়ে পড়ে চলেছে সূচক। ৮৫,৩৩৬ থেকে সেনসেক্স নেমেছে ৭৭,৫৮০ পয়েন্টে। শতাংশের হিসাবে সেনসেক্স এবং নিফ্‌টি কম-বেশি ১০% পড়েছে। এতটা নামার পরেও তাদের থামার কোনও লক্ষণ নেই। এই অবস্থায় বাজারের উপরে সতর্ক নজর রেখে ধীরে ধীরে পুঁজি ঢালার কৌশল নিতে পারেন লগ্নিকারীরা।

Advertisement

পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ভারতের বাজার থেকে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পুঁজি প্রত্যাহার। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত এমন একটা দিনও যায়নি, যে দিন এই সংস্থাগুলি শেয়ার বিক্রি করেনি। নভেম্বরের প্রথমার্ধেই তারা ২২,৪২০ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করে ফেলেছে। মিউচুয়াল ফান্ড-সহ ভারতীয় সংস্থাগুলি ক্রমাগত শেয়ার কিনে গেলেও এখনও পর্যন্ত এই পতন ঠেকানো যায়নি। যাঁরা শেয়ার এবং ফান্ডের দুনিয়ায় নতুন, তাঁরা এই টানা পতনে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা আতঙ্কিত। অতিমারির সময়ে বাজারে যে বড় পতন হয়েছিল, তা কাটিয়ে পরের দিকে বিপুল উত্থান হয় সূচকের। বিশেষ করে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে শুরু করে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এই উত্থান পর্বে যাঁরা প্রথম বাজারে পা রেখেছেন তাঁরা এই ধরনের পতনের সঙ্গে বিশেষ পরিচিত নন। এত বড় উত্থানের পরে কিছুটা পতন অবশ্যম্ভাবী ছিল। এখন এই পতন রুখে কবে বাজার ফের ঘুরে দাঁড়াতে পারে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।

গত এক সপ্তাহে দেশের আর্থিক ক্ষেত্রের পরিস্থিতির যে বিশেষ উন্নতি হয়েছে এমন নয়। বরং প্রাধান্য ছিল নেতিবাচক খবরের। অক্টোবরে খুচরো বাজারের মূল্যবৃদ্ধির হার ৬% ছাপিয়ে ৬.২১ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। পাইকারি বাজারের মূল্যবৃদ্ধিও বেড়ে ২.৩৬% হয়েছে। যা চার মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থাৎ, একটা সময়ে সুদ কমার যে ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল, তা অন্তত আগামী কয়েক মাসের জন্য মিলিয়ে গিয়েছে। ফলে বাজার হতাশ। পণ্যের চাহিদা বাড়ানো এবং শিল্প-বাণিজ্যে প্রাণ ফেরানোর জন্য সুদ কমানো জরুরি। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের মত, খাদ্যপণ্যের দাম কমানো না গেলেও অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সুদ কমানো উচিত। মন্ত্রীর এই বক্তব্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের উপরে চাপ তৈরি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৪-৬ ডিসেম্বর শীর্ষ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি বৈঠকে বসবে। সেখানেই ঠিক হবে পরবর্তী দু’মাসের সুদের হার।

এতটা পতনের পরেও যে সব তথ্য কিছুটা আশা জোগাচ্ছে সেগুলি হল—

  • আমেরিকার সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চিন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের উপরে ৬০% পর্যন্ত শুল্ক বসাতে পারেন, এই ঘোষণায় সুদিন দেখতে পাচ্ছেন ভারতীয় রফতানিকারীরা।
  • আপাতত জাতীয় অর্থনীতিতে কিছুটা ঝিমুনি ভাব লক্ষ্য করা গেলেও ২০২৪ সালের ভারতের জিডিপি ৭.২% হারে বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস মূল্যায়ন সংস্থা মুডি’জ়ের। অক্টোরের বৈঠকে ঋণনীতি কমিটি একই পূর্বাভাস দিয়েছিল।
  • শিল্পকে চাঙ্গা করতে যে পরিমাণ আর্থিক উৎসাহ দেবে বলে চিন সরকার ঘোষণা করেছিল, তা যথেষ্ট না-ও হতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। ফলে সে দেশে পুঁজি ঢালার ব্যাপারে বিদেশি লগ্নিকারীদের উৎসাহ কমতে পারে।
  • টানা দেড় মাস সূচক নামলেও মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নি বেড়েছে। অক্টোবরে একুইটি ফান্ডগুলিতে নিট লগ্নি এসেছে ৪১,৮৮৭ কোটি টাকা। আগের মাসে ৩৪,৪১৯ কোটি।

এখনকার অনিশ্চিত বাজারে সাধারণ লগ্নিকারীরা যে সমস্ত কৌশল গ্রহণ করতে পারেন—

  • এসআইপি-তে লগ্নি চালানো।
  • একলপ্তে লগ্নির পরিকল্পনা থাকলে তা একাধিক কিস্তিতে করা।
  • ভাল শেয়ার এবং ফান্ড বাছাই করে অল্প অল্প করে পুঁজি ঢালা।
  • বাজারের পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা এবং সুযোগের সদ্ব্যবহার করা।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন
Advertisement