Investment

লগ্নির সাফল্যে দরকার সজাগ, সচেতন সিদ্ধান্ত

শেয়ার বা ঋণপত্রের মতো লগ্নি সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। চারপাশের পরিস্থিতি অনুযায়ী অদলবদল হয়। আর তার প্রভাব পড়ে লগ্নিকারীর পকেটে।

Advertisement
অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৭:২২
চারপাশের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে চটজলদি লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ।

চারপাশের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে চটজলদি লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া অনেক সহজ। —ফাইল চিত্র।

বিনিয়োগের বাজারে সফল হতে চারপাশের খবরাখবরে নজর রাখতে হবে। তাতেই থাকে উত্থানের বারুদ, পতনের জল। লক্ষ্য শুধু অর্থনীতি এবং শিল্পের গতিপ্রকৃতি সংক্রান্ত হলে চলবে না। চোখ থাকতে হবে বাজারকে প্রভাবিত করতে পারে, এমন সমস্ত কিছুতে। তার মধ্যে রাজনীতি, বিদেশনীতি, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সমাজ-সংস্কৃতি, আবহাওয়ার মতো নানা বিষয় রয়েছে। অর্থাৎ যাঁরা বাজারে লগ্নি করলে প্রতি দিন প্রতি ঘণ্টা সজাগ থাকতে হবে। নিয়মিত এই প্রক্রিয়ায় শুধু জ্ঞানের ভান্ডারই সঞ্চিত হবে না, সেই সঙ্গে বেড়ে যাবে সচেতনতাও। মোবাইল ফোনের দৌলতে কাজটা আর কঠিন নেই। নিমেষে প্রয়োজনীয় সব খবর চোখের সামনে খুলে যাবে। তার পরে ভেবেচিন্তে চারপাশের পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে চটজলদি লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া তুলনায় অনেক সহজ হয়ে যাবে।

Advertisement

শেয়ার বা ঋণপত্রের মতো লগ্নি সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ। চারপাশের পরিস্থিতি অনুযায়ী অদলবদল হয়। আর তার প্রভাব পড়ে লগ্নিকারীর পকেটে। ঝুঁকির লগ্নিতে পা মেলাতে হলে যে কোনও সময় লোকসানের জন্য তৈরি থাকতেই হয়। অল্পে ভেঙে পড়লে চলে না। কারণ ‘খেলাটা’ লম্বা মেয়াদের। তবে পকেটে চাপ যাতে অতিরিক্ত না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে সজাগ এবং সচেতন থাকার প্রয়োজনীয়তা এখানে অত্যন্ত বেশি।

এই প্রক্রিয়ার অন্যতম অঙ্গ, কিছু গুরুত্বপূর্ণ খবর কবে নাগাদ পাওয়া যেতে পারে তা আগেভাগে জেনে রাখা। সেটা শুধু ভারতের হলে চলবে না, বিশ্বায়নের দুনিয়ায় নজর রাখতে হবে চিন, আমেরিকা, ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া, রাশিয়া এবং ইউক্রেনে কী ঘটছে সে সবের উপরেও। সব মিলিয়ে খেয়াল রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধি, সুদের হার, শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রের বৃদ্ধি বা হ্রাসের হার, শিল্প সংস্থাগুলির আর্থিক ফল ইত্যাদি। খবর রাখার তালিকায় রাখতে হবে বিশ্ব জুড়ে শেয়ার সূচক, বিশ্ব অর্থনীতি, আমেরিকা, চিন-সহ বিভিন্ন দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, ভারত এবং আমেরিকার বন্ড ইল্ডেও। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, বর্ষা, খরা, বন্যা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বাজেট, জাতীয় উৎপাদন-সহ আরও এমন অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যা নজরে রাখলে লগ্নির জগতে সফল হওয়ার দরজা খুলে যেতে পারে।

যে সব খবর প্রকাশের দিন আগে থেকে জানা থাকে, সেগুলি হল—

  • আগের মাসের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার— পরের মাসের ১২ তারিখে।
  • পাইকারি মূল্যবৃদ্ধির হার— পরের মাসের ১৪ তারিখে।
  • এইচএসবিসির শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রের পিএমআই সূচক— আগের মাসের পরিসংখ্যান পরের মাসে।
  • রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটির বৈঠক ফেব্রুয়ারি, এপ্রিল, জুন, অগস্ট, অক্টোবর ও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে।
  • ভারতের শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ কোম্পানির ত্রৈমাসিক ফল— শেষ ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) বাদে প্রত্যেক ত্রৈমাসিক শেষের পরে ৪৫ দিনের মধ্যে। অর্থবর্ষ শেষের পরে ৬০ দিনের মধ্যে বেরোয় একসঙ্গে শেষ ত্রৈমাসিক এবং পুরো অর্থবর্ষের।

এ ছাড়া খেয়াল রাখা দরকার—

  • আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভের ফেডারাল ওপেন মার্কেট কমিটির বৈঠক হয় বছরে আট বার।
  • আবহাওয়া সংক্রান্ত খবর নিয়মিত পাওয়া যায় ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের (আইএমডি) সাইট থেকে।
  • ভারতীয় সময় সকাল ৭টা থেকে জানা যায় জাপান, হংকং, চিন এবং কোরিয়ার শেয়ার সূচকের গতিবিধি।
  • দুপুরের পর থেকে খুলতে থাকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানির বাজার।
  • ভারতে যখন সন্ধ্যে নামে, তখন খোলে আমেরিকার ন্যাসড্যাক, ডাও জোন্সের মতো শেয়ার সূচক।
  • টেলিভিশনের পাশাপাশি বিএসই, এনএসই, সেবি, অ্যামফি-সহ বেশ কিছু ওয়েবসাইটে থাকে লগ্নি সংক্রান্ত নানা তথ্য। সরকারি ঘোষণা জানা যায় অর্থ মন্ত্রকের সাইটে চোখ রাখলে।

গত সপ্তাহে যে সব গুরুত্বপূর্ণ খবর পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে ছিল—

  • চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ভারতের জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপি বৃদ্ধির হার কমে হয়েছে ৫.৪%। আগের বছর একই সময়ে তা ছিল ৮.১%।
  • বৃদ্ধির হার এতটা কমায় চড়া মূল্যবৃদ্ধি (৬.২%) সত্ত্বেও সুদ ছাঁটাইয়ের দাবি জোরালো হচ্ছে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

Advertisement
আরও পড়ুন