দানা বাঁধছে বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার বিরোধী আন্দোলন। —প্রতীকী চিত্র।
দেশজুড়ে ক্রমশই দানা বাঁধছে বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার বিরোধী আন্দোলন। এই নিয়ে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী মনোহর লাল খট্টরকে স্মারকলিপিও জমা দিয়েছে আন্দোলনকারীদের যৌথ মঞ্চ। তাতে বিবিধ সংগঠনের দাবি, জনস্বার্থ বিরোধী এই স্মার্ট মিটার বসানো অবিলম্বে বন্ধ হোক। কারণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত এই প্রিপেড মিটার না বন্ধ করলে ইউনিট ব্যবহার, তার দাম, মিটার ভাড়া, ফিক্সড চার্জ— সেই সব তথ্য বোঝা যাবে না। ফলে মানুষের পকেট ফাঁকা হবে। তবে অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও বিক্ষিপ্তভাবে স্মার্ট মিটার বসানো শুরু হয়েছে। তা নিয়ে বিবিধ অভিযোগও উঠছে। বাজেটে সরকারের দাবি, রাজ্যে এ পর্যন্ত ১.২৫ লক্ষ স্মার্ট মিটার লাগানো হয়েছে। মূলত সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলিতে। প্রশাসন সূত্র অবশ্য বলছে, সেই সংখ্যা প্রায় ১.৬৫ লক্ষ। বেশ কিছু ব্যক্তিগত ব্যবহারের।
প্রসঙ্গত, ২০২১-এ তৎকালীন মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদীর সঙ্গে বিদ্যুৎ দফতরের শীর্ষ-কর্তাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, কোনও সম্মতি ছাড়াই রাজ্যের সব সরকারি দফতরে স্মার্ট মিটার বসানো হবে। তা বসবে সব সংস্থা ও নির্দিষ্ট সীমার ওপর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বাড়িতেও। চার-পাঁচটি বেসরকারি সংস্থা দরপত্র দিয়ে রাজ্যে স্মার্ট মিটার বসানোর বরাত পায়। যদিও এই সীমা ঠিক কী, বাছাইয়ের মানদণ্ড কী এবং কত গ্রাহক সীমার উপরে, তা স্পষ্ট নয়।
অন্য দিকে, সিইএসসি তার এলাকায় স্মার্ট মিটার বসাতে পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক কমিশনের কাছে ২০২৩-এর শুরুতে আবেদন করে। কিন্তু সংস্থার পরিকাঠামো উপযুক্ত নয় বলে জানিয়ে তা খারিজ করে কমিশন। সংস্থা ফের আবেদন করেছে বলে জানা যায়নি। সিইএসসি-ও মন্তব্য করেনি।
রাজ্যে বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন অ্যাবেকা-র কর্তা সুব্রত বিশ্বাস জানান, গ্রাহক স্বার্থবিরোধী এই মিটার প্রায় সব রাজ্যই লাগাচ্ছে। বাংলায় বারাসত, মধ্যমগ্রাম, কল্যাণী-সহ শহরতলীর কিছু জায়গায় ব্যক্তিগত গ্রাহকের বাড়িতে তা লাগানোর অভিযোগ উঠেছে। বারাসত পুর এলাকার একাধিক গ্রাহকের দাবি, জোর করেই স্মার্ট মিটার বসানো হয়েছে। অথচ বিদ্যুৎ আইন ২০০৩ অনুসারে শুধু গ্রাহক চাইলেই তা বসানো যাবে। যদিও প্রশাসনের দাবি, যাঁরা চেয়েছেন, তাঁদেরই মিটার দেওয়া হয়েছে।
সুব্রতর দাবি, এই স্মার্ট মিটারে আগে টাকা দিয়ে পরে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে (প্রিপেড)। ফলে খরচ নিয়ে জবাবদিহি চাওয়ার পথ বন্ধ। প্রশাসনের দাবি, এতে গ্রাহকই বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করবেন। এখনও স্মার্ট মিটার প্রিপেড নয়। কিন্তু কে সারাক্ষণ মিটার দেখবেন, প্রশ্ন সুব্রতর। ইতিমধ্যেই রাজ্যে এর বিরুদ্ধে লড়াই জোরালো করতে প্রতিটি বিদ্যুৎ স্টেশনে গ্রাহকদের লিখিত আপত্তিপত্রও জমা দিচ্ছে অ্যাবেকা।
দেশের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের সংগঠন এআইইসিএ-এর সভাপতি স্বপন কুমার ঘোষ জানান, এই সব কিছু নিয়েই স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রী বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বেণুগোপাল ভাট বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশের পরে সব রাজ্যই স্মার্ট মিটার লাগাতে কার্যত উঠেপড়ে লেগেছে। গ্রাহকদের পথে বসানোর ক্ষেত্রে কোনও রাজনৈতিক বিরোধ নেই। তাই এই আন্দোলন।