নিয়ত পাল্টে যাওয়াই প্রযুক্তির ধর্ম। বিজ্ঞানের যে আবিষ্কার আজ গবেষণাগারে রয়েছে, কালই সে প্রযুক্তির হাত ধরে বাজারে চলে আসবে। এই পাল্টে যাওয়ার বড় প্রমাণ মোবাইল-প্রযুক্তি। গত কয়েক দশকে যে হারে মোবাইল প্রযুক্তির বদল ঘটেছে তা কল্পনাতীত। শুধু কথা বলা, এসএমএস পাঠানোর যন্ত্রটি হয়ে উঠেছে স্মার্ট। এক দিন যাতে ইন্টারনেট পাওয়াই ছিল মুশকিল, আজ সে মোবাইল ইন্টারনেট ছাড়া ‘মণি হারা ফণী’।
মোবাইল প্রযুক্তির দু’টি দিক রয়েছে। একটি মোবাইল যন্ত্রটি। প্রসেসর, র্যাম, ডিসপ্লে, ক্যামেরা, স্টোরেজ নিয়ে গড়ে ওঠা যন্ত্রটি দিনে দিনে উন্নতি করেই চলেছে। প্রসেসরের ক্ষমতা বাড়ছে, বেশি র্যাম ব্যবহার করা হচ্ছে, ডিসপ্লে সাধারণ থেকে ফুল-এইচডি হয়ে ফোর কে-র দিকে এগিয়ে চলেছে। বাড়ছে স্টোরেজও। পাশাপাশি, সংযোগের প্রযুক্তির উন্নত হচ্ছে। সেই উন্নয়নের ধাপগুলিকে ‘প্রজন্ম’ বা ‘জেনারেশন’ বা সংক্ষেপে ‘জি’ বলে চিহ্নিত করা হয়। মোবাইলের সংযোগ-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমরা এখন আছি ‘ফোর জি’-তে বা চতুর্থ প্রজন্মে। এবং সামনে আসছে ‘ফাইভ-জি’ বা পঞ্চম প্রজন্ম।
‘ফাইভ-জি’ আগের ‘ফোর-জি’-র মতোই সেলুলার নেটওয়ার্ক। এখানে সার্ভিসকে ছোট ছোট ভৌগোলিক এলাকায় ভাগ করে নেওয়া হয়। যাকে ‘সেল’ বলা হয়। মোবাইলগুলি ইন্টারনেট ও টেলিফোন নেটওয়ার্কের সঙ্গে বেতার তরঙ্গে যুক্ত থাকে। ‘ফাইভ-জি’-র মূল সুবিধা হল এর ব্যান্ডউইথ ‘ফোর-জি’-র থেকে অনেক বেশি হয়। ফলে ডাউনলোড স্পিডও অনেক বেশি হয়। এমনকি, এই ডাউনলোড স্পিড প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট ছুঁয়ে ফেলতে পারে। যা কেব্ল ব্রডব্যান্ডের সঙ্গে তুলনা করা যায়। শুধু মোবাইল নয়, এতে ল্যাপটপ, ডেস্কটপও মোবাইল নেটওয়ার্কে জুড়ে যেতে পারে। ল্যাপটপ, ডেস্কটপগুলিকে নিজেদের মধ্যেও জুড়ে দেওয়া সম্ভব। তবে এখনকার অধিকাংশ মোবাইল ‘ফাইভ-জি’ ব্যবহারের উপযুক্ত নয়।
আরও পড়ুন : শাওমির প্রথম ৫জি ফোন, দশভূজার আরাধনায় হাতে থাকুক এমআই-১০
শুধু মোবাইল নয়,‘ফাইভ-জি’ ল্যাপটপ, ডেস্কটপও মোবাইল নেটওয়ার্কে জুড়ে যেতে পারে।ছবি: শাটার স্টক।
বেশি ব্যান্ডউইথ পাওয়ার জন্য ‘ফাইভ-জি’ প্রযুক্তিতে উচ্চ কম্পাঙ্কের বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করতে হয়। বিজ্ঞান বলে, তরঙ্গের কম্পাঙ্ক যত বাড়ে, তার তরঙ্গদৈর্ঘ্য তত কমে। আরও ছোট ছোট ‘সেল’-এর দরকার লাগে। ‘ফাইভ-জি’ প্রযুক্তি দিতে গিয়ে সাধারণত কম, মধ্যম ও বেশি— এই তিনটি আলাদা কম্পাঙ্ক ব্যবহার করতে হয়। প্রত্যেকটির জন্য আলাদা কম্পাঙ্কের তরঙ্গদৈর্ঘ্যও আলাদা। এর জন্য আলাদা আলাদা ‘সেল’-এ এবং অ্যান্টেনা দরকার। এবং এর থেকে আলাদা আলাদা ডাউনলোড স্পিড পাওয়া যায়। সব চেয়ে কম ৬০০-৭০০ মেগাহার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। ডাউনলোডের স্পিড থাকে প্রতি সেকেন্ডে ৩০-২৫০ মেগাবাইটের থেকে সামান্য বেশি। অনেকটা প্রায় ‘ফোর-জি’-তে ব্যবহৃত কম্পাঙ্কের সমান। এখানকার ‘ফোর-জি’ টাওয়ারগুলির মতোই কভারেজ পাওয়া যায়। মধ্যম মাত্রার তরঙ্গদৈর্ঘ্য হিসেবে ২.৫-৩.৭ গিগাহার্জ ব্যবহার করা হয়। এতে ডাউনলোড স্পিড থাকে প্রতি সেকেন্ডে মোটামুটি ১০০-৯০০ মেগাবাইট। এ ক্ষেত্রে মোবাইল টাওয়ারগুলি চার পাশে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত কভারেজ দিতে পারে। আর উচ্চমাত্রায় ২৫-৩৯ গিগাহার্জ কম্পাঙ্কের তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে টাওয়ারগুলির কভারেজ কমে আসে, কারণ তরঙ্গদৈর্ঘ্য মিলিমিটার ব্যান্ডে পৌঁছে যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ির দেওয়াল বা জানলা ভেদ করেও যেতে পারে না। কিন্তু ইন্টারনেটে ডাউনলোড স্পিড পৌঁছে যায় প্রতি সেকেন্ডে কয়েক গিগাবাইট পর্যন্ত। টেলিকম সংস্থাগুলি সাধারণত মধ্যম মাত্রার কম্পাঙ্কের তরঙ্গদৈর্ঘ্য বেশি ব্যবহার করবে। তবে এর জন্য আরও টাওয়ার বসাতে হবে। আর এই পরিকাঠামো সম্প্রসারণের জন্য অনেক অর্থের বিনিয়োগ করতে হবে টেলিকম সংস্থাগুলিকে।
আরও পড়ুন : মোবাইলের স্ক্রিনে আঙুল ছোঁয়ান, যন্ত্র করবে ঘর ঝাড়পোঁছ
ইন্টারনেটের স্পিড বাড়লে শিক্ষা থেকে বিনোদন— এমন অনেক কিছু করা সম্ভব যা এখন করা যায় না। তথ্যের আদানপ্রদান অনেক সহজ হয়ে যাবে। দূর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। প্রযুক্তি সংস্থাগুলি ‘ফাইভ জি’ ব্যবহার করে স্বয়ং-নিয়ন্ত্রিত গাড়ির চালিয়েও দেখিয়েছে। এর মধ্যেই ‘জিও’ ঘোষণা করেছে তাদের ‘ফাইভ জি’-র পরিকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বাজারে কয়েকটি সংস্থার ‘ফাইভ জি’ ফোনও এসে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy