Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

পুজোয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের আসর বসত হরকুটিরে

পাড়ায় আজও তিনটি পারিবারিক পুজো হয়, যার মধ্যে অন্যতম হরকুটিরের পুজোটি।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ১৮:৫৭
Share: Save:

ইতিহাস-প্রসিদ্ধ পাথুরিয়াঘাটা স্ট্রিট। সেকালের এক অভিজাত, বনেদি পাড়া।রবীন্দ্র সরণির অন্তহীন কোলাহল, রাস্তার দু’পাশে ঔপনিবেশিক স্থাপত্য, টানা রিকশার পরিচিত আওয়াজ আর সারিবদ্ধ সেকেলে বাড়িগুলি যেন অতীতের নীরব সাক্ষী। এই পাড়াতেই কয়েক শতাব্দী ধরে বেশ কিছু অভিজাত পরিবারের বসবাস। পাড়ায় আজও তিনটি পারিবারিক পুজো হয়, যার মধ্যে অন্যতম হরকুটিরের পুজোটি।

এই পরিবারের আদি পুরুষ কেশব চক্রবর্তী।তাঁর উত্তরসূরী আনারপুর নিবাসী রাধাকান্ত চট্টোপাধ্যায় পাথুরিয়াঘাটায় এসে একটি কুঁড়েঘরে বসবাস শুরু করেছিলেন।রাধাকান্ত সেকালে নুনের ব্যবসায় বহু অর্থ উপার্জন করেছিলেন। সেই উপার্জনের টাকায় যে বাড়িটি নির্মাণ করেন, তারই নাম হরকুটির। পরিবার সূত্রে জানা যায়, রাধাকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই বাড়িতে পারিবারিক পুজো শুরু। বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত আছেন সিদ্ধেশ্বর মহদেব এবং শ্রীধর নারায়ণ শিলা। প্রতিদিনই হয় অন্নভোগ।শোনা যায়, আড়াইশোটি নৌকা ছিল রাধাকান্তের।তাঁর ছেলে ছিল না কোনও। মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পিতামহ ঈশানচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদি নিবাস ছিল বর্ধমানের কেশেরা বৈকুণ্ঠপুরে। ঈশানচন্দ্রের পুত্রের নাম গঙ্গানারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি ছিলেন বিদ্যায় ও মৃদঙ্গে পারদর্শী। কদৌসিংহের কাছে মৃদঙ্গের তালিম নেন।গঙ্গানারায়ণের পুত্র হরপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা, সংস্কৃত, তৈলঙ্গি, উর্দু, ফার্সি, ইংরেজি,ফরাসী, লাতিন ইত্যাদি ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি শ্রীরামকৃষ্ণের সংস্পর্শেও আসেন।এ ছাড়া তিনি ছিলেন সঙ্গীতে বিশেষ পারদর্শী।

রাধাকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগেই এই বাড়িতে পারিবারিক পুজো শুরু।

হরপ্রসাদ খান্ডারবাণী ধ্রুপদী।গঙ্গানারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ধ্রুপদ, সরস্বতী বাইয়ের কাছে রাগসঙ্গীতের তালিম লাভ করেন তিনি। এ ছাড়া ব্যান্ড মাস্টার নারায়ণচন্দ্র পালের কাছে হয় তাঁর ইংরেজি নোটেশন শিক্ষা। এ ছাড়া কোচবিহার রাজদরবারের গায়ক কৃষ্ণধন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে সঙ্গীতের তালিম নেন। সুপ্রসিদ্ধ যন্ত্রী হরপ্রসাদ বীণা বাদনে পারদর্শী ছিলেন।জনশ্রুতি, সঙ্গীত বিশারদ মৌলা বক্স তাঁর সঙ্গে সঙ্গীত বিষয়ে আলোচনাও করতেন।

আরও পড়ুন: বিজয়িনীর হাসি আর আয়ত চোখের স্নিগ্ধতায় অনন্যা মাতৃমূর্তি

এ বাড়ির পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালানে ইউরোপীয় এবং ইসলামিস্থাপত্যের ছাপ স্পষ্ট।দালানের সামনে খিলানের উপরেকাঠের অলঙ্করণযুক্ত ব্র্যাকেটবা শুঁড়োআজও চোখে পড়ে।চকমেলানো বাড়ির মধ্যে রয়েছে প্রশস্ত প্রাঙ্গণ।

এ বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর পরের দিন। দেবীর বোধন হয় প্রতিপদের দিন।পুজো হয় কালিকাপুরাণ মতে।দেবী দুর্গার সংসারে লক্ষী-সরস্বতীর কোনও বাহন থাকে না।পুজোর ভোগে থাকে খিচুড়ি, সাদাভাত, পাঁচভাজা, বিভিন্ন রকম তরকারি, পায়েস ও চাটনি। রাতে লুচি ও ভাজা দেওয়া দেওয়া হয়। দশমীতে দেওয়া হয় পান্তা-ভাত।দশমীতে মাছ-ভাত খেয়ে সধবা মহিলারা দেবীকে বরণ করেন।গৃহকর্ত্রী বরণেরপরে আর দেবীর মুখ দেখেন না। তিনি একটি ঘরে দেবীর উল্টোদিকে একটি আসনে বসে একটি পাত্রে দইয়ের মধ্যে হাত ডুবিয়ে বসে থাকেন, যতক্ষণ না পর্যন্ত বিসর্জন সুসম্পন্ন হয়।এই পরিবারে আজও বজায় আছেকনকাঞ্জলি প্রথা।

পরিবারের সদস্য অর্চিষ্মান রায় বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, তাঁদের পুজোয় প্রতিমাশিল্পীরা বংশ পরম্পরায় আসেন শান্তিপুর থেকে। তেমনই ডাকের সাজের শিল্পী ভূতনাথ মালাকার আসেন বর্ধমানের পাটুলি থেকে। ঢাকিরাওবংশপরম্পরায় আসেন জয়রামবাটি থেকে।

এ বাড়িতে কাঠামো পুজো হয় জন্মাষ্টমীর পরের দিন।

অতীতে মাঝেমধ্যেই বসত ধ্রপদী সঙ্গীতের আসর। পুজোতেও তার ব্যতিক্রম ছিল না।সেকালে বৈঠকখানায় পাতা হত সাদা চাদর, অতিথিরা তার উপরে বসতেন। আতরদানে রাখা থাকত দামি আতর,যা অতিথিদের গায়ে ছেটানো হত। গাড়ির আকৃতির পানের বাক্সে থাকত সুগন্ধী পান। এক সময় অনুষ্ঠানে আসতেন বিখ্যাত শিল্পীরা। পরবর্তী কালে বাড়ির সদস্যরাও অংশগ্রহণ করতেন। আসরে ছেলে ও মেয়েদের বসার আলাদা ব্যবস্থা করা হত- বলছিলেন পরিবারের মেয়ে সুরীতি রায় বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: সখীবেশে রানি রাসমণির পুজোয় আরাধনা করেন শ্রীরামকৃষ্ণ

এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে যদুভট্টের স্মৃতি। একদা তিনি এই বাড়িতে ভিয়ানের ব্রাহ্মণ হয়ে এসেছিলেন। পরে সঙ্গীতে তাঁর বিরল প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে তাঁকে উপযুক্ত সম্মান দেয় পরিবার। এখন মহালয়া কিংবা পঞ্চমীর দিনে ঠাকুরদালানে বসে কীর্তনেরআসর। এই বাড়িতে এসেছিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, পরবর্তী সময় কালে মোহনানন্দ ব্রহ্মচারী।

করোনা পরিস্থিতিতে এ বার অবশ্য হরকুটিরের পুজোয় বাইরের লোকের আনাগোনা বন্ধ থাকছে। পরিবার সূত্রে জানা গেল, এ বছর পুজোটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy