Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2020

দুই জমিদারি এক হয়ে এখন দুই পুজো সিংহরায় পরিবারে

বাংলার নবজাগরণে নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পরিবার। তার মধ্যে বহুবিবাহ প্রথা রদ এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনের পক্ষে ছিল তারা।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ১৭:০০
Share: Save:

বর্ধমান শহরের ব্যস্ততা আর শহুরে কোলাহল থেকে বেশ কিছুটা দূরে সবুজে ঘেরা নিরিবিলি চকদিঘি। শরতের অকৃত্রিম রূপ য্নে এখানে প্রকৃতির পরতে পরতে মিশে আছে। চকদিঘির পুজো মানেই সিংহরায় পরিবারের দু’টি পুজো। থিমের চাকচিক্য আর আলোর রোশনাই নয়, আভিজাত্যের সৌরভ আর সাবেক রীতি রেওয়াজ মেনে দেবীর আবাহন এখানকার পুজোর মূল আকর্ষণ।

সেই বারো ভুঁইয়াদের আমলে মহারাজা মানসিংহ সিংহের সঙ্গে চকদিঘির সিংহরায় পরিবারের বাংলায় আগমন দশহাজারি মনসবদার হিসেবে। যদুবংশীয় রাজপুত পরিবার- অতীতে যাদের বাস ছিল হুগলির বেড়াবেড়িতে। পরে ১৭২০ নাগাদ এই পরিবারের সদস্যরা বর্ধমানের চকদিঘিতে বসবাস শুরু করেন। এই পরিবারের পূর্বপুরুষ হিসেবে রাজা সাহাদেও এবং দুই কিংবদন্তী যোদ্ধা আলহা এবং উদলের নাম জড়িয়ে আছে। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সময়ে এই পরিবার ‘রায়’ ও পরে ‘রাজা’ উপাধি লাভ করেছিল। ইংরেজ আমলে মেলে ‘রাজা বাহাদুর’ খেতাব।

ইংরেজ আমলে মেলে ‘রাজা বাহাদুর’ খেতাব।

বাংলার নবজাগরণে নানা কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই পরিবার। তার মধ্যে বহুবিবাহ প্রথা রদ এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনের পক্ষে ছিল তারা। এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্মৃতিও। তাঁদেরই উদ্যোগে চকদিঘিতে অ্যাংলো-সংস্কৃত অবৈতনিক স্কুল তৈরি হয়েছিল ১৮৫৭ নাগাদ। সেই স্কুলটির বর্তমান নাম সারদাপ্রসাদ ইনস্টিটিউট(অবৈতনিক)। পরিবারের বহুমূল্য বেশ কিছু শিল্পসামগ্রী ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং অন্যান্য সংগ্রহশালায় স্থান পেয়েছে। চকদিঘি বাগানবাড়িতে ব্রিটিশ শাসনকালে তৎকালীন গভর্নর লর্ড কার্জন, লর্ড এলগিন প্রমুখ এসেছিলেন। এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিও। তাঁর ‘ঘরে-বাইরে’ ছবির শুটিং হয়েছিল চকদিঘির বাগানবাড়িতেই।

পরিবারের বর্তমান সদস্য অম্বরীশ সিংহরায় জানালেন, তাঁদের একটি নয়, দু’টি দুর্গাপুজো হয়। একটি হয় চকদিঘির বাগানবাড়িতে, অন্যটি দেড় কিলোমিটার দূরে মণিরামবাটিতে। চকদিঘির বাগানবাড়ির পুজোটি ২৮৬ বছরের পুরনো, আর মণিরামবাটির পুজোর বয়স প্রায় তিনশো বছর। দু’টি পুজোই হয় প্রতিপদাদি কল্পে। অর্থাৎ, মহালয়ার পরের দিন থেকে শুরু হয় কল্পারম্ভ, চণ্ডীপাঠ। প্রতিমার গায়ের রং শিউলির বোঁটার মত। বাগানবাড়ির পুজো শুরু করেন ভৈরব সিংহরায়। মণিরামবাটির পুজো শুরু হয়েছিল বৃন্দাবন সিংহরায়ের উদ্যোগে।

আরও পড়ুন: প্রতিমার পায়ে বেঁধে দেওয়া হয় গৃহকর্ত্রীর মাথার চুল!

এই পরিবারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সত্যজিৎ রায়ের স্মৃতিও।

অতীতে মণিরামবাটি ছিল পৃথক একটি জমিদারি। এই পরিবারের সদস্য ললিতমোহন সিংহরায়ের সঙ্গে বিয়ে হয় মণিরামবাটি জমিদারবাড়ির একমাত্র মেয়ে প্রিয়ম্বদা দেবীর। পরবর্তী কালে দুই জমিদারি এক হয়ে যায়। তার পর থেকে দু’টি পুজোই চকদিঘির সিংহরায় পরিবারের উদ্যোগে হয়ে আসছে। অতীতে পুজোয় পশুবলি হলেও বর্তমানে সে প্রথা উঠে গিয়েছে। এখন বলির পরিবর্তে সন্দেশ নিবেদন করা হয়। এখানে পুজো হয় যজুর্বেদীয় মতে। পুজো করেন কণৌজের ব্রাহ্মণরা। এই দুই পরিবারে গত সাত পুরুষ ধরে প্রতিমা নির্মাণ করে চলেছেন একই মৃৎশিল্পীর পরিবার। তবে একই শিল্পীর তৈরি হলেও দু’টি প্রতিমা দেখতে কিন্তু আলাদা।

পুজোয় নবপত্রিকা স্নান করানো হয় বাড়ির পুকুরঘাটে। পুজোয় আঠারোটি থালায় নৈবেদ্য সাজানো হয়। দু’বেলাই দেওয়া হয় ঘিয়েভাজা লুচি, সন্দেশ। দশমীর দিন প্রতিমার বরণের পরে গৃহকর্তা বৈঠকখানাবাড়ি পর্যন্ত দেবীকে এগিয়ে দিয়ে আসেন। এর পরে সাবেক রীতি মেনে বৈঠকখানাবাড়ির গদিতে বসেন তিনি। দশমীতে এই পরিবারে সিঁদুরখেলা হয় না। দশমীর পরের দিন হয় সত্যনারায়ণ পুজো ও দরিদ্রনারায়ণ সেবা। তবে এ বছর করোনার জন্য পুজোটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন: প্রতিমার সামনে নাচগানে মাতে বৈষ্ণবদাস মল্লিক বাড়ি

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy