Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2020

মেয়ের কথা রাখতেই শুরু হয়েছিল সোনার দুর্গাবাড়ির পুজো

কলকাতা শহর গড়ে ওঠার পর থেকেই শহরের কাছাকাছি বেহালায় বহু বর্ধিষ্ণু পরিবার বসতি স্থাপন করে।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০২০ ০৫:০০
Share: Save:

বেহালা ট্রামডিপোর অদূরে কিছুটা এগোলেই ব্রাহ্মসমাজ রোডে মুখোপাধ্যায় পরিবারে রয়েছে প্রাচীন এক দুর্গামূর্তি। এলাকায় তা সোনার দুর্গাবাড়ি নামেই পরিচিত।সেই বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে যেতে এখনও অজান্তেই পথচলতি মানুষের হাত চলে যায় কপালে।অতীতে এই বেহালাই ছিল এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম।আজকের জনবহুল, ঘনবসতিপূর্ণ বেহালাকে দেখে অবশ্য তার অতীত চেহারা কল্পনা করাও কষ্টসাধ্য। কলকাতা শহর গড়ে ওঠার পর থেকেই শহরের কাছাকাছি বেহালায় বহু বর্ধিষ্ণু পরিবার বসতি স্থাপন করে। মুখোপাধ্যায় পরিবারও ছিল তাদের মধ্যেই।

এই প্রতিটি পরিবারেই দুর্গাপুজোর সূচনা নিয়ে কোনও না কোনও কাহিনি জড়িয়ে আছে।সোনার দুর্গাবাড়িওতার ব্যতিক্রম নয়।জানা যায়, বংশের আদিপুরুষ জগৎরাম মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে জগত্তারিণী দেবী একবার তাঁর মামাবাড়িতে দুর্গাপুজোয় নিমন্ত্রিত হন। কিন্তু সেখানে গিয়ে যথাযথ আদর-আপ্যায়ন না পেয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে এসে বাবার কাছে বায়না ধরেন সেই বছরই বাড়িতে দুর্গাপুজো শুরু করতে হবে। সেদিন ছিল মহাষ্টমী। পরের দিন নবমী পুজো।এক রাতের মধ্যেতার সব আয়োজন অসম্ভববলে সেবার ঘটে-পটেই পুজো হয়েছিল। সালটি ছিল ১৭৭৯। পরের বছর থেকেই মৃন্ময়ী প্রতিমা পুজো শুরু হয় মুখোপাধ্যায় বাড়িতে।

বল্লাল সেনের সমসাময়িক শ্রীহর্ষ দেবের বংশধর জগৎরাম মুখোপাধ্যায়। জগৎরামেরপ্রপৌত্র যদুনাথ মুখোপাধ্যায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিলেন।তিনিই ঢাকার ঢাকেশ্বরী দেবীর মূর্তির অনুরূপ একটি অষ্টধাতুর মূর্তি নিজের বাড়িতে স্থাপন করেন ১৮৬৯ সালে। নামকরণ করেন জগত্তারিণী সোনার দুর্গা। ক্রমে এই পরিবারের দুর্গামূর্তি সোনার দুর্গা বলেই পরিচিতি লাভ করে।

আরও পড়ুন: গঙ্গাস্নানের পরে পুজোর কাজে অনুমতি মেলে মুন্সিরহাট মল্লিকবাড়িতে

সারাবছরই ভোগরাগ-সহ নিত্যপুজা হয়।

এই পরিবারের আদি নিবাস ছিল যশোর জেলার ঝিঁকরগাছার সাহারসা গ্রামে। যশোর থেকে এসে মুখোপাধ্যায় পরিবার চাণকে (বর্তমানের ব্যারাকপুরে) বসবাস শুরু করেন। জগৎরাম চাণকেথাকাকালীন একবার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আরোগ্য লাভ না করায়তাঁকে মৃত মনে করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়া হয়। ভাসতে-ভাসতে তিনি আদি গঙ্গার তীরে একটি জায়গায় পৌঁছন এবং উদ্ধারকারীরা তাঁর প্রাণ বাঁচান।তখন থেকেই তিনি বেহালা অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন এবং পরে হালদার পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেন।

পারিবারিক ঠাকুরদালানে সারাবছর দেবীর অধিষ্ঠান। দেবীর অষ্টধাতুর বিগ্রহটির উচ্চতা প্রায় দুই ফুট। টানা টানা চোখ, সাবেক গঠন, পৌরাণিক সিংহ মূর্তিটির প্রাচীনত্বের প্রমাণ দেয়। অতীতে চালচিত্র না থাকলেও পরবর্তীকালে সুদৃশ্য চালচিত্রে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশের অবয়ব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।পুজোর সময় বেনারসি শাড়ি ও স্বর্ণালঙ্কারেদেবীকে সাজানো হয়।

আরও পড়ুন: পুজো শেষে দেবীর মুকুট পরানো হয় বেতাইচণ্ডীকে​

সারাবছরই ভোগরাগ-সহ নিত্যপুজা হয়। মহালয়ার পরের দিন থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ।পুজো হয় তন্ত্রোক্ত বিধিতে। নবমীতে হয় কুমারী পুজো। বাড়ির রীতি অনুসারে সন্ধিপুজো হয়না। আগে মোষ বলি হলেও বর্তমানে পাঁঠা বলির প্রথা চালু আছে।

পুজোর দিনগুলোয় দেবীকে নানাপ্রকার ভোগ নিবেদন করা হয়। সকালে খিচুড়ি ভোগ, দুপুরে অন্নভোগ এবং সন্ধ্যায় শীতল ভোগ।শীতল ভোগে লুচি দেয়া হয়।অন্নভোগে থাকে সাদা ভাত, শুক্তো,আটভাজা, বাঁধাকপির তরকারি, মাছভাজা, মাছেরঝোল, ছেঁচকি, শোলমাছ পোড়া, পেঁপের চাটনি ইত্যাদি।দশমীর দিন পান্তাভাত, মাছেরঝোল, মাছভাজা ও চালতার টক।সপ্তমী থেকে নবমী থাকে বিশেষ নৈবেদ্য।নৈবেদ্যরচালের উপরে রাখা হয় নারকেল-সন্দেশ যার প্রচলিত নাম ‘মাথার খাবার’। দশমীর দিন নবপত্রিকা বিসর্জন দেওয়া হয়।

কালের গতিতে অনেক কিছুই হারিয়ে যায়। শুধু বংশ পরম্পরায় থেকে যায় কিছু ঐতিহ্য। সোনার দুর্গাবাড়ির বর্তমান সদস্যরা সেই সাবেক রীতি এবং আচার অনুষ্ঠান টিকিয়ে রাখতেই চেষ্টা করে চলেন।

ছবি: পরিবার সূত্রে পাওয়া।

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 2020 Durga Puja Special Durga Puja Nostalgia Durga Puja Celebration Behala Sonar Durga
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy