Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2019

ঘোষবাড়ির অন্দরমহলে দুর্গোৎসবের ধূপটুকুও সুগন্ধি পিষে তৈরি হয়

পুজোর প্রসাদে থাকবেই অসময়ের ফল।

সায়ন্তনী সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:০০
Share: Save:

বহু বছর আগের কথা। হুগলির কাছে সমৃদ্ধ গ্রাম পরঞ্চপুর। এই গ্রামের জমিদারবাড়ির ঘোষ পরিবারে সাজ সাজ রব। দেবী মা আসছেন বাড়িতে। যদিও পুজো আসতে দেরি আছে কিছুদিন, কিন্তু এই বাড়িতে ঠাকুর আসার সময় হয়ে গিয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রাম, ভাল কারিগর মেলে না এখানে। তাই কলকাতা থেকে ঠাকুর দো মেটে করে নিয়ে আসা হয়। ঠাকুর তৈরির বাকি কাজ অবশ্য গ্রামেই হয়।এই গ্রামের এটাই সব থেকে বড় পুজো। সারা বছর মানুষ অপেক্ষা করে থাকে মায়ের মুখ দেখবে বলে। গঙ্গার তুমুল হাওয়া আর কালো মেঘ মেখে বিন্দুর মত নৌকা আস্তে আস্তে স্পষ্ট হচ্ছে। ছেলে বুড়োর দল ভিড় করেছে ঘাটে। আজ বড় আনন্দ, মা আসছেন গ্রামে।

এ সব বহু বছর আগের কথা। ১৮৫৬ সালে এই হুগলি থেকে কলকাতায় এই পুজো নিয়ে এলেন বাবু গিরিশচন্দ্র ঘোষ। ইংরেজদের সঙ্গে তাঁর বেশ দহরম মহরম। গ্রাম থেকে শহরে এসে চাকরি খুঁজতে গিয়েছিলেন এক সাহেবের কাছে। কথাবার্তা যখন পাকা, তখনই মাথায় এল ব্যবসার পরিকল্পনা। তিনি শুরু করলেন জাহাজ কেনা বেচার ব্যবসা। কিছুদিনের মধ্যেই ভাগ্য খুলে গেল তাঁর। যাতে হাত দিতেন তাই সোনা হয়ে যেতে লাগল। বিবেকানন্দ রোডের কাছে বাড়ি কিনে থিতু হলেন তিনি। তখনই পুজো নিয়ে এলেন কলকাতায়। যাঁর কৃপায় আজ দু’ হাতে উপার্জন করছেন তাঁকে গ্রামের বাড়িতে ফেলে রাখতে মন চাইল না। এখনও সেই পুরনো নিয়ম মেনে ঘোষবাড়ির ঠাকুর তৈরি হয় কুমোরটুলিতে। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজো হয় সেখানেই। পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় সেদিন থেকে। পুরনো নিয়ম মেনে ঘোষবাড়িতে পুজোর ধূপ, প্রদীপের সলতে, দীপ, কাঠি কোনও কিছুই বাইরে থেকে কেনা হয় না। সব তৈরি হয় বাড়িতে। জন্মাষ্টমীর পর সুগন্ধি মশলা পিষে, শুকিয়ে ধূপ তৈরি করার কাজ শুরু করে দেন বাড়ির সবাই।

সন্ধিপুজোর পরিবর্তে এই পরিবারের রীতি ‘কল্যাণী পুজো’

আরও পড়ুন : এ বছর প্রতিমার সাজে পুরনো ঘরানা ফিরিয়ে আনছে শোভাবাজার রাজবাড়ি​

পুরনো বাড়ির বিশাল ছাদ জুড়ে দেওয়া হয় নানা রকম বড়ি। শুরু হয়ে যায় সলতে পাকানোর কাজও। মহালয়ার চার পাঁচদিন আগে মা বাড়িতে আসেন দো মেটে হয়ে। রং করার পর অন্যান্য কাজ শেষ করে মহালয়ার দিন প্রতিমাকে চৌকিতে তোলা হয়। এর পর দেবীকে পরানো হয় ডাকের সাজ। তিনটি চালা অর্থাৎ মঠচৌরি পদ্ধতিতে ঠাকুর তৈরি হয় এখানে। মা দুর্গার চালে কালী ঠাকুর, শিবের বিয়ে আর দশমহাবিদ্যার পটচিত্র থাকে। ডানদিকে সরস্বতী ঠাকুরের চালায় থাকে রাধাকৃষ্ণ ও অসুরের সঙ্গে যুদ্ধরত দেবীর ছবি, লক্ষ্মীর চালায় রাম সীতার ছবি। পুজো হয় সম্পূর্ণ শাক্ত মতে। দেবীর বোধন হয় ষষ্ঠীর দিন। সেই দিন থেকেই চণ্ডীপাঠ শুরু হয়ে যায়। পুজোর প্রতিদিনই কুমারী পুজো হয় বাড়িতে। তবে অষ্টমীর দিন সন্ধিপুজো হয় না । তার পরিবর্তে হয় কল্যাণী পুজো। বাড়ির সব সদস্যদের নামে পুজো দেওয়া হয়। সন্ধিপুজো না হলেও ১০৮ টি প্রদীপ জ্বেলে সাজিয়ে দেওয়া হয় ঠাকুরের সামনে। প্রদীপের আলোয় ঝলমল করে ওঠে মায়ের মুখ। অষ্টমীর আরতি দু’বার হয়। সেই সঙ্গে হয় ধুনো পোড়ানো। এই বাড়িতে ১০৮ টি চাল আর ১০৮ টি দূর্বা দেবীকে দেওয়া হয় পুজোর তিনদিন।আরও একটি রীতি হল, শঙ্খ বা চন্দনবাটার চাপে ধান থেকে ২৮ টি চাল বার করে তা আলতাপাতায় মুড়ে দূর্বার সঙ্গে উৎসর্গ করা হয় লক্ষ্মী আর সরস্বতীকে। এই পরিবারের গৃহদেবতা রাধাকৃষ্ণ জিউ। পুজোর সময় ঠাকুরকে নিয়ে এসে দুর্গার পাশে বসানো হয়। দেবীর সঙ্গে প্রতিদিন পূজিত হন তিনিও।

তাল, কাঁঠাল বা আম, পুজোয় উৎসর্গ করা হবেই অসময়ের কোনও ফল

একসময় পরিবার অনেক বড় ছিল, পুজোর আগে আত্মীয়স্বজনও চলে আসতেন। ভরে যেত বাড়ি। সেই সময় ঠাকুরকে মিষ্টি ভোগ দেওয়া হত দুই মণ, তিন মণ করে। বাড়ির সব মেয়েরা হাত লাগাতেন কাজে। এখন শূন্য বাড়ি । তাও প্রতি বছর চন্দ্রপুলি, ছাপা সন্দেশ, তিন চার রকমের নাড়ু, রসগোল্লা, তিন চার রকম খাজা, গজা, রসকড়া, মালপো তৈরি করেন বাড়ির লোকেরাই। ষষ্ঠীর দিন ভিয়েন বসে। তৈরি হয় মিহিদানা, বোঁদে, পেড়া, দরবেশ। অন্নভোগ হয় না। প্রতিদিন সবরকম ফল, লুচি মিষ্টি দেওয়া হয় ঠাকুরকে। রাতে দেওয়া হয় ক্ষীর অথবা দই। ঘোষবাড়িতে পুজোর তিনদিন অসময়ের ফল দিতেই হয় ঠাকুরকে। কোনওদিন তাল,কোনওদিন কাঁঠাল কোনওদিন আবার আম দেওয়া হয় ঠাকুরকে। এছাড়াও সিধে দেওয়া হয় বিরাট মাটির থালায় সব রকম মশলা আনাজপাতি দিয়ে।

আগে এই বাড়ির পুজোয় অষ্টমীর দিন নিয়ম করে দল বেঁধে বারবণিতারা আসতেন পুজো দেখতে। শোনা যায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের কানে সে কথা ওঠায়, তিনি নিজে এই বাড়িতে পুজো দেখতে এসে বাড়ির কর্তাদের অনুরোধ করেন পুজোর দিন অন্তত এঁদের আসা যেন কখনও আটকানো না হয়।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy