Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Durga Puja 2019 Ananda utsav 2019 Durga Puja Celebration

তিনদিনই কুমারীপুজো হয় বাকসার চৌধুরীদের ঠাকুরদালানে

রাধাগোবিন্দের সঙ্গে দুর্গাপুজোর নিবিড় সম্পর্ক এই বাড়িতে।

সায়ন্তনী সেনগুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৬:০৯
Share: Save:

চৌধুরি পরিবারের প্রথম উল্লেখযোগ্য পুরুষ ছিলেন বিজয় সেনের সভাসদ লালাধর বিষ্ণু। বারো ভূঁইয়ার সঙ্গে মোগল সম্রাটের বিরোধ যখন চরমে তখন এঁরই উত্তর পুরুষ জটাধারী বিষ্ণু হুগলির শিয়াখালায় এসে বসবাস করতে শুরু করেন। জটাধারী বিষ্ণুর পুত্র বানীনাথ বিষ্ণু ছিলেন গৌড়েশ্বরের উজির। শোনা যায় গৌড়েশ্বরই তাঁকে চৌধুরী উপাধি দেন । বানীনাথের প্রপৌত্র রূপনারায়ণ চৌধুরী ছিলেন এই পরিবারের উজ্জ্বলতম ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন বর্ধমান মহারাজের দেওয়ান। রাজকাজ করতে করতেই আরবি ফার্সি এবং সংস্কৃত ভাষায় বুৎপত্তি অর্জন করেন রূপনারায়ণ। ১১৭৬ এ যখন ভয়ানক মন্বন্তর থাবা বসিয়েছে বাংলার বুকে, রোগে অনাহারে গ্রামের পর গ্রাম উজাড় হয়ে যাচ্ছে সেই সময় রূপনারায়ণ সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য অকাতরে অন্নদানের ব্যবস্থা করেন। সেই সঙ্গে হরিপাল এবং আরও কিছু জায়গায় পুকুর খনন করান। শোনা যায় মহারাজা নন্দকুমারের মিত্রস্থানীয় ছিলেন তিনি। জালিয়াতির অভিযোগে যখন নন্দকুমার অভিযুক্ত সেই সময় নন্দকুমারের সহায়ক হয়ে দাঁড়ান রূপনারায়ণ চৌধুরী। যদিও নন্দকুমারকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। নন্দকুমারের মৃত্যুর পর মামলা যখন প্রিভি কাউন্সিলে যায় তখনও এতে অগ্রণী ভূমিকা নেন তিনি। রূপনারায়ণ চৌধুরী পরবর্তীকালে হুগলির জনাইয়ের কাছে বাকসাতে এসে বসবাস শুরু করেন। বাকসার আর এক প্রচীন পরিবার মিত্রদের সঙ্গে তাঁদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বর্ধমানের রাজা তাঁদের ১৬ বিঘা নিষ্কর জমি দিয়ে দেন। বসবাস শুরু করার কিছুদিনের মধ্যেই চৌধুরী পরিবার এখানে দুর্গাপূজা শুরু করেন।

আরও পড়ুন: জনাইয়ের বাকসা মিত্রবাড়ির পুজোর বোধন হয় ১৫ দিন আগে

আরও পড়ুন: পুজোয়ে প্রামাণিক বাড়ির ঠাকুরদালানের সামনে বসত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর​

লাল বর্হিবাটি পেরিয়ে দুর্গাদালান, তার পিছনেই রাধাগোবিন্দর মন্দির, বাঁধানো তুলসীতলা সব মিলিয়ে বড় মায়াময় আদরের স্পর্শ চৌধুরী বাড়ির গায়ে। মনে করা হয় ষোড়শ শতাব্দীর শেষ দিকে জটাধারী বিষ্ণু যশোর থেকে হুগলির শিয়াখালায় বসবাসের জন্য আসার সময় রাধাগোবিন্দর কষ্টিপাথরের মূর্তি নিয়ে আসেন। রাধাগোবিন্দের সঙ্গে দুর্গাপুজোর নিবিড় সম্পর্ক এই বাড়িতে। প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর দিন এখানে নন্দোৎসব হয়। মন্দিরের সামনে গর্ত করা হয় মাটিতে। তার মধ্যে বাচ্চা ছেলের দল জলকাদা মেখে খেলা করে। খেলা শেষে তাদের হাতে আটকড়াই ভাজা আর মিষ্টি দেওয়া হয়। নন্দোৎসব শেষ হলেই সূচনা হয় দুর্গাপুজোর। পুরোহিত এসে একটি নতুন বাঁশ পুজো করেন। ঠাকুরের কাঠামো তৈরিতে এই বাঁশ ব্যবহার করতে হয়। এর কিছুদিনের মধ্যে শুরু হয়ে যায় মূর্তি তৈরির কাজ। চৌধুরী বাড়িতে দেবীর চারটে হাত। রাধাগোবিন্দ বাড়িতে পূজিত হলেও চৌধুরী বাড়িতে পুজো হয় শাক্ত মতে। যে সময় পুজো শুরু হয় সেই সময় বৈষ্ণব এবং শাক্তদের মধ্যে বিরোধ চরমে। এই দুই বিপরীতমুখী স্রোতের মধ্যে সামঞ্জস্য আনতে চৌধুরীদের ঠাকুরের চালায় একদিকে রাধা এবং অন্যদিকে কৃষ্ণের মূর্তি রাখা হয়। চৌধুরীরা একই সঙ্গে শুরু করেন শক্তি এবং প্রেমের আরাধনা। একই কারণে মন্দির প্রতিষ্ঠার সময় এই বাড়ির রাধাগোবিন্দ মন্দিরে রাখা হয়েছিল কালী শিলা। কালীপুজোর দিন আগে মন্দিরের সামনে ছাগবলি হত। তবে সেই বলিতে দেবীর নামে ধ্বনি দেওয়া বা বাজি ফাটানো নিষেধ ছিল। যতদূর সম্ভব নিঃশব্দে বলি সম্পন্ন হত। সেই সময়টুকুর জন্য রাধাগোবিন্দর কানে তুলো দিয়ে শয়ান করিয়ে দেওয়া হত। কালী শিলা এখনও মন্দিরে পূজিত হলেও ছাগবলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দেবী এখানে আসেন স্নিগ্ধ শান্ত মাতৃমূর্তিতে। ষষ্ঠীর দিন বোধন হয়। বাড়ির সামনে ‘চাঁদুনি বেলতলায়’ বোধনের পুজো হয়। সপ্তমীর দিন সকালে কলাবউ স্নান করানো হয় বাড়ির পুকুরে। পুজো শুরু হলে মন্দির থেকে নারায়ণের মূর্তি নিয়ে আসা হয়। সেই সঙ্গে নিয়ে আসা হয় চৌধুরীদের সবকটি পরিবারের নিত্যপূজিতা ধান্যলক্ষ্মীকে। পুজোর তিনদিনই নিয়ম মতো হোম হয়। সপ্তমী অষ্টমী নবমী তিনদিনই কুমারী পুজো হয়। তবে এখানে পুজো ঠাকুরদালানে হয় না। বড় তরফ, মেজ তরফ এবং ছোট তরফের বাড়িতে হয়। অষ্টমীর দিন কল্যাণী পুজো এবং সন্ধি পুজো হয়। নবমীর দিন বদ্যিমাতার মন্দিরে ফুল, ফল নৈবেদ্য পাঠিয়ে তারপর বাড়ির পুজো করা হয়। চাল, নানারকমের ফল, মিষ্টি এসবই দেওয়া হয় ঠাকুরকে। রাতে আরতির পর লুচি মিষ্টির শীতল ভোগ দেওয়া হয়। দশমীর দিন সকালে চৌধুরীদের কুলপুরোহিতের বাড়ি থেকে তাঁদের বিশালাক্ষ্মী দেবীকে বাড়ির সামনের বিশালাক্ষী মন্দিরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে দেবীর পুজো করা হয় এবং প্রতীকী বলি হয়। দশমীর রাতে বাহকরা কাঁধে করে দেবীকে নিয়ে সরস্বতী নদীতে বিসর্জন দেন।

আগে বর্ধমানরাজ এই বাড়িতে পুজো পাঠানোর পর তবেই বাড়ির পুজো শুরু হত। তখন যোগাযোগ ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। পুজো আসতে আসতে চৌধুরী বাড়িতে পুজোর সময় উত্তীর্ণ হয়ে যেত। এরপর বর্ধমানরাজের তরফ থেকে শিয়াখালায় উত্তরবাহিনী বিশালাক্ষী পুজোর দায়িত্ব এই পরিবারকে দেওয়া হয়। বলা হয়, দশমীর বিসর্জনের পর এই দেবীকে পুজো দিলেই হবে। আজও একাদশীর দিন চৌধুরী বাড়ি থেকে বিশালাক্ষী দেবীকে বর্ধমান রাজার নামে পুজো পাঠানো হয়।

ছবি: অমিতাভ গুপ্ত

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy