মা-দিদিমার পুরনো ছবি দেখলে মনে সাধ হয় যদি আমাদেরও এ রকম ঢাল চুল হত। পিঠের উপর দিয়ে বেয়ে কোমর পর্যন্ত ঢেউ খেলানো কালো ঘন রেশমী চুল এখন দুর্লভ। দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝখানে যা সময় পাওয়া যায় নিজের জন্য, তাতে চুল অথবা ত্বক কোনওটার সঠিক যত্ন নেওয়া হয় না। চুল হয়ে ওঠে প্রাণহীন, রুক্ষ-শুষ্ক।
করোনা আবহে অনেকেই বুঝতে পারছেন না কী ভাবে চুলের যত্ন নেবেন। লকডাউন পর্ব চলাকালীন পার্লারে যাওয়ার সুযোগ মেলেনি। তাই অনেকেই ভরসা রেখেছিলেন ঘরোয়া উপায়ে। কিন্তু এখন পুজোর বাকি মাত্র আর কয়েকটা দিন, এ বার নিজেকে সাজিয়ে তোলার পালা। আপনার চুলকে সুন্দর রাখতে কী করবেন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন কীভাবে নেবেন?
অয়েল মাসাজ
১) হট অয়েল মাসাজ: সপ্তাহে দু'বার করে গরম তেল দিয়ে চুল মাসাজ করতে হবে। প্রথমে নারকেল তেলের সঙ্গে অলিভ অয়েল বা ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে আপনি মাসাজ করতে পারেন। এর ফলে চুলের গোড়া মজবুত হবে ও চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
২) ডাবল বয়লার পদ্ধতি: একটি বড় পাত্রে এক-চতুর্থাংশ জল নিয়ে গরম করতে হবে। আরেকটি ছোট পাত্রে নারকেল তেলের সঙ্গে নিম পাতা বা মেথি বা জবা ফুলের পাতা মিশিয়ে গরম করতে হবে। ছোট পাত্রটি বড় পাত্রটির মধ্যে রেখে গরম করতে হবে। এমন ভাবে পাত্রটি রাখতে হবে যাতে জল ছোট পাত্রের মধ্যে ঢুকে না যায়। তেল ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেঁকে নিয়ে একটি কাচের পাত্রে এক সপ্তাহ রাখতে পারেন। এই তেল চুলের পক্ষে খুব উপকারী। সপ্তাহে তিন বার ব্যবহার করলে চুল সুন্দর এবং উজ্জ্বল হবে।
হাতে সময় কম থাকার কারণে অনেকেই ভরসা রাখছেন কেরাটিন ট্রিটমেন্টে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।
৩) পেঁয়াজের রস: অনেকেই পেঁয়াজের রস মাথায় মাখেন, কিন্তু আপনি কি জানেন কোন পেঁয়াজ আপনার চুলের পক্ষে ভাল? বাজারে দু'রকমের পেঁয়াজ দেখতে পাওয়া যায়, ছোট ও বড়। যে পেঁয়াজ গুলি ছোট এবং গাঢ় বাদামী রঙের সেগুলির রস স্ক্যাল্পের জন্য খুবই ভাল। এর সঙ্গে একটু নারকেল তেল মিশিয়েও চুলে লাগাতে পারেন। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই ভাল।
আরও পড়ুন: অনলাইনে পুজোর কেনাকাটা করছেন? প্রতারণা এড়াতে যা যা মাথায় রাখা ভাল।
যে কোনও তেল লাগানোর এক ঘণ্টা বাদে অবশ্যই চুলকে আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। কখনওই সারা রাত চুলে তেল মেখে পর দিন শ্যাম্পু করবেন না। তেল মাখলে চুলের গোড়া নরম হয়ে যায়। ফলে রাতের বেলায় ঘষা খেয়ে চুল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হেয়ার প্যাক
১) অ্যালোভেরা হেয়ার প্যাক: এতে প্রচুর পরিমাণে থাকে ভিটামিন, প্রোটিন এবং মিনারেলস। এটি চুলকে পুষ্টি জোগায় এবং ঝলমলে করে তোলে।
এক পাত্রে এক কাপ ফ্রেশ অ্যালোভেরা জেল, ক্যাস্টর অয়েল দু'চামচ, মেথি গুঁড়ো দু'চামচ নিয়ে ভাল করে মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে স্ক্যাল্পে আর চুলের গোঁড়ায় ভাল করে মাসাজ করতে হবে। তারপর দু'ঘণ্টা পরে ধুয়ে নিতে হবে। এই হেয়ার প্যাকটি সপ্তাহে দু'বার করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন: গাঁদা কিংবা গোলাপ, নানা ফুলের ব্যবহারেই জেল্লাদার ত্বক
২) মেয়োনিজ হেয়ার প্যাক: মেয়োনিজের সঙ্গে অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটা ঘন প্যাক তৈরি করে চুলে লাগালে চুল অনেক নরম এবং ফ্রিজ-ফ্রি হবে। সাধারণত এটি চুলের কন্ডিশনিং-এ সাহায্য করে। আধ ঘন্টা রেখে তারপর ভাল করে চুল ধুয়ে নিতে হবে।
৩) পেঁপের প্যাক: পাকা পেঁপের রস ৪-৫ চামচ, অলিভ অয়েল তিন চামচ, এক কাপ অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে একটা প্যাক তৈরি করে চুলের গোঁড়ায় এবং স্ক্যাল্পে মাসাজ করে এক ঘণ্টা রাখতে হবে। ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিয়ে শ্যাম্পু করে নিতেন পারেন।
সপ্তাহে দু'বার করে গরম তেল দিয়ে চুল মাসাজ করতে হবে। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।
৪) আমলকি হেয়ার প্যাক : কিছুটা আমলকি নিয়ে সারা রাত জলে ভিজিয়ে রেখে পরের দিন একটা মসৃণ পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে। এর সঙ্গে দু'চামচ শিকাকাই পেস্ট, এক চামচ মেথি পেস্ট নিয়ে ভাল মতো ঘন প্যাক তৈরি করে নিয়ে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় মেখে রাখতে হবে। এক ঘণ্টা রাখার পর ধুয়ে ফেলতে হবে, মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভাল এই ক্ষেত্রে।
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরা জানান, "সারা বছর রোজ চুলে শ্যাম্পু এবং তেল ব্যবহার করা উচিত। এই করোনা কালে যদি কোনও জীবাণু থেকে থাকে চুলে তাহলে সেটা ধুয়ে বেরিয়ে যাবে। এতদিন যেহেতু চুলের প্রতি যত্ন নেওয়া সম্ভব হয়নি তাই অনেকেই এখন চুলে ট্রিটমেন্ট করাচ্ছেন। এটি খুবই দরকার। চুলে দু'ধরনের ট্রিটমেন্ট হয়-বায়োটিন এবং কেরাটিন। যে চুলগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে সেগুলো পুনরায় মেরামত করার জন্য এই ট্রিটমেন্ট নেওয়া হয়।"
আরও পড়ুন: পুজোর আগেই বন্ধ হবে চুল পড়া, কী কী মানতেই হবে
কেউ বাড়ি থেকে কাজ করছেন, আবার কাউকে অফিসে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যার জন্য অনেকেই এই সময় মাথায় হেয়ার ক্যাপ ব্যবহার করছেন। চুল পড়ার সমস্যা তো বরাবর ছিলই, সঙ্গে চুল শুষ্ক, স্ক্যাল্প শুকনো, খুসকি এই সমস্যা গুলো নতুন করে যোগ হয়েছে। বেশি ক্ষণ হেয়ার ক্যাপ পরে থাকলে জীবাণু মুক্ত থাকা যায়, কিন্তু তাতে মাথায় ঘাম বসে চুলের ডগা হালকা হয়ে যায়। ফলে চুল ঝরে পড়ে বেশি। তাই পার্লার গিয়ে সুরক্ষা বিধি মেনেই ট্রিটমেন্ট করাতে পারেন।
সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়?
১) শরীর সুস্থ-সবল রাখার জন্য যে রকম প্রতিদিন খাবার খেতে হয়, সে রকমই চুলকে সুন্দর ও উজ্জ্বল রাখার জন্য তাকে দিতে হবে তেল আর জল। চুলে এবং স্ক্যাল্পে হাওয়া লাগাতে হবে। চুলের গোড়ায় অনেক ময়লা-ধুলো-ঘাম জমে থাকে, সেটা পরিষ্কার করা না হলে চুলের পোরগুলো উন্মুক্ত হয়ে যায়, যার জন্য চুল পড়ে যায়। তাই বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর অবশ্যই হেয়ার ক্যাপ খুলে চুল ধুয়ে নিতে পারেন বা হাওয়া লাগিয়ে চুল শুকিয়ে নিতে পারেন।
আর্গন অয়েল চুলের লেনথ্ বৃদ্ধিতে ভাল, ভৃঙ্গরাজ চুলকে মজবুত বানায়। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া।
২) যাদের লম্বা চুল তাদের নিয়মিতভাবে চুলের প্রতি যত্নবান হতে হবে। আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের শ্যাম্পু পাওয়া যায়, কিন্তু দেখে নিতে হবে কোন শ্যাম্পুর মধ্যে আর্গন অয়েল, অলিভ অয়েল, নারকেল তেল রয়েছে। প্রাকৃতিক উপাদান বেশি পরিমাণে রয়েছে এবং প্যারাফিনমুক্ত শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
৩) হাতে সময় কম থাকার কারণে অনেকেই ভরসা রাখছেন কেরাটিন ট্রিটমেন্টে। এটি বাড়িতে করা সম্ভব নয় তাই যারা খুবই ব্যস্ত তাদের জন্য পার্লারে গিয়ে এই ট্রিটমেন্ট করানো উচিত। সেই সঙ্গে বায়োটিন ট্রিটমেন্ট করাতে হবে। কোনও ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তার পরেই এই ট্রিটমেন্ট নিতে হবে।
৪) স্বাস্থ্য যদি ভাল হয় তাহলে তা চুলে প্রতিফলিত হয়। তাই চুলের বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন, লোহা এবং প্রোটিন-এর মতো পুষ্টিকর খাদ্য প্রতিদিন খেতে হবে। শাক-সব্জি চুল ভাল রাখতে সহায়তা করে, এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে জল গ্রহণ করা উচিত।
আরও পড়ুন: মলমাসের দৌলতে কি এবার পুজোর ফুর্তি বাড়ছে বাঙালির
ফ্যাশন বিশেষজ্ঞ জলি চন্দ জানান, "সব সময় চুল এবং ত্বকের জন্য সঠিক পরিমাণ ব্রান্ডেড শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। চুল এবং ত্বকের ক্ষেত্রে কোনও আপস করা চলবে না। আয়ুবের্দিক প্রোডাক্ট অর্থাৎ যার মধ্যে রিঠা, অলিভ অয়েল, আমলা বিশুদ্ধ নারকেল তেলের পরিমাণ বেশি রয়েছে সেই ধরনের জিনিষ চুলের গোড়ার জন্য খুবই ভাল। যে রকম আর্গন অয়েল চুলের লেনথ্ বৃদ্ধিতে ভাল, ভৃঙ্গরাজ চুলকে মজবুত বানায়। ঘরে প্যাক বানিয়ে চুলে লাগানোর সময় না থাকলে এই জিনিসগুলো যে শ্যাম্পু বা তেলে বেশি পাওয়া যাবে সে গুলোই ব্যবহার করা উচিত। তবে সব সময় যে কোনও একটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করা উচিত। "
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy