পুজো নিয়ে প্রত্যেকের আবেগ আলাদা। কারও কাছে পুজো মানে বাপের বাড়ি যাওয়া, কারও দেশে ফেরা, কারও কাছে রাত জেগে ঠাকুর দেখা, কারও আবার বাড়ির পুজোয় সপরিবার আড্ডা। কিন্তু এই সব আবেগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জনসমাগম, যেখান থেকে করোনা সংক্রমণের ভয়। তা হলে উপায়?
ঠাকুর দেখুন সাবধানে
জেনারেল ফিজ়িশিয়ান ডা. সুবীর কুমার মণ্ডল বললেন, ‘‘আগেকার সময়ে বেশির ভাগ মানুষ পাড়ার পুজো উপভোগ করতেন। সেই ধারা ফিরিয়ে আনা যায়। এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায় না গিয়ে বাড়ির কাছাকাছি পুজোয় থাকুন। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ারের ব্যবহারবিধি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার সকলেই নিয়ে বেরোচ্ছেন, কিন্তু তার ঠিক ব্যবহারও জরুরি। রাস্তায় বেরিয়ে মাস্ক খুলতে হলে আর একটা ফ্রেশ মাস্ক ব্যাগে রাখুন। স্যানিটাইজ়ার ব্যবহার করার পরে আবার যদি তা বন্ধ করে পকেটে চালান দিয়ে মুখে বা খাবারে হাত দেন, তা হলে লাভ নেই।’’ স্যানিটাইজ়ার এক হাতে নিয়ে বোতলের মুখ বন্ধ করে ব্যাগে রাখুন। এ বার দু’হাতে তা ভাল করে ঘষে নিয়ে তবে মুখে হাত দিন।
মেডিসিনের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘পুজোর উদ্দেশ্য আনন্দ করা। সেটা বাড়িতে থেকেও করা যায়। রাস্তায় ভিড় এড়িয়ে চলাই ভাল। রাস্তায় বেরোলেও ফেসশিল্ড, মাস্ক ব্যবহার করুন। রাস্তার খাবার একান্তই খেতে হলে প্যাকেট করা খাবারে ভরসা রাখতে হবে। কারণ খাবারের পাত্র, চামচ থেকে সংক্রমণ হতে পারে।’’
বন্ধুরা মিলে হেঁটে হেঁটে ঠাকুর দেখেন অনেকে। এ বার এত হাঁটাহাঁটি থেকে বিরত থাকাই ভাল। মনে রাখতে হবে, এ বার মুখে থাকবে মাস্ক। বেশি হাঁটলে ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। ডা. সুবীর মণ্ডলের কথায়, ‘‘পুজোয় প্যান্ডেলের ভিড়ে অনেকেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। এ বার সেই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেশি। কারণ মুখে থাকবে মাস্ক, যদি দর্শনার্থী অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে সেই প্যান্ডেলে প্রবেশ করেন, তাঁর হাইপক্সিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই শরীর বুঝে ঠাকুর দেখার আনন্দে মেতে উঠুন।’’ এ বার বেশির ভাগ পুজোমণ্ডপই খোলামেলা রাখার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে দর্শনার্থীরা মণ্ডপের বাইরে থেকে দর্শন করতে পারেন। তাই কোন মণ্ডপের গড়ন কেমন জেনে প্ল্যান করুন। ডা. অরুণাংশু তালুকদার বললেন, ‘‘মাস্ক, ফেসশিল্ড পরলে ঘাম বেশি হয়। এতে ডিহাইড্রেশন হওয়ার ভয়ও থাকে। কিন্তু এ বার এই দুই রক্ষাকবচ অপরিহার্য। তাই বাড়ির কাছাকাছি প্যান্ডেলে আনন্দ করুন। সঙ্গে বোতলে নুন-চিনির জল রাখুন।’’ পাড়ার মধ্যে রিকশা করেও ঠাকুর দেখতে পারেন। রিকশার হাতলে স্যানিটাইজ়ার স্প্রে করে নিন।
খাবার থেকে সংক্রমণ হয়?
পুজোর সঙ্গে খাওয়াদাওয়ার সম্পর্কও ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। বাড়ির পুজো হলে ঠাকুরের ভোগ থেকে শুরু করে সন্ধেবেলা প্যান্ডেল হপিংয়ের ফাঁকে ফুচকা, রোল, চাউমিন, আইসক্রিম তো আছেই। কিন্তু খাবার থেকে কি করোনা সংক্রমণ হতে পারে?
ডা. সুবীর মণ্ডল বললেন, ‘‘খাবার থেকে সংক্রমণের ভয় নেই। তবে খাবার কোন পাত্রে খাচ্ছেন, কী ভাবে খাচ্ছেন... সে বিষয়গুলোর উপরে নির্ভর করছে সংক্রমণ হবে কি না। যিনি খাচ্ছেন, তাঁর হাত থেকেও সংক্রমণ হতে পারে। রাস্তায় থুতু ফেলা থেকেও বিরত থাকতে হবে।’’ বাড়ির পুজোয় ভোগ খাওয়ার ব্যবস্থা থাকলে দূরত্ব বজায় রেখে বসার ব্যবস্থা করুন। যাঁরা খাবার পরিবেশন করছেন, তাঁদেরও সচেতন থাকতে হবে। অন্য দিকে থার্মোকল বা প্লাস্টিকের থালার পরিবর্তে শালপাতার থালা বা কলাপাতা ভাল করে ধুয়ে ব্যবহার করতে পারেন। প্লাস্টিকের উপরে ভাইরাস দীর্ঘক্ষণ বেঁচে থাকতে পারে।
বাড়ির আড্ডায়
এ বছর বাইরে না বেরিয়ে বাড়িতে গেট টুগেদার করার পরিকল্পনা করলে হোস্টকে থালা, বাটি, চামচ ও খাবারের ব্যাপারে অতিরিক্ত সচেতন থাকতে হবে। অতিথিদের উপরেও কিছু দায়িত্ব বর্তায়। তাঁদের সঙ্গে অতিরিক্ত পোশাক রাখতে হবে। যাঁর বাড়ি যাচ্ছেন, বাড়িতে ঢুকে সোজা বাথরুমে গিয়ে হাত, পা সাবান দিয়ে ভাল করে ধুয়ে পরিষ্কার করে পোশাক পাল্টে তবে আড্ডায় যোগদান করুন। বাড়িতে অতিথি এলে বয়স্ক সদস্যদের আলাদা ঘরে রাখাই ভাল।
মনে রাখবেন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy