Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

করোনা থেকে সেরে উঠেছেন? পুজোর সময় কী কী খেয়াল রাখবেন?

এক বার কোভিড হলে কত দিন নিরাপত্তা থাকে? যে অ্যান্টিবডির ভরসায় এত প্ল্যান-প্রোগ্রাম, সে কত দিন লড়তে পারে ভাইরাসের সঙ্গে?

সুজাতা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২০ ১৭:১৫
Share: Save:

আর মাত্র কয়েকদিন। তারপরই দুর্গাপুজো। কোভিডে ভুগে যাঁরা সুস্থ হয়ে গিয়েছেন, তাঁদের মনে খানিকটা হলেও আনন্দ। সেরে উঠেছেন যাঁরা, তাঁরা ভাবছেন একাকীত্বের পালা কিছুটা হলেও ঘুচবে। শরীরে কুলালে পাড়ার প্যান্ডেলে এক-আধ বার উঁকিও মারা যেতে পারে, চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে এক-আধ দিন রেস্তরাঁও যেতে পারেন। তাঁর থেকে যেমন কারও রোগ হওয়ার আশঙ্কা নেই। পরিবারের অন্য কেউ আক্রান্ত হলে চাইলে তিনিও একটু সেবাযত্ন করতে পারবেন। সত্যিই কি তাই?

এক বার কোভিড হলে কত দিন নিরাপত্তা থাকে? যে অ্যান্টিবডির ভরসায় এত প্ল্যান-প্রোগ্রাম, সে কত দিন লড়তে পারে ভাইরাসের সঙ্গে? বিশেষ করে ভাইরাস যে ভাবে নিজের রূপ বদলে ফেলে, নতুন রূপে সে এলে, অ্যান্টিবডিরা এই নতুন শত্রুকে কতটা চিনতে পারবে? যদি পারেও, অ্যান্টিবডি নিজেই তো ১৫ দিন থেকে তিন-চার মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে! তখন? শরীরে আরও কিছু প্রতিরক্ষা আছে ঠিকই, রক্তের টি-সেলও লড়াই করে, কিন্তু তারপরও তো দু-চারজনের রোগ হচ্ছে! তাহলে?

মেলামেশা শুরু করার আগে, ধীরে ধীরে শরীরকে তৈরি করে নিতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামী জানিয়েছেন, “রোগ সেরে গেলেই যে পুরোদস্তুর ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়, এমন নয়। অনেকেরই পার্শিয়াল ইমিউনিটি বা আংশিক রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। খুব বেশি ভাইরাস লোড (ভাইরাসের পরিমাণ) হলে শরীর আর লড়তে পারে না তার সঙ্গে। সেই ইমিউনিটিও আবার কতদিন থাকবে তার নিশ্চয়তা নেই। কেউ অনেক দিন পুরোপুরি নিরাপদ। কেউ কম দিন। এ বার কে কোন দলে পড়বেন, তা তো আগে থেকে বলা যায় না। কাজেই সাবধান হয়ে চলতে হবে।”

অ্যান্টিবডি টেস্ট করে লাভ নেই?

সুবর্ণ বলেন, “কোনও এলাকায় কত জন আক্রান্ত হয়েছেন তার একটা মোটামুটি চিত্র পেতে এই পরীক্ষা করতে হয়, যাকে সেরো সার্ভেলেন্স বলে। প্লাজমা দানের জন্যও এই পরীক্ষা জরুরি। তবে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে সাধারণভাবে কার মধ্যে কেমন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়েছে ও তার ভিত্তিতে তিনি কত দিন কেমন নিরাপত্তা পাবেন, তাঁকে সুরক্ষাবিধি মেনে চলতে হবে কিনা তা এই পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। কারণ ৬ রকমের করোনা ভাইরাস আছে। তার মধ্যে একটি হল সার্স কোভ-২, যার সংক্রমণে কোভিড-১৯ হয়। বাকিগুলি হল নন-সার্স করোনা ভাইরাস, সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বর হয় যাদের সংক্রমণে। যে কোনও করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হলেই শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। অর্থাৎ কারও কোভিড-১৯ হয়নি, তাও শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি থাকা সম্ভব যদি আগে অন্য ধরনের করোনা ভাইরাস সংক্রমণ হয়ে থাকে। কাজেই অ্যান্টিবডি আছে জেনে আপনি সুরক্ষাবিধি না মেনে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ালেন আর এই অবসরে কোভিড ১৯ হয়ে গেল, এ রকম হতেই পারে। অতএব চোখ বুজে থাকার কোনও অবকাশ নেই।”

ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে প্রবীণ সদস্যদের।

কোভিডোত্তর জীবন

কার্ডিওথোরাসিক সার্জেন কুণাল সরকারের মত, “সেরে ওঠার পর আবার নতুন করে কোভিড সংক্রমণ হবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ আছে।এই ভাইরাস সম্পর্কে সে রকম কিছুই জানি না বলে দ্বিতীয়বার রোগ হবেই না, এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। কিন্তু অন্য সংক্রমণ তো হতে পারে। বিশেষ করে মাঝারি থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে যাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে, যাঁদের শ্বাসকষ্ট হয়েছে, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে হয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, এ সমস্ত রোগীদের ফুসফুসে এমন সব পরিবর্তন হয় যাতে ফুসফুসের কার্যকারিতা বেশ কিছুদিনের মতো কমে যায়। তাঁরা যদি পূজোর আগে সেরে ওঠার আনন্দে একটু বেশি হেঁটেও ফেলেন, ফুসফুস সেই ধকল নাও সামলাতে পারতে পারে। স্টেরয়েডের জন্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশ কিছুদিনের মতো কমে যায়। ফলে এই ঋতু পরিবর্তনের সময়, বাতাস যখন ধুলো-ধোঁয়া-জীবাণুতে ভর্তি হয়ে উঠেছে, প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা না নিয়ে ঘোরাঘুরি করলে নন-কোভিড ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল নিউমোনিয়া হয়ে যেতে পারে যখন-তখন। এই কারণেও ভিড় এড়িয়ে চলা দরকার। দরকার আগের মতোই মাস্ক ও হাত ধোওয়ার নিয়ম মেনে চলা।”

নিয়ম কতদিন?

কুণালের কথায়, “উপসর্গহীন রোগীদেরও কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পর কম করে দিন ১৫ অত্যন্ত সাবধানে থাকা দরকার। নিজের এবং অন্যের স্বার্থে। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক, হাত ধোওয়া ইত্যাদি। মৃদু রোগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ পুরোপুরি কমে যাওয়ার পরও ১৫-২০ দিন কম করে সাবধানে থাকতে হবে। কারণ যে-কোনও ভাইরাস সংক্রমণের পর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। তখন অন্য সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে। যাঁদের মাঝারি থেকে জটিল রোগ হয়েছে, তাঁদের ২-৩ মাস, ৪ মাস বা কখনও আরও বেশি সময় লাগতে পারে পুরোপুরি সুস্থ হতে। কারণ শুধু তো ফুসফুস নয়, হৃদযন্ত্র এবং স্নায়ুতন্ত্রের উপরও চাপ পড়ে অনেকের। কারও বিপাক ক্রিয়া এলোমেলো হয়ে রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ সব না সামলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিপদ হতে পারে।বাইরে যাওয়ার আগে, মেলামেশা শুরু করার আগে, ব্যায়াম শুরু করার আগে খুব ধীরে ধীরে শরীরকে তৈরি করে নিতে হবে।”

আড্ডা চলুক সামাজিক দূরত্ব মেনেই।

সুবর্ণ এ প্রসঙ্গে জানান, সব মিটে যাওয়ার পরও জীবন স্বাভাবিক হবে ধাপে ধাপে। বেড়াতে গেলে, সিনেমা বা রেস্তরাঁয় গেলে, যাঁর কোভিড হয়নি তিনি যে সব নিয়ম মানবেন, যাঁর করোনা হয়ে সেরে গিয়েছে, তাঁকেও মানতে হবে সে সব। কারণ দ্বিতীয়বার কোভিড হবে না, এমন নিশ্চয়তা এখনও নেই। মাস্ক বা পরিচ্ছন্নতার, ভিড় এড়িয়ে চলার নিয়মের মধ্যে অন্য সুবিধাও আছে। ফ্লু, অ্যালার্জি, পেটের গোলমাল, জ্বরজারি-সর্দি-কাশি, টিবি বা সিওপিডি-র মতো সমস্যার প্রকোপ কম থাকবে। কাজেই নিয়ম না মানলে চলবে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy