সকালের খাওয়াটা হতেই হবে ভারী এবং যথেষ্ট পরিমাণ মাফিক। ছবি: শাটারস্টক।
‘পুজো’— এই ছোট্ট শব্দটার ম্যাজিক আমরা বাঙালিরা দিব্য জানি। তবে এই জাদুর অনেকটাই মাঠে মারা পড়ে নতুন জামায় নিজেকে মাপসই করে নিতে না পারলে। এমন দুর্দশার মূল ভিলেন বাড়তি ওজন। কোভিডের বাজারে মানুষ ছ'মাস গৃহবন্দি। কর্মসংক্রান্ত ব্যস্ততা, দৌড়ঝাঁপ করার অভ্যেস কমে গিয়েছে অনেকটাই। অবসরকে কাজে লাগিয়ে রান্নাবান্নায় চলছে বিবিধ এক্সপেরিমেন্ট। মুখরোচক পদের ছবি, রেসিপি শেয়ার হচ্ছে ভার্চুয়াল দুনিয়ায়। অতএব বলাই বাহুল্য, গড়পড়তা ওজনের গ্রাফ হু হু করে ঊর্ধ্বমুখী।
এদিকে পুজো তো দোরগোড়ায় কড়া নাড়ছে। ওজনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটু মন দিন বরং ডায়েটে। কথায় আছে, ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে।’ তাই ওজনের সঙ্গে যুদ্ধে ব্রেকফাস্টকে স্বাস্থ্যকর করে তোলাই আমাদের প্রথম হাতিয়ার।
পুষ্টিবিদ অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়ের মতে, সকালের খাওয়াটা হতেই হবে ভারী এবং যথেষ্ট পরিমাণ মাফিক। পরে লাঞ্চ এবং ডিনারের আয়তন ক্রমে কমতে থাকবে। প্রতিটি মিলের মধ্যে দু'-তিন ঘণ্টার বেশি গ্যাপ থাকবে না। ব্রেকফাস্টে অতি অবশ্যই রাখতে হবে ভিটামিন, ফাইবার, মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার। ভাজা, অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার, মিষ্টি— এগুলো যথাসম্ভব এড়িয়ে চলাই ভাল। তাহলে কী কী খাবার রাখতে হবে পাতে?
আরও পড়ুন: ঘরোয়া পদ্ধতিতে ব্রণকে দূরে রাখুন এই ভাবে
লেবু-জল: চা, কফি জাতীয় স্টিমুলেটিং পানীয় না হলে আমাদের অনেকের ঘুমের মৌতাত ছাড়তে চায় না। কিন্তু পুষ্টিবিদদের পরামর্শ, চা-কফির পরিবর্তে দিনের শুরুটা হোক ঈষদুষ্ণ লেবু-জল দিয়ে। শরীরকে টক্সিনমুক্ত করে ঝরঝরে রাখতে এবং বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার।
আরও পড়ুন: দু মাসে পাঁচ কেজি ওজন কমাতে চান? মেনে চলুন এই ডায়েট
গ্রিন টি: চা যদি নেহাত খেতেই হয়, তবে ভরসা রাখুন গ্রিন টি-তে। অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যুক্ত গ্রিন টি-র পলিফেনল আমাদের শরীরের ফ্যাট অক্সিডেশন প্রক্রিয়াকে বেশি মাত্রায় কার্যকরী করে খাবার থেকে ক্যালোরি তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়ার হারকে দ্রুত করে তোলে। ফলে শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমতে পারে না গ্রিন টি-র সঙ্গে বিস্কুটের পরিবর্তে রাখতে পারেন আমন্ড।
বাইরে থেকে কেনা ফ্রুট জুসের চেয়ে গোটা ফল খাওয়া সব সময় ভাল। ফাইল চিত্র।
ব্রাউন ব্রেড: বাঙালির জলখাবারে লুচি, পরোটার সঙ্গে দৌড়ে বরাবরই অনেকটা পিছিয়ে থেকেছে পাঁউরুটি। ক্রমে দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ততা বেড়েছে, চটজলদি ব্রেকফাস্টের তালিকায় প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছে হোল গ্রেন ব্রেড বা ব্রাউন ব্রেড। এতে আছে প্রচুর ফাইবার। তার উপর ক্যালোরির পরিমাণ কম হওয়ায় ব্রাউন ব্রেড ওজন কমানোর জন্য আদর্শ। এবার আপনি ব্রাউন ব্রেড আর পনির অথবা টম্যাটো, ক্যাপসিকাম, পুদিনা সহযোগে বানিয়ে ফেলতেই পারেন ক্রিসপি, সুস্বাদু স্যান্ডউইচ।
ডিম: বাঙালির হেঁশেলে ডিম একটা অত্যাবশকীয় উপাদান। বিপদের বন্ধু। সস্তায় পুষ্টিকর। তাই ব্রেকফাস্টে অবশ্যই রাখুন ডিম, তবে অমলেট বা পোচের বদলে সিদ্ধ ডিম খান গোলমরিচ ছড়িয়ে। সিদ্ধ ডিম কুচিকুচি করে ব্রেডের মধ্যে দিয়ে বানিয়ে নিতে পারেন এগ স্যান্ডউইচও। সব্জির সঙ্গে মেশালেও হয়ে যাবে এগ স্যালাড।
আরও পড়ুন: ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ রেডিয়োতে না শুনলে মহালয়ার আসল আমেজই পাওয়া যাবে না
ফল: ছোটবেলা থেকে গুরুজনদের কাছে ফলের গুণকীর্তন শুনে বড় হয়নি, এমন কেউ আছে কি! অনেকে আমার মতো মনে মনে মুখও বেঁকিয়েছে নিশ্চিত। তবে বড় হওয়ার পর ছবিটা পাল্টে যায় নিশ্চিত ভাবে। তাই ব্রেকফাস্টে রাখতে পারেন আপেল, পেয়ারা, ন্যাসপাতি, বাতাবি লেবু, কলা, পেঁপের মধ্যে যে কোনও দু'টি ফল। তবে বাইরে থেকে কেনা ফ্রুট জুসের চেয়ে গোটা ফল খাওয়া সব সময় ভাল। কখনও সখনও বোরডম কাটাতে বানিয়ে নিতে পারেন ফ্রুট স্যালাড। উপরে ছড়িয়ে নিন মধু বা টক দই। বাড়ির খুদে সদস্যরাও খুশি মনে খাবে।
আরও পড়ুন: পুজোর সময় হার্ট ভাল রাখতে মেনে চলুন এই সব
টক দই: ভোজনরসিক বাঙালির দাঁড়িপাল্লা মিষ্টি দইয়ের দিকে ঝুঁকে থাকলেও গুণমান বিচারে টক দই বিপক্ষকে কম করে দশ গোল দেবে। প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন ও ভিটামিন বি ফাইভ, বি সিক্স, বি-১২ সমৃদ্ধ এই খাবার রাখুন ব্রেকফাস্টের শেষ পাতে। শসাকুচি, বিটনুন, জিরে গুঁড়ো ছড়িয়ে তৈরি করে নিতে পারেন রায়তাও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy