দেখুন, আচার বিভিন্ন নির্দিষ্ট সব্জি আর ফলকে শুকিয়ে, সেগুলিকে নানান ধরনের মশলার সঙ্গে তেল দিয়ে জারিয়ে, সম্ভব হলে রোজ দিন রোদ খাইয়ে বানানো হয়। যে কারণে আচার একটি অপচনশীল খাদ্য। এতে ব্যাকটেরিয়া খুব একটা চট করে জন্ম নেয় না, অর্থাৎ আচার বহু দিনের পুরনো না হলে পচে যায় না। আর ব্যাকটেরিয়া না থাকায় আচার খেলে যে কোনও বয়সির পেট খারাপের ভয় থাকে না।
এমনকি বাচ্চার দু’বছরের পর থেকে প্রায় বড়দের মতো স্বাদ গ্রন্থিগুলির কার্যকারিতা শুরু হওয়ায় তাকেও অল্প আচার মাঝে মধ্যে খাওয়ানো যায়। বিশেষ করে জ্বরজ্বালার মতো অসুখ থেকে ওঠার পরে যখন বাচ্চার মুখে স্বাদ থাকে না, অরুচি হয়, সে সময় তাকে দুপুরের খাওয়ানোর সময় তার জিভে টক-ঝাল আচার একটু সামান্য দিলে ভালই হবে। বাচ্চার মুখে স্বাদ ফিরবে, অরুচি দূর হবে, সে নিজের স্বাভাবিক খাবার খাবে।
বড়দের বেলাতেও টক-মিষ্টি-ঝাল আচারের একই কার্যকারিতা। তাদেরও জ্বরজ্বালা বা অন্য কোনও বড় রোগ থেকেও সেরে ওঠার মুখে যখন শরীরের জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ভীষণ দরকার, তখন অরুচি ও জিভের স্বাদ হারানোর জেরে প্রায় গলা দিয়ে কোনও খাদ্যবস্তু যেন নামেই না! সে সময় তাদের পাতে একটু আচার দিলে সেটা খেয়ে নিজের মূল খাবারের প্রতি স্বাদ ফিরে আসে।
আচার বানাতে নানান সবজি ও ফলগুলোকে আদার রস, হলুদ-জিরে-ধনে গুঁড়ো, মরিচ, মৌরি, শুকনো লাল লঙ্কা দিয়ে তেলের সঙ্গে জারিয়ে তৈরি করা হয়। সে সব মশলার প্রত্যেকটার গুণাগুণ আছে, যা মানবশরীরের পক্ষে দরকারি। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের দেশের মতো মূলতঃ গ্রীষ্মপ্রধান দেশে, বিশেষ করে গরমকালে শরীরে জলাভাব হতেই পারে যে কোনও বয়সির।
আচারের দুটি মূল বস্তু হল তেল ও নুন। সেক্ষেত্রে নুনে যে সোডিয়াম থাকে, গরমকালে আচার খেলে সেই সোডিয়াম আমাদের শরীরের জলাভাব রোধে সাহায্য করে। গরমের জেরে শরীরের কম জলাভাবের পরিপূরকের কাজ করে। তাতে গরমে শরীরে জলাভাবের কারণে যে, বমি, পেট খারাপ, মাথা ঘোরার প্রবণতা তৈরি হয়, সেটিও অনেকাংশে কমে এমনকি দূর হয়। গর্ভবতীদের ক্ষেত্রেও পরিমিত আচার খেলে উপকার মেলে।
যেমন, গর্ভবতীদের সাধারণত ঘুম থেকে ওঠার পর মুখে ভীষণ অরুচি লাগে, খেতে ইচ্ছে করে না। অথচ তার শরীরের ভেতর আরেকটি প্রাণ রয়েছে এবং তৈরি হচ্ছে। তাই গর্ভবতী মা সঠিক খাওয়াদাওয়া না করলে তার গর্ভের সন্তানেরও সঠিক পুষ্টি হয় না। তাই গর্ভবতীদের মুখের অরুচি কাটানো ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য প্রাতঃরাশের খাবারে রুটি-পরোটার সাথে কিংবা মধ্যাহ্নভোজের খাবারে একটু আচার খেলে বরং ভাল।
আচারের ভেতরের খাদ্যবস্তুগুলি আমাদের জিভের স্বাদগ্রন্থিগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মুখের স্বাদ ফিরিয়ে দেয়। আচারের তেল, যেটার মধ্যে নানান মশলা থাকে, সেটারও গুণাবলী আছে আমাদের শারীরবৃত্তীয় ক্ষেত্রে। কিন্তু বেশি আচার খাওয়া, প্রতি দিন পাতে এক কাঁড়ি আচার নিয়ে খেতে বসাটাও কিন্তু খারাপ। বিশেষ করে গরমকালে।
যাদের উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগব্যাধি আছে, তাদের ক্ষেত্রে আচারের ভিতরে থাকা অনেকটা পরিমাণের নুন ও তেল রক্তচাপ আরও বাড়িয়ে তোলে। তাতে শেষমেশ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার বিপজ্জনক আশঙ্কা থাকে। আর যাঁরা এমনিতেই হৃদযন্ত্রের রোগী, তাদের তো আচার খাওয়াই উচিত নয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে। ওই বড়জোর মাসে দু'দিন। সেটিও অল্প পরিমাণে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy