মায়ের শাড়িতে জাহ্নবী কাপুর
গত বছর দুর্গা পুজোর কথা। সপ্তমীর দিন সেজেগুজে বরের সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে হঠাৎ মুখোমুখি দেবী! না না, স্বয়ং দুর্গতিনাশিনী তো প্যান্ডেলে! ইনি দেবী বন্দ্যোপাধ্যায় - স্বামীর সুন্দরী বস! “ওমা, পরমা, কত দিন পর তোর সঙ্গে দেখা! কী সুন্দর শাড়ি পরেছিস রে!” কথার গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আঙুল চলল ম্যাডামের। অনুমতি ছাড়াই আঁচলের কোণ নিজের আঙুলের মধ্যে ঘষে-মেজে পরখ করতে করতে করলেন প্রশ্ন: — “কী শাড়ি রে?”
সেই প্রশ্ন! যার সদুত্তর দিতে আমি বরাবরই আমতা আমতা করি। আরে মশাই, আমার দৌড় তো মসজিদ, মানে, মায়ের আলমারি পর্যন্ত! অগত্যা, অসহায়, অকপট স্বীকারোক্তি বেরিয়ে আসে মিনমিনিয়ে - “মা এর শাড়ি, দিদি!”
উত্তর শুনে হতভম্ব দেবী। স্বাভাবিক!
কিন্তু কী আর করা যাবে! এ রকম উত্তর পেতে উনি অভ্যস্ত না হলেও, ঠিক এই উত্তর দিয়ে দিয়েই তো বড় হলাম আমি, এবং আমার মতো শয়ে শয়ে মেয়ে!
সত্যিই তো, ‘মায়ের শাড়ি’। একটা স্বয়ংসম্পূর্ণ সত্ত্বা! তার আবার বাছ-বিচার কীসের; তাঁত-তসরই বা কীসের!
কিন্তু পাঠ্য পুস্তক সংজ্ঞা যদি দিতেই বলেন, তা ভেবেচিন্তে দিই এক খানা —
যে শাড়ি মায়ের কৈশোর বা যৌবন বেলার।
যে শাড়ি পরে মা স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি যেতেন পড়াশোনা করতে, অথবা ক্লাস কেটে প্রেম করতে।
যে শাড়ি পরে মা পেলেন প্রথম চাকরি, বা খামে পেলেন প্রথম মাইনে। সে শাড়ি মা আর নিজে এখন খুব একটা পরেন না হয়তো. কিন্তু প্রাণে ধরে কাউকে দিয়েও দিতে পারেন না। তাকে কেচে ইস্তিরি করে, ন্যাপথলিন দিয়ে গুছিয়ে রেখে দেন, কোনও আর এক দিনের জন্য। আর এক জনের জন্য। আপনার জন্য। যাতে সেই কবেকার প্রিয়, যত্নের শাড়ি পুনর্জন্ম নিতে পারে আপনার প্রথম শাড়ি হয়ে!
বাঙালি মেয়েদের প্রথম শাড়ি কবে কোন জন্মে কেনা হল আবার! প্রথম শাড়ি মানেই তো মায়ের শাড়ি!
পাড়ার সরস্বতী পুজো হোক বা স্কুলের স্বাধীনতা দিবস; নাচের স্কুলের অনুষ্ঠান, কিংবা প্রথম প্রেমের বইমেলা টইটই — মায়ের শাড়ি ছাড়া গতি কী, ভরসাই বা কী!
এই তো সেই শাড়ি, যার আসল ব্লাউজ হাল ছেড়েছে সেই কবে; নতুন মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ সেই শাড়ির পরতে পরতে, ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে স্মৃতি; জড়িয়ে আছে মায়ের গন্ধ — দারচিনি, হলুদ, ওডি কোলন, পাউডার, ন্যাপথলিন আর কাঠের আলমারি মিলে মিশে সে এক আশ্চর্য নেশা ধরানো গন্ধ! হাজার ড্রাই ক্লিন-ও যে গন্ধকে স্মৃতির কবল থেকে ‘ড্রাই’ করে উঠতে পারেনি।
কী আশ্চর্য! এই শাড়ি পরলেই লোকে বলে ওঠে - “ঠিক তোর মায়ের মতো দেখাচ্ছে!” অথচ ছোট থেকে শুনে আসা, “একদম বাবার মুখ কেটে বসানো!”
শাড়ির আলিঙ্গনে আপনিও যেন দেখতে পান, ছুঁতে পান সেই সময়টাকে — যে সময়ে আপনি ইচ্ছে হয়েই লুকিয়ে ছিলেন মায়ের মনের মাঝারে!
কী জানেন তো, আসলে — ওই যেটা বলছিলাম, মায়ের শাড়ি একটা আলাদা ক্যাটাগরি। আনারসি-বেনারসির ঊর্ধ্বে সেই ক্যাটাগরি! ‘মায়ের শাড়ি’ আদতে একটা অনুভূতি!
এ বার পুজোয় মায়ের কোন শাড়িটা পরছেন তা হলে?
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy