যিশুখৃষ্টের জন্মের আগে থেকেই নারীর সঙ্গী শাড়ি। সিন্ধু সভ্যতাতেও সেলাইবিহীন বস্ত্রখণ্ডের হদিস মিলেছে। খৃষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতাব্দীতে প্রাচীন ব্রজ মথুরা নারীর ভাস্কর্য পাওয়া গেছে শাড়ি পরিহিতা। তাই শাড়ি নারীর চিরন্তন পোশাক এ কথা অনায়াসে বলা যায়। এ বছরের কোভিড অতিমারির সঙ্গে লড়তে লড়তে ক্লান্ত মেয়েরা পুজোয় প্যান্ডেলে যাক বা না যাক, শাড়ির সঙ্গে তাঁদের চিরকালীন বন্ধুতা।
কিশোরী থেকে তরুণী সকলেই পুজোর একটা দিন শাড়ি পরতে চান। এ বারের অন্যরকম পুজোয় বারান্দায় পায়চারি করার জন্যেও শাড়ি চাই। হালকা শাড়ির সঙ্গে ডিজাইনার ব্লাউজ কিংবা অন্য ড্রেপিং করে শাড়ি পরে ভিড়ের মাঝে স্বতন্ত্র থাকা যায়।
মারাঠিদের মতো করে কাছা দিয়ে অথবা খাসি স্টাইলে দুদিকের কাঁধে ব্রোচ লাগিয়ে অন্য স্টাইলে শাড়ি পরলেও দারুণ ভাল লাগবে। ইতিহাস বলছে ভারতেই প্রথম তুলোর চাষ হয়েছে। সেই তুলো থেকে সুতো বানিয়ে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম সব জায়গাতে স্থানীয় বস্ত্রশিল্পীরা তাঁদের নিজস্ব ঘরানার শাড়ি বানান।
আরও পড়ুন: অষ্টমীতে যে মেয়ের সঙ্গে আইসক্রিম খাওয়ার কথা, মাস্ক পরা এ সে তো?
হালকা শাড়ির সঙ্গে ডিজাইনার ব্লাউজ পরে ভিড়ের মাঝে স্বতন্ত্র থাকা যায়।
সাদা সুতো রাঙিয়ে তোলেন হরিতকী, ইন্ডিগো বা নীল গাছের থেকে পাওয়া রঙে। আর সবার প্রিয় রং লাল তো আছেই। রঙবেরঙের জেল্লাদার নানা বুননের শাড়ির ঐতিহ্যকে সবার কাছে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন শাড়ি গবেষক শিল্পী ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। বিগত কয়েক বছর ধরে ইন্দ্রাণী নিতান্তই নিজের শখ পূরণে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের তাঁতিদের ঘরে পৌঁছে গিয়ে নিজের মন পসন্দ শাড়ি খুঁজে বাড়াতেন। সেই নেশাকেই পেশায় পরিণত করলেন বছর পাঁচেক আগে।
নিজস্ব ঘরানার হাতে বোনা শাড়ির সম্ভার নিয়ে গড়ে তুললেন স্বপ্নের বুটিক ইন্ডিয়া-লুমস। ওড়িশার সম্বলপুর, কটক থেকে কেরল, মণিপুর, লাভপুর, অসম মায় বাংলাদেশের তাঁতি পাড়ায় অবাধ বিচরণ ইন্দ্রাণীর। তেলিয়া কটন থেকে শুরু করে গাদওয়াল, চান্দেরি, মাহেশ্বরী, হাতে বোনা মখমলি কাঞ্জিভরম, ইক্কত, তসর, সিল্ক, তাঁত, রেশম, কী নেই ইন্ডিয়ালুমসের সম্ভারে! এখানকার প্রতিটি শাড়িই এক্সক্লুসিভ। আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে পরম মমতায় বোনা শাড়ির ডিজাইনে কিছুটা হেরফের করে অন্য মাত্রা যোগ করেন ইন্দ্রাণী তাঁত শিল্পীদের পাশে বসে। সামান্য বুননের বদলে শাড়ি হয়ে ওঠে অনন্য। এমন শাড়ি একটা নিজের আলমারিতে না রাখা অবধি শান্তি পাওয়া যায় কি!
এ দিকে বেহালার তথ্যপ্রযুক্তি ইঞ্জিনিয়ার প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত চট্টোপাধ্যায়ের ঘটনাটা আবার অন্যরকম। একদিকে শাড়ির নেশা অন্যদিকে শিশুসন্তানকে সময় দেওয়া সব মিলে মোটা বেতনের চাকরি ছেড়ে শুরু করেন নন্দিনী বুটিক। বাংলার বিভিন্ন জায়গার তাঁত শিল্পীদের বুনন দেখে তাঁদের মধ্যে থেকেই কয়েক জনকে বাছাই করে নেন। ফুলিয়া, ধনেখালির তাঁত আর মুর্শিদাবাদ বিষ্ণুপুরের সিল্ক ছাড়াও অন্ধ্রপ্রদেশ, হায়দরাবাদ, কেরল-সহ নানা প্রদেশের শাড়ির সম্ভারেও সাজিয়ে তুলেছেন স্বপ্নের বুটিক। বেশ কয়েকজন মেয়েকে প্রশিক্ষণ দিয়ে শাড়িতে অ্যাপ্লিক, কাঁথা ও অন্য ডিজাইন করার পাশাপাশি কাছাকাছি এলাকায় ডেলিভারির ব্যবস্থাও করেছেন তিনি।
শাড়ি নারীর চিরন্তন পোশাক এ কথা অনায়াসে বলা যায়।
৫ বছর হতে চলল নতুন পেশায় মন দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। এ বারের কোভিড পরিস্থিতিতে লিনেন বেনারসি, তসর হ্যান্ড প্রিন্ট, ঢাকাই আর গাদওয়ালের চাহিদা বেশি, জানালেন তিনি। পুজো বলে লাল ঘেঁষা ভাইব্রেন্ট রং বেশি বিক্রি হচ্ছে, বললেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁতের শাড়ির দাম শুরু ৬৫০ টাকা থেকে, সিল্কের ৩০০০ টাকা থেকে। অনলাইনে ওয়েবসাইটের মাধ্যমেও প্রিয়াঙ্কা কুরিয়ারে শাড়ি পৌঁছে দেন। শাড়ির দক্ষিণাও সাধ্যের মধ্যেই।
আরও পড়ুন: উৎসবের সেলিব্রেশনে লাগুক রামধনুর ছোঁয়া
এ দিকে দক্ষিণার কথা জিজ্ঞাসা করতে ইন্দ্রাণী জানালেন ১০৫০ টাকা থেকে শুরু এক্সক্লুসিভ শাড়ি। মলমল তাঁত ছাড়াও আছে সিল্ক ও তসর। শাড়ির পাশাপাশি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ইন্দ্রানী সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের রেডিমেড কুর্তি ও টপ রেখেছেন। সল্টলেকের পিএনবি মোড়ের কাছে ইন্ডিয়ালুমস খোলা সকাল ১১ টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। এ ছাড়া কোভিডের জন্যে নিয়মিত শো-রুম স্যনিটাইজ ও দূরত্ববিধি মেনে চলা তো আছেই।
পুজো বলে উজ্জ্বল রঙের দিকে ঝোঁক বেশি। তবে পুজো স্পেশাল লাল সাদা কম্বিনেশন, রুপোলি ও ফিরোজা নীলের চাহিদা বেশ ভাল। সুন্দর শাড়ি ও পোশাক পরুন কিন্তু অবশ্যই ভিড় এড়িয়ে পুজোর কেনাকাটা করুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy