শরীর জড়ানো বারো হাতেই ফুটে ওঠে শরীরী বাঁকঝোঁক। শরীরের কিছুটা খোলা আর কিছুটা ঢাকার মধ্যে যে উষ্ণতা ধরা পরে, তা যেন আর অন্য পোশাকে কিছুতেই আসে না। তাই বাঙালি মহিলাদের কাছে শাড়ি কেবল ফ্যাশন নয়। আস্ত একটা দেশের নানা কেতার উপস্থিতি যেন। “ভারতের ঐতিহ্য আর আধুনিকতা মিশে আছে শাড়ির শরীরে। শাড়ির ছড়ানো রং, সুতোর বুনোট, কারুকাজ আমাকে ভারতকে চিনতে শেখায়। যে কোনও লুকেই এই বারো হাতের উপস্থিতি সকলের নজর কেড়ে নেয়। কেউ যদি এলিগেন্ট লুক চান তো তাঁকে শাড়ির কাছে আসতেই হবে। আবার কেউ যদি দুঃসাহসী হতে চান শাড়ি ছাড়া আর কিছু পরার নেই। শাড়িতেই শরীর খোলে”, জানালেন পাওলি।
শাড়ি শুধু পরেই খালাস নন। শাড়িকে তিনি ভালবাসেন। আগলে রাখেন। অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী। ক্লাস টেনের শাড়িও অতি যত্নে রাখা আছে তাঁর ওয়াড্রোবে। এ বার পুজোয় সাবেকী রাস্তায় হাঁটছেন গার্গী। 'সব রাজ্য থেকে একটা করে শাড়ি কিনেছি। কনিষ্ক আমার সবচেয়ে প্রিয় দোকান। ওখান থেকে জরি নয়, রেশমের কাঞ্জিভরম কিনেছি। এ ছাড়া কিনেছি পুরনো কল্কার ধনেখালি। বোমকাই। লিনেন আবার আমার একদম ভাল লাগে না। সব মিলিয়ে দশটা শাড়ি হয়ে গিয়েছে’।’ হাসলেন গার্গী। শাড়ির মাধুর্য রক্ষা নিয়ে তিনি বরাবর খুঁতখুঁতে, ‘‘নিজেকে আকর্ষণীয় করতে শুধু পিঠখোলা ব্লাউজ বা ফিতে দেওয়া ব্লাউজ পরলেই হল না। শাড়ির মাধুর্য ওতে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। পিঠবন্দী ব্লাউজও ভারী শাড়ির সঙ্গে চমৎকার মানায়। দেখুন তো রেখাকে!’’ সতর্কবাণী গার্গীর।
অন্য দিকে রিলেশনশিপ ম্যানেজার সুনয়নার মতে, “আসলে পুজোর সঙ্গে শাড়ির একটা ভক্তিযোগ আছে। সেখানে শাড়িটাই চলে। সারা বছর শাড়ি পরার কথা না ভাবলেও পুজোতে শাড়ি ছাড়া অন্য কিছু ভাবা যায় না। আর যে কোনও বয়সের পুরুষই হোক না কেন, শাড়ির প্রতি আকৃষ্ট তাঁরা হবেনই। শরীর আরও খোলামেলা হয় শাড়ির খামখেয়ালে।”
পুরুষের চোখে কেমন করে আকর্ষণীয় করে তুলবেন শাড়িতে?
অল্পবয়সিদের রেডি শাড়ি
শরীর বুঝে শাড়ি বাছুন, বলছেন ডিজাইনার অনুশ্রী মলহোত্র। নিয়ন রঙের একই শেডের হালকা থেকে গাঢ় হয়ে আসা শিফন, ক্রেপ বা জর্জেট শাড়ির এ বারে খুব কদর। অনলাইনে শাড়ি কেনা এখন জলভাত। অনলাইন বিক্রেতা বিপাশা দত্ত বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন “এ বার ফ্যাশনের সঙ্গে পা মেলাতে শিফন, ক্রেপ, জর্জেট শাড়ির উওপর বেনারসি বুটি খুব জনপ্রিয়। এ ছাড়া কলকাতার বাঙালির মধ্যে বিষ্ণুপুরি শাড়িতে ব্লকের চাহিদা খুব। আর তার সঙ্গে জরি বর্ডারের তসর।’’ আসলে ফ্যাশন মানে যা চলছে তা পরা নয় কিন্তু, ফ্যাশন মানে শরীর বুঝে নিজস্ব স্টাইল তৈরি করা।
আরও পড়ুন: গায়ত্রী দেবী, উত্তমকুমার ও রণবীর সিংহের সাজেই বাজিমাত করুন এ বার
ফ্যাশন ডিজাইনার অনুপম চট্টোপাধ্যায় আবার বলছেন সম্পূর্ণ অন্য কথা। তাঁর মতে, ‘‘টিনএজাররা এখন শাড়ির দিকে ঝুঁকছেন। তবে জরি, ব্রোকেড একদম নয়। মলমল, লিনেনের শাড়ি সঙ্গে টি শার্ট বা ক্রপ টপ। এর মাঝে পার্টি লুক চাইলে ওয়েস্ট লাইনে একটা বেল্ট চলতে পারে। সারা বছর সহজে পরা যায় এমন শাড়ির চাহিদা এ বার বেশি।’’
বিকিনি ব্লাউজ দিয়ে ক্লিভেজ দেখানোই কিন্তু আজকের নারীর শাড়ি পরার শেষ কথা নয়। ভারী চেহারায় সেক্সি লুক আনতে কাঞ্জিভরম, হাই হিল কনুইয়ের আগে অবধি ডিপ কাট ব্লাউজের আবরণও শরীরী আকাঙ্ক্ষাকে পূর্ণতা দিতে পারে বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার প্রণয় বৈদ্য।
‘শ্রিদা’ বুটিকের নম্রতা যেমন বললেন, ‘‘এ বার পিঠে কাজ করা ব্লাউজের খুব চাহিদা। সঙ্গে হাতে একটু ফ্রিল। এই ধরণের ব্লাউজগুলো অনেকেই স্টোরের লিনেন শাড়ির সঙ্গে পরছেন। তবে যাঁরা হাজার টাকায় শাড়ি কিনে ভাবছেন লিনেন শাড়ি কিনলেন এটা একেবারেই ভুল। এই শাড়ি চার হাজারের কাছাকাছি দাম হয়। মখমলি জমি এই শাড়ির বৈশিষ্ট্য।’’ বললেন নম্রতা মজুমদার। বাহারি ব্লাউজের জন্য তাঁর স্টোরে বেশ ভিড় বাড়ছে।
উৎসবের দিনগুলোয় এ শহরের নন্দিনীদের সাবেক শাড়িতেই দেখতে ভালবাসেন ডিজাইনার চন্দ্রাণী সিংহ ফ্লোরা। বললেন, “পুজোয় বাঙালি মেয়়েদের শাড়িতেই ভাল দেখায়। তাঁত, হ্যান্ডলুম, ক্রেপ, জর্জেট, সিল্ক এমব্রয়ডারি যে কোনও শাড়িই এ দিনগুলির উপযোগী। শাড়ির সঙ্গে লেগিংসের মতো এক্সপেরিমেন্টাল সাজের কথাও ভাবা যেতে পারে। তবে তাতে স্বচ্ছন্দ হতে পারলে, তবেই। চন্দ্রাণীর মতে, রঙের ক্ষেত্রে পুজোর ফ্যাশনে ‘ইন’ গ্রে, পিঙ্ক, লাইম গ্রিন'।
আরও পড়ুন: ফ্যাশনে কম যান না পুরুষও, কী ভাবে নজর কাড়বেন মহিলা মহলে?
দীর্ঘ দিন ধরে শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন গোপা রায়। জানালেন, ‘‘এ বার পুজোয় তসরের ওপর প্রিন্ট। দক্ষিণী গাদোয়াল। হ্যান্ডলুমের শাড়ি খুব জনপ্রিয় হয়েছে। এছাড়াও গুজরাটি বা কাঁথা কাজের শাড়ির ও চাহিদা ছিল'।
অভিনেত্রী অমৃতা চট্টোপাধ্যায় মা শর্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘তুষ্টি’-তে তসর থেকে হ্যান্ড উইভ শাড়ির সম্ভারে তাঁদের ক্রেতাদের তুষ্ট করেছেন। ‘‘এ বার সবচেয়ে বিক্রি হয়েছে টিসু লিনেন আর সিল্ক লিনেন। হাল্কা শাড়ি। একটা পুজো লুকও আছে। সিলভার গয়না দিয়ে পরলে চমৎকার লাগবে।’’ বললেন অমৃতা।
হাতে বোনা লিনেন রোম্যান্স
গড়িয়াহাটের শাড়ির দোকান থেকে বুটিকের কেনাকাটায় কান পাতলে শোনা যাচ্ছে এ বারের শেষ পুজো বাজারে ক্রেপ, জর্জেটের রাজত্বের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে হ্যান্ড ওভেন লিনেন শাড়ি, মলমল তো অন্য দিকে প্রাদেশিক শাড়িও। “হাতে গুলে রং তৈরি করা হয় বলে এই শাড়িতে যে কোনও রং খুব উজ্জ্বল হয়ে ধরা দেয়। আর মাখনের মতো নরম ফেব্রিক আমাদের মতো গরমের দেশের জন্য একেবারে আদর্শ।” বললেন নম্রতা মজুমদার। তাঁর আশি কাউন্টের লিনেন শাড়ির চাহিদা খুব বেশি। ‘‘নকল হাজার টাকার লিনেন নয়। লিনেনের মর্যাদা যাঁরা বোঝেন, তাঁরাই এই শাড়ি কেনেন।’’ বললেন নম্রতা।
হল্টার ব্লাউজ বা ফুল স্লিভস ব্লাউজ। লিনেন বা বালুচরী ক্রপ টপ বা টি শার্ট দিয়ে মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে শাড়ি জড়িয়ে নিন শরীরে। প্যান্ডেলে, সন্ধিপুজোর পদ্ম আপনার শরীরেই প্রথম পাপড়ি মেলুক।
কিছু সাবধানতা
মেদ থাকলে শিফন, নেট বা সি-থ্রু শাড়ি চলবে না।
যে শাড়িই পরুন, ফিটেড পেটিকোট অবশ্যই পরতে হবে। না হলে শরীরের বাঁক বোঝা যাবে না।
শাড়ির সঙ্গে হাই হিল পরতেই হবে। স্টিলেটো ম্যানেজ করতে না পারলে প্ল্যাটফর্ম হিল পরুন।
হাতের দিকে মেদ থাকলে স্লিভলেস বা হল্টার এড়িয়ে চলুন।
যে কোনও শরীরেই (অতিরিক্ত মোটা বাদে) উষ্ণতা ছড়াতে খোলা পিঠের ব্লাউজ ব্যবহার করুন। শরীরের সঙ্গে না গেলে পিঠবন্দি ব্লাউজেই আনুন সাজের রহস্য।
মোটারা সাহসী হতে চাইলে ক্রেপ পরুন। শরীর দেখা যাবে না। আর আঁচল প্লিট না করে খুলে রাখুন।
শাড়ির সঙ্গে ফিটেড লঁজারি দরকার। তাই একটু বেশি দামের লঁজারি পরুন।
মেদ থাকলে শিফন, নেট বা সি-থ্রু শাড়ি চলবে না।
যে শাড়িই পরুন, ফিটেড পেটিকোট অবশ্যই পরতে হবে। না হলে শরীরের বাঁক বোঝা যাবে না।
শাড়ির সঙ্গে হাই হিল পরতেই হবে। স্টিলেটো ম্যানেজ করতে না পারলে প্ল্যাটফর্ম হিল পরুন।
হাতের দিকে মেদ থাকলে স্লিভলেস বা হল্টার এড়িয়ে চলুন।
যে কোনও শরীরেই (অতিরিক্ত মোটা বাদে) উষ্ণতা ছড়াতে খোলা পিঠের ব্লাউজ ব্যবহার করুন। শরীরের সঙ্গে না গেলে পিঠবন্দি ব্লাউজেই আনুন সাজের রহস্য।
মোটারা সাহসী হতে চাইলে ক্রেপ পরুন। শরীর দেখা যাবে না। আর আঁচল প্লিট না করে খুলে রাখুন।
শাড়ির সঙ্গে ফিটেড লঁজারি দরকার। তাই একটু বেশি দামের লঁজারি পরুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy