Advertisement

Associate Partner

Style Partner

Associate Partner

Weddings Partner

Food Partner

Satyajit Ray

Satyajit Ray: সত্যজিতের শাড়ি আর সত্যজিতের নারী

বাংলা ছবি নির্মাণের সময় ১২ হাতের বুনোটে একে একে বেরিয়ে আসে তাঁর বর্ণিল ভাবনা।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২১ ১৮:০৬
Share: Save:
০১ ১২
১৯৪০-এ কলকাতায় পড়াশোনার পাট চুকিয়ে সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনে যান কলাভবনে ছবি আঁকা শিখতে। এর বছর কয়েক আগে কলকাতায় এক সাহিত্য সভায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় রবীন্দ্রনাথের। তিনি বলেছিলেন, “আমার আশ্রমে চলে এসো না কিছু দিনের জন্য।” পরে মায়ের কাছে সত্যজিৎ শুনেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের নাকি এটি অনেক দিনের ইচ্ছে।

১৯৪০-এ কলকাতায় পড়াশোনার পাট চুকিয়ে সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনে যান কলাভবনে ছবি আঁকা শিখতে। এর বছর কয়েক আগে কলকাতায় এক সাহিত্য সভায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয় রবীন্দ্রনাথের। তিনি বলেছিলেন, “আমার আশ্রমে চলে এসো না কিছু দিনের জন্য।” পরে মায়ের কাছে সত্যজিৎ শুনেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের নাকি এটি অনেক দিনের ইচ্ছে।

০২ ১২
কলকাতার এত আকর্ষণ সত্ত্বেও কলাভবনের প্রতি অনুরাগ ও সেই সঙ্গে শিল্প চর্চায় আসক্তি ক্রমশ গাঢ় হচ্ছিল তাঁর। ১৯৪১ সালের ৩১ জুলাই তারিখে লিখছেন: ‘মাষ্টারমশাইর আন্ডারে কাজ করতে খুব ভাল লাগছে।...’ প্রায় প্রতি চিঠিতেই ‘মাস্টারমশাই’ অর্থাৎ নন্দলাল বসুর কথা, পাশাপাশি শিক্ষার্থী-বন্ধু পৃথ্বীশ নিয়োগী, সকল সুরিয়া, দিনকর কৌশিক, এঁদের সংস্পর্শ  সত্যজিতের শৈল্পিক চালচিত্রকে নান্দনিকতার এক বিশাল প্রান্তরে নিয়ে যায়।

কলকাতার এত আকর্ষণ সত্ত্বেও কলাভবনের প্রতি অনুরাগ ও সেই সঙ্গে শিল্প চর্চায় আসক্তি ক্রমশ গাঢ় হচ্ছিল তাঁর। ১৯৪১ সালের ৩১ জুলাই তারিখে লিখছেন: ‘মাষ্টারমশাইর আন্ডারে কাজ করতে খুব ভাল লাগছে।...’ প্রায় প্রতি চিঠিতেই ‘মাস্টারমশাই’ অর্থাৎ নন্দলাল বসুর কথা, পাশাপাশি শিক্ষার্থী-বন্ধু পৃথ্বীশ নিয়োগী, সকল সুরিয়া, দিনকর কৌশিক, এঁদের সংস্পর্শ সত্যজিতের শৈল্পিক চালচিত্রকে নান্দনিকতার এক বিশাল প্রান্তরে নিয়ে যায়।

০৩ ১২
বাংলা ছবি নির্মাণের সময়ে ১২ হাতের বুনোটে একে একে বেরিয়ে আসে তাঁর বর্ণিল ভাবনা। সত্যজিৎ রায়ের  জন্মশতবর্ষে ‘আনন্দবাজার অনলাইন’ খুঁজে পেল তাঁর ভাবনার ১২ হাতের মায়া। দুর্গা পুজোয় আনন্দ উৎসবের গ্যালারি সেজে উঠল  ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র জয়া, ‘ঘরে বাইরে’-র বিমলা, ‘পথের পাঁচালী’-র সর্বজয়ার হারিয়ে যাওয়া শাড়িতে। এই শাড়ি পুনর্জন্ম লাভ করল শিক্ষক শৈবাল বসুর পরামর্শে, শিল্পী শ্যাম বিশ্বাসের ভাবনায়। “এই শাড়ি বোনাতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কেউ মখমলে এই ধাঁচের শাড়ি বুনতে রাজি হচ্ছিলেন না”, বললেন শ্যাম।

বাংলা ছবি নির্মাণের সময়ে ১২ হাতের বুনোটে একে একে বেরিয়ে আসে তাঁর বর্ণিল ভাবনা। সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষে ‘আনন্দবাজার অনলাইন’ খুঁজে পেল তাঁর ভাবনার ১২ হাতের মায়া। দুর্গা পুজোয় আনন্দ উৎসবের গ্যালারি সেজে উঠল ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র জয়া, ‘ঘরে বাইরে’-র বিমলা, ‘পথের পাঁচালী’-র সর্বজয়ার হারিয়ে যাওয়া শাড়িতে। এই শাড়ি পুনর্জন্ম লাভ করল শিক্ষক শৈবাল বসুর পরামর্শে, শিল্পী শ্যাম বিশ্বাসের ভাবনায়। “এই শাড়ি বোনাতে গিয়ে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে। কেউ মখমলে এই ধাঁচের শাড়ি বুনতে রাজি হচ্ছিলেন না”, বললেন শ্যাম।

০৪ ১২
‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র জয়া বা কাবেরী বসুর মেমোরি গেমের দৃশ্য। তিনি যখন কানের কাছে হাতের উপর ভর করে মাদুরের উপর আধশোওয়া ভঙ্গিতে আলগা হলেন তখন সেই সাদা ঢাকাইয়ের কালো পাড়ের নকশা তার শরীরে ঢেউ খেলিয়ে দর্শকের মনে জমাট হয়ে গিয়েছিল।

‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র জয়া বা কাবেরী বসুর মেমোরি গেমের দৃশ্য। তিনি যখন কানের কাছে হাতের উপর ভর করে মাদুরের উপর আধশোওয়া ভঙ্গিতে আলগা হলেন তখন সেই সাদা ঢাকাইয়ের কালো পাড়ের নকশা তার শরীরে ঢেউ খেলিয়ে দর্শকের মনে জমাট হয়ে গিয়েছিল।

০৫ ১২
নৃত্যশিল্পী মধুবনী চট্টোপাধ্যায় শ্যামের তৈরি জয়ার সেই শাড়িতেই মনে করিয়ে দিলেন কাবেরী বসু তথা জয়াকে।

নৃত্যশিল্পী মধুবনী চট্টোপাধ্যায় শ্যামের তৈরি জয়ার সেই শাড়িতেই মনে করিয়ে দিলেন কাবেরী বসু তথা জয়াকে।

০৬ ১২
‘চারুলতা’। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে দীর্ঘ দিন জমিদারি দেখভালে ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ফিরে ‘নষ্টনীড়’ গল্পটি লিখলেন। প্রথম প্রকাশের ৬৪ বছর বাদে সত্যজিতের হাত ধরে এই গল্প ‘চারুলতা’ হিসাবে পেয়েছে নতুন এক মাত্রা।

‘চারুলতা’। ১৯০১ সালে শিলাইদহ থেকে দীর্ঘ দিন জমিদারি দেখভালে ক্লান্ত রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ফিরে ‘নষ্টনীড়’ গল্পটি লিখলেন। প্রথম প্রকাশের ৬৪ বছর বাদে সত্যজিতের হাত ধরে এই গল্প ‘চারুলতা’ হিসাবে পেয়েছে নতুন এক মাত্রা।

০৭ ১২
চারুলতার ডুরে শাড়িতে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মনে করিয়ে দিলেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের কথা। “সত্যজিৎ রায় চারুলতার শাড়ি নিজের ভাবনায় তৈরি করে নিয়েছিলেন,” বলেছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়।

চারুলতার ডুরে শাড়িতে অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত মনে করিয়ে দিলেন অভিনেত্রী মাধবী মুখোপাধ্যায়ের কথা। “সত্যজিৎ রায় চারুলতার শাড়ি নিজের ভাবনায় তৈরি করে নিয়েছিলেন,” বলেছেন মাধবী মুখোপাধ্যায়।

০৮ ১২
সত্যজিতের ছবিতে শাড়ি শুধু পোশাক হয়ে থেকে যায়নি। বিভিন্ন চরিত্র হয়ে ধরা দিয়েছে। সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ ছবিতে এই সর্বজয়ার চরিত্রকে রূপ দিতে ডেকে নিয়েছিলেন বাল্যবন্ধু ও সহকর্মী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী করুণাকে। আর তার পরে করুণা ও সর্বজয়া মিশে গিয়েছিল এক অভিন্ন সত্তায়।

সত্যজিতের ছবিতে শাড়ি শুধু পোশাক হয়ে থেকে যায়নি। বিভিন্ন চরিত্র হয়ে ধরা দিয়েছে। সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’ ছবিতে এই সর্বজয়ার চরিত্রকে রূপ দিতে ডেকে নিয়েছিলেন বাল্যবন্ধু ও সহকর্মী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী করুণাকে। আর তার পরে করুণা ও সর্বজয়া মিশে গিয়েছিল এক অভিন্ন সত্তায়।

০৯ ১২
 করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ভাঙা বাড়িতে ছেঁড়া শাড়ি পরা সর্বজয়া। উঁচু করে খোঁপা বেঁধে, নাকছাবি, মাদুলি আর টিপ পরে আমার মনে হত, এই আমার সত্যিকারের সংসার।” বনের গুল্ম লতার মতোই  সর্বজয়ার মেঠো সংসারে তাঁর শরীরে সত্যজিৎ পরিয়েছিলেন কুঞ্জলতা পাড়ের শাড়ি। শ্যাম সেই কুঞ্জলতা পাড়ের শাড়ির জন্ম দিলেন। যা উন্মোচিত হল নৃত্যশিল্পী রীণা জানার মাধ্যমে।

করুণা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “ভাঙা বাড়িতে ছেঁড়া শাড়ি পরা সর্বজয়া। উঁচু করে খোঁপা বেঁধে, নাকছাবি, মাদুলি আর টিপ পরে আমার মনে হত, এই আমার সত্যিকারের সংসার।” বনের গুল্ম লতার মতোই সর্বজয়ার মেঠো সংসারে তাঁর শরীরে সত্যজিৎ পরিয়েছিলেন কুঞ্জলতা পাড়ের শাড়ি। শ্যাম সেই কুঞ্জলতা পাড়ের শাড়ির জন্ম দিলেন। যা উন্মোচিত হল নৃত্যশিল্পী রীণা জানার মাধ্যমে।

১০ ১২
রবীন্দ্র কাহিনির একটি সংযোজন ‘ঘরে বাইরে’ (১৯৮৪)। ছবিটি স্বদেশী ভাবনার উপরেই চিত্রায়িত হলেও  বিমলা, নিখিলেশ আর সন্দীপের রসায়ন এই ছবির মানবিক রসায়নকে সামনে এনেছে। শেষে বিমলার সিঁদুরের টিপ মুছে গিয়েছে কপাল থেকে, রঙিন শাড়ি পাল্টে হয়েছে সাদা থান। বিমলার জীবনে দুই ভাললাগার পুরুষ একজন নিখিলেশ আর এক জন সন্দীপ। ঠিক তেমনই বিমলার শাড়ি। কালো জমির নরম বুনটে চওড়া লাল পাড়ের কস্তা শাড়ি যেন প্রেমের স্পর্ধা হয়ে আসে। মাঝে সরু সাদা রঙের ব্যবহার বিমলাকে রিক্ত করে দেয়। শাড়িতেই থেমে থাকেননি শ্যাম। সূক্ষ্ম সুতোর কাজের বাহারে হুবহু মিলিয়ে দিয়েছেন বিমলার ব্লাউজ। বাংলায় একদা জ্যাকেটের ব্যবহার থেকে সত্যজিৎ বিমলার মুক্তির আনন্দকে ব্লাউজের রঙিন সুতোর কাজে গেঁথে দিয়েছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী থেকে কাদম্বরী, শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট পরতেন। সত্যজিতের বিমলার ঘর থেকে বাইরে এলেন ব্লাউজ পরে।

রবীন্দ্র কাহিনির একটি সংযোজন ‘ঘরে বাইরে’ (১৯৮৪)। ছবিটি স্বদেশী ভাবনার উপরেই চিত্রায়িত হলেও বিমলা, নিখিলেশ আর সন্দীপের রসায়ন এই ছবির মানবিক রসায়নকে সামনে এনেছে। শেষে বিমলার সিঁদুরের টিপ মুছে গিয়েছে কপাল থেকে, রঙিন শাড়ি পাল্টে হয়েছে সাদা থান। বিমলার জীবনে দুই ভাললাগার পুরুষ একজন নিখিলেশ আর এক জন সন্দীপ। ঠিক তেমনই বিমলার শাড়ি। কালো জমির নরম বুনটে চওড়া লাল পাড়ের কস্তা শাড়ি যেন প্রেমের স্পর্ধা হয়ে আসে। মাঝে সরু সাদা রঙের ব্যবহার বিমলাকে রিক্ত করে দেয়। শাড়িতেই থেমে থাকেননি শ্যাম। সূক্ষ্ম সুতোর কাজের বাহারে হুবহু মিলিয়ে দিয়েছেন বিমলার ব্লাউজ। বাংলায় একদা জ্যাকেটের ব্যবহার থেকে সত্যজিৎ বিমলার মুক্তির আনন্দকে ব্লাউজের রঙিন সুতোর কাজে গেঁথে দিয়েছিলেন। জ্ঞানদানন্দিনী থেকে কাদম্বরী, শাড়ির সঙ্গে জ্যাকেট পরতেন। সত্যজিতের বিমলার ঘর থেকে বাইরে এলেন ব্লাউজ পরে।

১১ ১২
অভিনেত্রী তুহিনা দাস যখন সেই লাল কালো আর সরু সাদার শাড়ি নিজের শরীরে জড়িয়ে নিলেন তখন যেন ঘর আর বাইরের প্রতীক হয়ে উঠলেন।

অভিনেত্রী তুহিনা দাস যখন সেই লাল কালো আর সরু সাদার শাড়ি নিজের শরীরে জড়িয়ে নিলেন তখন যেন ঘর আর বাইরের প্রতীক হয়ে উঠলেন।

১২ ১২
নারীর অন্দর কথা জানিয়ে গেল শাড়ি।  সত্যজিতের নায়িকার মতো সেজে উঠলেন কোয়েল মল্লিকও। কোয়েলের কথায়,   ‘‘পুজোয় আমার লাল পেড়ে সাদা শাড়ি সব চেয়ে প্রিয়।  শ্যাম  আমার জন্য ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র জয়ার মতোই সাদা-কালো নকশায় লাল রং ঢেলে দিয়েছেন । আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য  সেই শাড়িতেই সেজে উঠলাম।’’         কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কোয়েল মল্লিক, শৈবাল বসু, তুহিনা দাস, রীণা জানা, মধুবনী চট্টোপাধ্যায়

নারীর অন্দর কথা জানিয়ে গেল শাড়ি। সত্যজিতের নায়িকার মতো সেজে উঠলেন কোয়েল মল্লিকও। কোয়েলের কথায়, ‘‘পুজোয় আমার লাল পেড়ে সাদা শাড়ি সব চেয়ে প্রিয়। শ্যাম আমার জন্য ‘অরণ্যের দিনরাত্রি’-র জয়ার মতোই সাদা-কালো নকশায় লাল রং ঢেলে দিয়েছেন । আনন্দবাজার অনলাইনের জন্য সেই শাড়িতেই সেজে উঠলাম।’’ কৃতজ্ঞতা স্বীকার: ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, কোয়েল মল্লিক, শৈবাল বসু, তুহিনা দাস, রীণা জানা, মধুবনী চট্টোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy