Durga Puja 2020: The history and myths regarding the start of durgapujo dgtl
Durga Puja 2020
বারো ভুঁইয়া, পলাশির যুদ্ধ, বিপ্লবী আখড়া-দুর্গাপুজোর নানা কাহিনি
দু্র্গাপুজো মানেই তাই জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণির এক হয়ে ওঠা।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ১৪:৩০
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৩
বাঙালি মানেই দুর্গাপুজো। আর শারদীয়াই যে তাদের শ্রেষ্ঠ উৎসব,তা একবাক্যে স্বীকার করেন প্রত্যেকেই। পেঁজা তুলো মেঘ, কাশ ফুল, শিউলির সুবাস মানেই ‘শরৎ এসেছে গলির আকাশে’। দু্র্গাপুজো মানেই তাই জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সমাজের সকল শ্রেণির এক হয়ে ওঠা।
০২২৩
উৎসব বয়ে আনে শুভ চেতনা। এই বাংলায় দুর্গোৎসবের শুরু কীভাবে, প্রথম দুর্গাপুজো কারা করেন, বারোয়ারি দুর্গাপুজোর চলই বা কবে থেকে-পুরাণের নানা দিক তো আছেই। ইতিহাসের সঙ্গে কিছু ক্ষেত্রে মিলে গিয়েছে জনশ্রুতিও। জেনে নেওয়া যাক সে সবই।
০৩২৩
পুরাণ অনুযায়ী, আষাঢ় থেকে কার্তিক মাস দেবতাদের নিদ্রাকাল। দেবীর বোধন হয়েছিল এই অসময়েই। রাম-রাবণের যুদ্ধের সময় শ্রীরামচন্দ্রের প্রতি দেবীর কৃপা বর্ষণের জন্যই দুর্গা বোধন করেন ব্রহ্মা। কৃত্তিবাসী রামায়ণ বলছে, সমুদ্রে অভিযানের আগে রাম শক্তি প্রার্থনা করেন। রাবণবধ করে সীতাকে উদ্ধার করে আনতে আশ্বিনে দেবীর অকালবোধন করেছিলেন তিনি।বাংলার দুর্গাপুজো আজও সেই সময়েই হয়।
০৪২৩
বাল্মীকি-রচিত মূল রামায়ণে অবশ্য ঋষি অগস্ত্য রামচন্দ্রকে সীতা উদ্ধারের জন্য সূর্যের পুজো করতে বলেছিলেন।
০৫২৩
এ দিকে মার্কণ্ডেয় পুরাণ বলছে, চেদি রাজবংশের রাজা সুরথ খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছর আগে বর্তমান ওড়িশায়(কলিঙ্গ)দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে, রাজ্যহারা রাজা সুরথই প্রথম বাংলায় পুজো করে ৬০ হাজার বছর শান্তিতে রাজ্যশাসনের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন।
০৬২৩
মধ্যযুগেই বাংলা সাহিত্যে দুর্গাপুজোর অস্তিত্ব রয়েছে। বৈদিক সাহিত্যেও দুর্গার পরিচয় রয়েছে। বাংলাদেশে মুঘল আমল থেকেই ধনী পরিবারগুলিতে দুর্গাপুজো হত বলে জানা যায়।
০৭২৩
বারো ভুঁইয়ার এক জন ছিলেন বিক্রমাদিত্য। তাঁর পুত্র লক্ষ্মীকান্তকে ১৬০৮ সালে হালিশহর থেকে আটটি পরগনার নিষ্কর জমিদারির স্বত্ব প্রদান করেন রাজা মানসিংহ। মেলে ‘রায়চৌধুরী’ উপাধি।
০৮২৩
এর আগে হালিশহরে বছর দুয়েকের জন্য দুর্গাপুজো করলেও এ বার বড়িশা গ্রামে বড় আকারেপুজো শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন লক্ষ্মীকান্ত রায়চৌধুরী। এটিই ‘সাবর্ণ রায়চৌধুরীর বাড়ির পুজো’।
০৯২৩
কোনও কোনও গবেষকের মতে,এর আগে তাহিরপুরের রাজা কংসনারায়ণ বা ভাদুরিয়ার রাজা জগৎনারায়ণের পুজোর যে বর্ণনা পাওয়া যায়,তাতে দুর্গামূর্তির সঙ্গে লক্ষ্মী, সরস্বতী বা কার্তিক, গণেশ ছিলেন না।
১০২৩
আগে দেবীকে মূলত চণ্ডীরূপে পুজো করা হত। এই প্রথম দেবীকে সপরিবার আবাহন করলেন লক্ষ্মীকান্ত। কার্তিকের চেহারায় কিছু পরিবর্তন আনা হল। পণ্ডিতরা সেই সময়ে বিধান দিলেন, দেবীর গায়ের রং হতে হবে স্বর্ণাভ বা শিউলি ফুলের বৃন্তের মতো।
১১২৩
১৬১০ সালে পুজো শুরুসাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবারে। কাঠের থামের উপর হোগলা পাতার ছাউনি দেওয়া আটচালা মণ্ডপে চালু হয় দেবী-আরাধনা।
১২২৩
একাংশের মতে,১৫০০ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে দিনাজপুরের জমিদার প্রথম দুর্গাপুজো করেন। কেউ বলেন, ১৫১০ সালে কুচ বংশের রাজা বিশ্ব সিংহই প্রথম আজকের কোচবিহারে দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিলেন।
১৩২৩
কোথাও উল্লেখ রয়েছে ১৬ শতকে নদিয়ার মজুমদার পরিবারে দুর্গাপুজোর সূচনা। নদিয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বিখ্যাত দুর্গোৎসবের কথাও উল্লেখ রয়েছে একাধিক বইয়ে। ‘সমাচার দর্পণে’ উল্লেখ রয়েছে প্রচুর অর্থব্যয় করে কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়ির দুর্গা বিসর্জনের কথাও।
১৪২৩
পলাশির যুদ্ধের পরে, অর্থাৎ ১৭৬০ সাল নাগাদ কলকাতায় জাঁকজমক করে করে প্রথম দুর্গাপুজোর শুরু।ইতিহাস বলছে এমনটাই। ধুমধাম করে এ পুজো করতেন রাজা নবকৃষ্ণদেব। ব্রিটিশ শাসকের আনুকূল্যে ‘রায়বাহাদুর’ উপাধি পেতে তাঁর বিলম্ব হয়নি।
১৫২৩
শোনা যায়, পলাশি যুদ্ধে ব্রিটিশদের জয়লাভের পরে রাজা নবকৃষ্ণ দেবের পুজো চলেছিল ১০০ দিন ধরে। সাহিত্যিক বিমল মিত্রের বইয়েও উল্লেখ রয়েছে এ কথার।
১৬২৩
দর্পনারায়ণ ঠাকুরের বাড়িতেও জাঁকজমক করে উৎসব হত। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের আত্মজীবনীতেও উল্লেখ রয়েছে ঠাকুরবাড়ির পুজোর কথা। তবে এ বাড়ির পুজোয় পশুবলি হত না।সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায়তার উল্লেখ রয়েছে ।
১৭২৩
পরবর্তীতে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ১০ নম্বরি আইন জারি করে পুজো-পার্বণে সাহেবদের যোগদান নিষিদ্ধ করে। তবে অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ১৯ শতকের মাঝামাঝি অবধি দুর্গোৎসবই ছিল কলকাতার শ্রেষ্ঠতম সামাজিক উৎসব।
১৮২৩
আর একটি মত বলছে, মৃন্ময়ী রূপে দুর্গার প্রতিষ্ঠা করেন বাঁকুড়ার মল্লরাজ বীর হাম্বির।সময়টা ১৬০১ সাল। সেই দেবীরূপই প্রকারভেদে কোথাও নবরাত্রিতে নবদুর্গা, কোথাও বা দশভুজা হিসেবে পূজিত হয়।
১৯২৩
বাঙালির দুর্গার মহিষমর্দিনী রূপটি দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতক থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যে প্রচলিত হয়েছিল। বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক সংগ্রহশালায় রয়েছে সেকালের নানা ভাস্কর্য। মুকুন্দরাম চক্রবর্তীর কবিকঙ্কন চণ্ডীতে দশভুজা দুর্গার মহিষমর্দিনী রূপ দেখা যায়। পরিবারের অন্য সদস্যরা, অর্থাৎ শিব, লক্ষ্মী-সরস্বতী, কার্তিক-গণেশও সেখানে উপস্থিত।
২০২৩
১৭৯০ সাল নাগাদ কলকাতার কাছে হুগলির গুপ্তিপাড়ায় ১২ জন ব্যক্তি প্রথম একজোট হয়ে একটি পুজোর আয়োজন করেন। সেখানেই সূত্রপাত আজকের বারোয়ারি পুজোর।
২১২৩
মনে করা হয়, ভবানীপুর অঞ্চলের বলরাম বসু ঘাট রোডের ‘সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভা’র উদ্যোগে আয়োজিত পুজোটিই এ শহরের প্রথম বারোয়ারি পুজো। সেটা ১৯১০ সাল। রামধন মিত্র লেন এবং শিকদার বাগান লেনে ১৯১১-১৯১৩ নাগাদ দুর্গাপুজো শুরু হয়।
২২২৩
বিপ্লবী অতীন্দ্রনাথ বসু ১৯২৬ সালে সিমলা ব্যায়াম সমিতির উদ্যোগে পুজোর আয়োজন করেন। কারণ সেই সমিতি ছিল বিপ্লবীদের শরীরচর্চার আখড়া।ধর্মীয় উৎসবের অন্তরালে আসলে প্রতিটি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করাই ছিল উৎসবের উদ্দেশ্য। এই উদ্যোগে যুক্ত ছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও।
২৩২৩
দুর্গোৎসব আসলে ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-জাত নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার বার্তা-যে কোনও শুভশক্তির আবাহনে যা সব সময় জরুরি। এই শারদোৎসবও বয়ে আনুক শান্তির বার্তা। (তথ্য- মার্কণ্ডেয় পুরাণ, অগ্নিপুরাণ, কবিকঙ্কন চণ্ডী, চিত্রা দেবের মহিলাদের চোখে দুর্গাপুজো, অগ্নিপুরাণ, সন্ধ্যাকর নন্দীর রামচরিত, টি গোপীনাথরাও-এলিমেন্টস অব হিন্দু আইকনোগ্রাফি)