Durga Puja 2020: Jamdani is the most artistic textile of Bengal weavers dgtl
Durga Puja 2020
নামের শিকড় সুদূর পারস্যে, কয়েক হাজার বছর ধরে জামদানিতে সাজছেন ভারতীয় ললনা
কখনও আটপৌরে, কখনও জমকালো, সংস্কৃত ‘শাটী’ আজও সাজিয়ে তোলে ভারতীয় নারীকে। ‘শাড়ি’-তে এসে সহজ হয়েছে উচ্চারণ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২০ ১৮:২৭
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
অজন্তা ইলোরার ফ্রেস্কো থেকে নিশ্চিন্দিপুরে সর্বজয়ার মলিন তোরঙ্গ- তার উপস্থিতি সব জায়গায়। কখনও আটপৌরে, কখনও জমকালো, সংস্কৃত ‘শাটী’ আজও সাজিয়ে তোলে ভারতীয় নারীকে। ‘শাড়ি’-তে এসে সহজ হয়েছে উচ্চারণ। পরার ধরন বেড়েছে হরেক রকম। হাজারো অফ শোল্ডারের ভিড়েও আভিজাত্যের শেষ কথা সেই বারো হাত কাপড়ের সাতকাহন। (ছবি সৌজন্য:ফেসবুক)
০২১৮
কিছু শাড়ি আজন্ম কুলীন। তাদেরই একজন জামদানি। পরিচয়ের সঙ্গে ‘বঙ্গনারীর অঙ্গশোভা’ আখ্য়ান লুকিয়ে থাকতেই পারে, নামের সঙ্গে কিন্তু জড়িয়ে আছে সুদূর পারস্য।(ছবি সৌজন্য:ফেসবুক)
০৩১৮
পারসিক ভাষায় ‘জাম’ শব্দের অর্থ ফুল। ‘দানি’ হল রাখার পাত্র বা আধার। আর তাই এই শাড়িতে ফুল-লতা-পাতা মোটিফের দাপট বরাবরই বেশি। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতকে কৌটিল্যর ‘অর্থশাস্ত্রে’ পুন্ড্র বা আজকের বঙ্গভূমির এক ধরনের স্বচ্ছ বস্ত্রের কথা আছে। তার সারা গায়ে কারুকাজ। মনে করা হয়, সেটি মসলিন জামদানি।(ছবি সৌজন্য:ফেসবুক)
০৪১৮
মুঘল আমলে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল জামদানির কদর। ফলে সমকালীন ইউরোপীয় এবং আরবের পর্যকদের বিবরণে বার বার ঘুরেফিরে এসেছে জামদানির উল্লেখ, প্রশংসাও।(ছবি সৌজন্য:ফেসবুক)
০৫১৮
জামদানি শাড়ি বুনতে প্রথম থেকেই পারদর্শিতার শীর্ষে বঙ্গদেশের শিল্পীরা। বিশেষত, পূর্ববঙ্গের তাঁতিদের হাত ধরে প্রজন্মজয়ী হয়েছে জামদানি। পরে তাঁদের সূত্রেই জামদানির বয়নশিল্প পা রেখেছে এপার বাংলায়।(ছবি সৌজন্য:ফেসবুক)
০৬১৮
জামদানির উপর থেকে তাঁতিদের ‘হাত’ উঠে যেতে দিতে চান না অরুন্ধতী মৈত্র। তাঁর স্বপ্ন, এই শাড়ি থেকে যাক ‘হাতে বোনা’ হয়েই। যন্ত্রের আস্ফালনের যুগেও তাঁর ‘আসমানি’ বুটিকের সব জামদানি বিশুদ্ধ ‘হ্য়ান্ডলুম’। জানাচ্ছেন নামী তথ্য়প্রযুক্তি সংস্থায় কর্মরত অরুন্ধতী।(ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
০৭১৮
অরুন্ধতীর জামদানি-প্রেমই এই শাড়ির বুটিকের আকার নিয়েছে। সুতো পছন্দ থেকে অনলাইনে ক্রেতার কাছে পৌঁছনো, কাজের প্রতিটি ধাপে তাঁর উপস্থিতি সজাগ ও সক্রিয়। জানালেন, ঘুড়ির সুতোয় যেমন মাড় দেওয়া হয়, তেমনই জামদানির সুতোকেও কড়কড়ে করে তোলা হয়। নইলে শাড়ি বেশি দিন পরা যাবে কী করে! (ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
০৮১৮
জামদানি যেন জমিদারবাড়ির গৃহিণীর মতোই রাশভারী এবং চলাফেরায়
ধীরস্থির। তার সুতো তৈরি করতেই সময় লাগে বেশ কিছু দিন। এর পরে বোনার পর্ব। সাধারণ হাজার বুটি হলে অন্তত পনেরো দিন। নকশা যত জটিল হবে, দীর্ঘতর হবে সময়। তাই সময়ের দিক দিয়ে কোনও আপসে নারাজ অরুন্ধতী। তার জন্য ক্রেতা কম হলেও, তা মঞ্জুর। (ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
০৯১৮
একই কথা অদিতি সরকারেরও। ভবানীপুরে তাঁর বুটিক ‘বাঁশি’ আলো করে শ্রীমতিদের জন্য অপেক্ষায় থাকে জামদানি। মসলিন, মটকা, লিনেন, খাদি সুতি—সব উপকরণেই বোনা হয় এই শাড়ি। চাহিদা বেশি মটকা ও মসলিনের জামদানির। কাজ তেমন জমকালো বা সূক্ষ্ম হলে দাম পৌঁছে যায় পাঁচ অঙ্কেও।(ছবি সৌজন্য: অদিতি সরকার)
১০১৮
তবে কি চাকরি জীবনে পা দেওয়ার আগে কলেজপড়ুয়া কন্যের অঙ্গে উঠবে না জামদানি? তাঁদের কথা ভেবেই অরুন্ধতী এনেছেন ‘বেঙ্গল হ্য়ান্ডলুম’। জামদানি, তবে দামটা দু’ হাজারের কোঠায়। তবে পকেটসই বলে এমনটা মনে করার কারণ নেই যে গুণমানের সঙ্গে আপস করা হয়েছে। শাড়ি আদ্যন্ত তাঁতির হাতেই বোনা।(ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
১১১৮
জামদানি সাধারণত উজ্জ্বল রঙের হয়েই চোখে সয়ে এসেছে। তবে সে ট্রেন্ড এখন ভাঙছে। জামদানিতেও জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্যাস্টেল শেডের। অরুন্ধতীর নিজেরও দুর্বলতা স্নিগ্ধ রঙের জামদানিই। তবে মোটিফের ক্ষেত্রে কিন্তু তিনি পুরনোপন্থীই। জামদানিতে জ্যামিতিক কারুকাজ নৈব নৈব চ। বরং ইচ্ছে- ঠাকুমা-দিদিমাদের আলমারি থেকে ‘পান্না হাজার’, ‘বুটিদার’, ‘কল্কা’, ‘ডুরেদার’, ‘তেরছা’, ‘চারকোণা’, ‘ফুলওয়ার’, ‘ঝালর’দের একে একে আবার বার করে আনা।(ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
১২১৮
একই মত ‘সোহাগ’ বুটিকের মালকিন মন্দিরা বসুরও। জামদানিতে মোটিফ নির্বাচনের ক্ষেত্রে তিনিও সাবেক ও রক্ষণশীলেই ঝুঁকে। তাঁর কাছে চাহিদাও বেশি আসে পুরনো মোটিফেরই। তবে মন্দিরার আক্ষেপ, যন্ত্রের আধিপত্যে হাতে বোনা জামদানির প্রায় দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। পাওয়ারলুমের শাড়ির দাম কম হওয়ায় তেমন সমঝদার ক্রেতা ছাড়া বুঝতেই পারেন না কেন হ্যান্ডলুম জামদানি এত মহার্ঘ্য।(ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
১৩১৮
একই অভিজ্ঞতা অদিতিরও। অনেক সময়েই নাকি ক্রেতাকে হ্য়ান্ডলুম শাড়ির বিশেষত্ব বোঝাতে গিয়ে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়। কিন্তু ক্রেতা-ই বা বুঝবেন কী করে- কোনটা হ্যান্ডলুম আর কোনটা পাওয়ারলুমের শাড়ি?(ছবি সৌজন্য: অদিতি সরকার)
১৪১৮
তার জন্য শাড়ি দেখার চোখ চাই- বলছেন মন্দিরা। ক্রেতাদের জন্য তাঁর পরামর্শ, জামদানি শাড়ির উল্টো দিকটা দেখুন। হাতে বোনা হলে সুতোর গিঁট থাকবে। জমিন অসমান ও উঁচুনিচু হবে। আর যান্ত্রিক হলে পুরোটাই নিখুঁত। এখানেই লুকিয়ে থাকে হাতের ছোঁয়ার পার্থক্য।(ছবি সৌজন্য: অদিতি সরকার)
১৫১৮
পার্থক্য গড়ে দেয় শাড়ির রংও- বলছেন অরুন্ধতী। সিন্থেটিক রঙ তাঁর অপছন্দ। বুটিকের জামদানিতে তাই তিনি ব্যবহার করেন অর্গানিক রং। চায়ের পাতা, বেদানার রস, গাঁদাফুলের পাপড়ি থেকে সেই রং তিনি তৈরি করান। আর সেই রঙের সুতো দিয়ে বোনা হয় জামদানি।(ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র)
১৬১৮
কোথায় বোনা হয় এই জামদানি? তিন বুটিকের কর্ত্রীরাই জানালেন, কাজ হয় মূলত নদিয়ার শান্তিপুর ও ফুলিয়ায়। অরুন্ধতীর কিছু তাঁতি কাজ করেন বর্ধমানেও। তবে যে জামদানির আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ‘ঢাকা’-র নাম? তা নিয়ে দুঃখ তিন জনেরই। তাঁদের কথায়, ঢাকার তুলনায় এ পারেও কিন্তু জামদানির গুণমান কিছুমাত্র কম নয়।(ছবি সৌজন্য: অদিতি সরকার)
১৭১৮
বরং, এ পারের শান্তিপুরের জামদানির সঙ্গে মিল আছে ওপারের টাঙ্গাইলের জামদানির। আবার ধনেখালির জামদানি কিন্তু শান্তিপুরী জামদানির চেয়ে আলাদা। তবে পূর্ব এবং পশ্চিম, দু’দিকের জামদানিই এক কালে বিস্মৃত হতে বসেছিল।ব্রিটিশ আমলে শিল্পবিপ্লবের সময়ে। (ছবি সৌজন্য: অদিতি সরকার)
১৮১৮
পরবর্তীতে ধ্বংসের মুখ থেকেই ফিনিক্স হয়ে ডানা মেলেছে জামদানির আঁচল। প্রজন্মের পর প্রজন্মে বঙ্গনারীকে সুন্দরী করে তুলবে বলেই। তাই, পুজোর সকাল বা রাতে সময়ের মেজাজ বুঝে বেছে নিন জামদানি। খোঁপায় থাকুক একথোকা রঙ্গন বা আলগোছে জড়ানো জুঁইয়ের মালা। দেখবেন, মণ্ডপে সামাজিক দূরত্ব সত্ত্বেও আপনার অপাঙ্গ থেকে পঞ্চমশর কেউ কেড়ে নিতে পারছে না! (ছবি সৌজন্য: অরুন্ধতী মৈত্র) (তথ্য: অর্পিতা রায়চৌধুরী)