ছোটবেলায় ঠাকুমা-দিদিমাদের মুখে শুনে থাকবেন বোবায় ধরার কথা। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘স্লিপ প্যারালিসিস’। মনে হয় গোটা শরীরটা অবশ হয়ে আসছে। হাত-পা নাড়ানো, এমনকি শ্বাস নেওয়ারও ক্ষমতা থাকে না। ভাবছেন তো গল্প শুরুর আগে এই সমস্ত কথা কেন লিখছি! ধৈর্য ধরুন, বুঝতে পারবেন।
মূল ঘটনায় ফেরা যাক। আমি ছোট থেকেই একা ঘুমাই রাতে। টিকটিকি ছাড়া কাউকে ভয় পেতাম না তেমন। তবে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ভয়টাও এক সময় চলে যায়। ঘটনাটা ঠিক কত বছর আগের তা মনে নেই। সম্ভবত তখন আমি দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। একদিন রাতে আমি আমার ঘরে শুয়ে আছি। হঠাৎ অনুভব করতে পারি আমার বুকের উপর খুব চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। প্রায় ৭০-৮০ মণের কোনও ভারী পাথর বুকের উপর বসালে যেমন অনুভব হবে, ঠিক তাই! ‘মা’ বলে ডাকতে গিয়েও আমি ব্যর্থ। প্রচণ্ড কষ্টের চোটে আমি তখন কাতরাচ্ছি। অথচ নড়তেও পারছি না। কী, ‘স্লিপ প্যারালিসিস’-এর কথাই মাথায় আসছে তো? যদিও আমি দোষ দিতে পারি না কাউকে। গল্পের শুরুতে আমার লেখা এর লক্ষণের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত আমার দেওয়া বিবরণ মিলে যাচ্ছে বৈকি!
কিন্তু এর পরের কথাগুলো শুনলে হয়তো আপনিও মানতে বাধ্য হবেন সেদিন আমার সঙ্গে যা হয়েছিল, তা নিছকই ‘স্লিপ প্যারালিসিস’-এর লক্ষণ ছিল না। এখানে বলে রাখি, আমার সেই সময় কিন্তু চোখ একেবারেই নিস্পলক ছিল। কাজেই ‘স্বপ্ন দেখছিলাম’-এই যুক্তিটাও আমার ক্ষেত্রে খাটে না। আমি স্পষ্ট দেখতে পারছি আমার উপরে কেউ যেন উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। মানে তার মুখ আর আমার মুখ মুখোমুখি। জানেন সেদিন আমি কাকে দেখেছিলাম? নিজেকে! হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন। আমার উপরে যে মানুষের শরীরটা ছিল, সে আর কেউ নন, বরং আমিই ছিলাম।
কিন্তু এত বীভৎস চাহনি, এত নির্মম মুখশ্রী যে আমার হতে পারে, আমি কল্পনাও করতে পারি না। আমি তখন ‘মা’ বলে চিৎকার করার চেষ্টা করছি। কিন্তু উল্টোদিকের ‘আমি’টাও নাছোড়বান্দা। একচুলও নড়তে দিচ্ছে না আমাকে। ভীষণভাবে চাপ অনুভব করছি গলার উপর। আমার মনে আছে শেষমেশ বিকট এক চিৎকার করে আমি হাত-পা ছুঁড়ি। তার পরে চোখ খোলার পর দেখতে পারি রক্তমাংসের ‘আমি’টা ছাড়া সেখানে আর কেউ নেই। ততক্ষণে শরীর ছেড়ে দিয়েছে আমার। ঘেমে স্নান হয়ে গিয়েছি তখন। একছুটে মায়ের কাছে গিয়ে দেখি মা ঘুমোচ্ছেন অকাতরে। আমার কিছুটা হাসিও পায় যে ওই মুহূর্তে আমি ঘরে ঢুকে ঠাকুরের নাম যব করতে থাকি এবং নিজে নিজেই বলি “তোর সাহসে কুলালে এ বার আয় আমার কাছে!” কাকে যে হুমকি দিয়েছিলাম, নিজেও জানি না। শেষ পর্যন্ত ঠাকুরের নাম নিতে নিতেই শুয়ে পড়ি। সত্যি বলতে ওই দিনের পর থেকে তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি আর। না তো ওই ‘হিংস্র আমি’টাকেও আর কখনও দেখতে পেয়েছি, আর না তো এই ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পেয়েছি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy