অভিনয়ের মাধ্যমেই আমি দেবী মাহাত্ম্যের প্রধিনিধিত্ব করি।
একটা গল্প বলি? দীপাবলির আগে তারা মায়ের তিন লক্ষ টাকা চুরি! হন্যে হয়ে তিনি সেই টাকা উদ্ধারের আশায় ব্যাঙ্ক থেকে থানা দৌড়ে বেড়াচ্ছেন। নিয়মের পর নিয়ম সেখানে। দেবী মাহাত্ম্যও সেখানে অসহায়! না, সত্যিই দেবীর সঙ্গে এ রকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। ঘটা সম্ভবও নয়। কারণ, দেবীকে ছোঁয়ার ক্ষমতা কারও নেই। কিন্তু পর্দার ‘তারা মা’? সে তো আর দেবী নয়, মানবী। সে তো আর পাঁচ জনের মতোই। ধারাবাহিক ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’-এর সেই ‘তারা মা’ ওরফে নবনীতা দাসের সঙ্গেই ঘটেছে এই অঘটন।
আমার মতে, এর থেকে বড় অলৌকিক ঘটনা আর কী হতে পারে?
ফলে, এ বারের দীপাবলি আমার ব্যাঙ্ককে মেল পাঠাতে পাঠাতেই কেটে যাবে। হয়তো তদ্বির করতে আবার ছুটতে হবে থানায়। এক ফাঁকে সকাল হবে। সন্ধে নামবে। ঘরের আনাচে কানাচে, বারান্দায় প্রদীপ দেওয়ার সময় হবে। কিন্তু আার দিয়া জ্বালানোর সময় হয়ে উঠবে কী? সত্যিই জানি না। গত বছরের কথা খুব মনে পড়ছে। ২০২০-তে আমরা কালীপুজোর পরের দিন বাইরে ঘুরতে চলে গিয়েছিলাম। তা ছাড়া, শ্বশুর-শাশুড়ি করোনা আক্রান্ত। ফলে, বাজি থেকে শতহস্ত দূরে। তবে সারা বাড়ি সাজিয়ে তুলেছিলাম নানা রকমের আলোয়। বাজি পোড়াতাম সেই ছোটবেলায়। আতশবাজি পোড়ানোর প্রতি সে কী নেশা! নিজের, সমস্ত তুতো ভাই-বোনেরা এক জায়গায় জড় হতাম। বাড়িতে দেদার বাজি আসত। মনের সুখে শখ মেটাতাম। যত বড় হয়েছি, শব্দবাজি থেকে ততই দূরে সরেছি। গত কয়েক বছরে আমি কোনও শব্দবাজি ফাটাইনি।
গত তিন বছর ধরে আমি ছোট পর্দার ‘মা তারা’। সত্যিই কি আমার পরিবর্তন এসেছে? আমি কি এখন আগের থেকেও বেশি আধ্যাত্মিক? দেবীর কৃপায় অনেক কিছু পেয়েছি? নানা সময় ঘুরেফিরে অনেকেই এই কথা জানতে চান। দীপাবলিতে আনন্দবাজার অনলাইনে সে সবের জবাব দিই। প্রথমেই বলি, পরিবর্তন এসেছে তো! গত তিন বছর ধরে আমি কোনও কল শো করি না। বুধবারও ডাক এসেছিল। নিজেকে সংযত রেখেছি। কারণ, অভিনয়ের মাধ্যমেই আমি দেবী মাহাত্ম্যের প্রধিনিধিত্ব করি। আমার কি স্টেজে উঠে হাত নাড়া বা শো করা সাজে? এতে দেবীর অপমান। আমাকেও কটাক্ষের শিকার হতে হবে। এ বার দ্বিতীয় কৌতূহলের জবাব, ধর্ম নিয়ে আমার কোনও গোঁড়ামি নেই। উপোস, উপকরণ সাজিয়ে পুজোতেও বিশ্বাসী নই। বরং শুভ বা ইতিবাচক শক্তিকে মানি। যাঁর থেকে ইতিবাচকতা পাই তাঁর পাশে থাকতেই ভাল লাগে।
দেবী চরিত্রে অভিনয় করতে করতে অনেক কিছু পেয়েছি আমি। আমার ধৈর্য বেড়েছে। রাগ কমেছে। ঠান্ডা মাথায় ভাবতে শিখেছি। ভাল-মন্দ বিবেচনা করার শক্তিও বেড়েছে। এখন নিয়মে বেঁধে ফেলেছি নিজেকে। নিয়মিত শরীরচর্চা। পরিমিত খাওয়াদাওয়া। ধ্যানে বসা। অনেক শান্ত হয়ে গিয়েছি। আস্তে কথা বলি। সেটে গিয়ে রূপটানের ঘরে নিজেই সাজি। অতিমারির পর থেকে আমি একাই শ্যুট করি। কিন্তু যখনই দেবীর বিভিন্ন মুদ্রা বা ভঙ্গিতে দাঁড়াই বা তাণ্ডব নাচি, শরীরে যেন বিশেষ সাড়া পাই। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি! ঠিক বলে বোঝানোর নয়। তখনই মনে হয়, কিছু তো আছে...!
বাকি, পর্দার ‘তারা মা’ বাস্তবে অন্যের পক্ষে কতখানি মঙ্গলজনক? এ টুকু বলতে পারি, আমার সামনে কেউ মাস্ক খুলে দাঁড়ানো বা কাছে আসার সাহস পান না। সেটে অন্য জায়গায় তাঁরাই হয়তো মাস্ক খুলে থাকেন। সেটা দেবী মাহাত্ম্য নাকি আমার দাপট? যা বলবেন। এই সচেতনতাও তো মঙ্গলজনকই! তাই না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy