বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব পুজো। তার আবেগই আলাদা। সেই আবেগ যদি না থাকে, তবে সে বাঙালিই না। আমারও পুজো ঘিরে অনেক আবেগ, অনেক স্মৃতি, অনেক ভাল লাগা।
ছোটবেলায় পুজোর একমাস কাটত হইহই করে। স্কুল যেতে হবে না, নতুন জামা পাওয়া যাবে, সে অন্য আনন্দ। ওই পাঁচদিন আবার বই-খাতা নিয়ে বসতেও হত না। কোনও বাঁধন নেই। লাগামছাড়া। সন্ধের মুখে বাড়ি ফেরার ফতোয়াও নেই। কী আনন্দ! কী আনন্দ! সত্যি বলতে সে একটা স্বাধীনতা পাওয়ার ব্যাপার ছিল।
সেই দিনগুলো এখন বড্ড মিস করি। পাড়ার প্যান্ডেলে সকাল থেকে বসতাম। চলত আড্ডা। পাড়ার পুজোয় ভোরবেলা ফুল তুলতে যেতাম। অন্ধকার থাকতে থাকতে বন্ধুরা মিলে বেরিয়ে পড়তাম। অষ্টমীতে সকালে স্নান করে অঞ্জলি দেওয়া। প্যান্ডেলে বসে ভোগ খাওয়া, প্রসাদ বিতরণ করা, বিকেলে বন্ধুরা মিলে আবার আড্ডা দেওয়া। জীবনটাই বদলে যেত ওই কয়েকটা দিন। কত মজাই যে হতো। এখন সেই দিনগুলো মনে পড়লে কষ্টই হয়। কিছুতেই তো আর সেই দিনগুলোয় ফেরা যাবে না। তবু পুজো প্রতিবছর আসে। সারা বছরের অপেক্ষা শেষ হয়।
আরও পড়ুন:ছোটবেলার স্মৃতিগুলো টাটকা হয়ে ওঠে এই সময়ে: মেহতাব
পুজো বাঙালির কাছে ঠিক কী, তা মুখে বলা বা বোঝানো যায় না। এটা যাঁরা পুজোর কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে, তাঁরাই একমাত্র উপলব্ধি করতে পারবে। আমার মনে হয় পৃথিবীতে যেখানে যেখানে বাঙালিরা রয়েছেন, সেখানে যে ভাবেই হোক না কেন, পুজোর আয়োজন ঠিক করবেনই।
বিজয়ার পরে বাড়ি বাড়ি নাড়ু খেতে যাওয়ার উন্মাদনা আবার অন্য রকম। কত রকমের মিষ্টি খেতাম পাড়ায় এর ওর বাড়িতে প্রণাম করতে গিয়ে। ঘুগনি-লুচি খেতাম। এখন অবশ্য সেই প্রথাই অনেকটা চলে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটা বদলে যাচ্ছে। কিছু করার নেই। তবে এখনও বিজয়ার দিন নাড়ু হয় বাড়িতে। রাতে লুচি হয়। আমার যদিও লুচি-মিষ্টি খাওয়া বারণ। তবু সামনে মিষ্টি দেখলে নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে যায়। মন তো সব সময় বশ মানানো যায় না। তখন বাড়িতে সাদা ফুলকো লুচি হলেও আমার জন্য রাগি দিয়ে বানানো লুচি হয়। কিছু করার নেই, শরীরের কথা ভাবতেই হয়। খেলছি যখন, কিছু স্যাক্রিফাইস তো করতেই হবে!
যখন ক্রিকেট খেলাকে ভালবেসে ফেললাম, জড়িয়ে পড়লাম, তখন সব সময় যে পুজো উপভোগ করতে পেরেছি এমন নয়। অনেক বারই বাইরে থাকতে হয়েছে ম্যাচের জন্য। তবে পুজোর সময় দেশের বাইরে কখনও থাকতে হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। কলকাতার বাইরে যদিও বহুবার থেকেছি। আসলে ম্যাচ পড়ে গেলে ঠিক বোঝা যায় না কোন দিন অষ্টমী আর কোনদিনই বা দশমী। ম্যাচের আগের দিন থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ম্যাচের দিন ভোরবেলায় উঠতে হয়। এমনও হয়েছে যে অষ্টমীর দিন খেলা পড়েছে। মনেই ছিল না। বিকেল বেলা কেউ একজন মনে করিয়ে দিয়েছে। তখন কষ্ট পেয়েছি যে, ইস্, অঞ্জলি দেওয়া হল না!
আরও পড়ুন: কলকাতা ছেড়ে পদ্মাপারে কেমন করে পুজো কাটাচ্ছেন জয়া আহসান?
এখন পেশাদার ক্রিকেটার হিসেবে এই ত্যাগগুলো করতেই হবে। কিছু করার থাকে না। মনকে বোঝাতেই হয় যে সব মানুষের জীবনেই এমন ঘটে। পুজোর সময়ও অনেকের কাজ পড়ে যায়, দায়িত্ব থাকে। খেলোয়াড় বলে আমাদের ব্যাপারটা লোকের নজরে পড়ে, সবাই জানতে পারে। অন্যদের ত্যাগ কিন্তু অগোচরেই থেকে যায়।
এ বারের পুজোয় যেমন আমার থাকা হল না। ১ অক্টোবর বেরিয়ে গিয়েছি। প্রথমে বেঙ্গালুরু। সেখান থেকে ভদোদরা। জাতীয় দলের সঙ্গে যোগ দেব। নয় তারিখ থেকে ওয়ানডে সিরিজ। এ বারের পুজোটা দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গেই কাটছে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy