ল্যাম্বরগিনির।—ছবি: ফাইল চিত্র।
অপমানের জবাব! ট্রাক্টর বানান বলে বিলাসবহুল গাড়ির নির্মাতার মালিকের অপমানের জবাব দিতে বানিয়ে ফেললেন এমন এক গাড়ি, পরবর্তী কালে তা হয়ে উঠল সেই বিলাসবহুল গাড়ির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।
এমনই এক প্রায় অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছিলেন ফেরুচিও ল্যাম্বরগিনি, বানিয়ে ফেললেনদ্রুত গতির স্পোর্টস কার, ১৯৬৪ সালেই ভি১২ ইঞ্জিনের প্রথম গাড়ি, ৩৫০ জিটি।
এনজো ফেরারি তখন ইউরোপের বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা ফেরারির মালিক হিসেবে পরিচিত, তাঁর নামেই কোম্পানির নাম।ফেরুচিও ল্যাম্বরগিনি তখন ট্রাক্টর বানাতেন, এবং সেই ব্যবসায় যথেষ্ট সফল হয়ে ঠিক করেন স্পোর্টস কার কিনবেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। একাধিক স্পোর্টস কার কিনলেন, সঙ্গে ফেরারির ২৫০ জিটি। কিন্তু এই গাড়ি কেনার পর থেকেই একটার পর একটা সমস্যায় পড়েন ফেরুচিও। বিশেষ করে ক্লাচের সমস্যায় বিরক্ত হয়ে তিনি ঠিক করেন, কোম্পানির মালিক এনজো ফেরারির সঙ্গে এটা নিয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু এনজো ফেরারি গাড়ির ব্যাপারে কোনও কথাই শুনতে চাননি, উল্টে “সমস্যা গাড়ির নয়, বরং চালকের” বলে সরাসরি অপমান করে বসেন ফেরুচিও ল্যাম্বরগিনিকে। ট্রাক্টর বানান বলে এই অপমান নিতে পারেননি ফেরুচিও।
ফেরারির এই ২৫০ জিটি মডেল নিয়ে সমস্যায় পড়েন ফেরুচিও ল্যাম্বরগিনি। —ছবি: ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: ঘণ্টায় ৪০০ কিমি গতির বাইকে চড়তে চান!
১৯৬৪ সালে প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ৩৫০ জিটি, এবং সঙ্গে সঙ্গেই নজর কাড়ে একাধিক নির্মাতা-চালক-ক্রেতাদের। কিন্তু যে গাড়ির জন্য ল্যাম্বরগিনি নামটিপুরো পৃথিবী জানতে পারে, তা হল মিউরা। ১৯৬৬ সালে প্রথমবারের জন্য এমন এক গাড়ি হাজির করে, যাকে আক্ষরিক অর্থেই প্রথম সুপারকার বলা হয়। প্রথমবারের জন্য গাড়ির ইঞ্জিন সামনে না রেখে গাড়ির পিছনের দিকে রাখা হল, ৪ লিটারের ভি১২ ইঞ্জিন ৩৫০ অশ্বক্ষমতা তৈরি করতে সক্ষম হল!
শুধু ইঞ্জিন নয়, এই গাড়ির ডিজাইন দেখে এখনও লোকে তারিফ করে। সর্বোচ্চ ১৭৭ মাইল/ঘণ্টা অথবা বা ২৮৫কিমি/ঘণ্টার গতিবেগের গাড়ি ভবিষ্যতে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে নতুন মডেলে, ৩০০ কিমি/ঘণ্টার গণ্ডি পেরিয়ে যায়। এর পর পর প্রকাশ পায় কৌন্টাক। সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে সেই গাড়ি অচিরেই বিশ্ববিখ্যাত হয়ে ওঠে, প্রথমবার গাড়ির দরজা পাশাপাশি না খুলে ডানার মতো ওপর নীচে খুলতে থাকে।
এর পরে বেশ কিছু মডেল বাজারে এলেও তারা তেমন নাম করতে পারেনি। যেমন ইসলেরা, এস্পাদা, জারামা। কিন্তু এর পরে পরেই প্রায় পাল্টে যায় ছবিটা। যে মডেল ল্যাম্বরগিনি কোম্পানির সব থেকে প্রচার পায়, তা হল গ্য়ালার্দো। ভি১০ এই গাড়ি যেমন হালকা ও দ্রুত হয়, তেমনই প্রযক্তি ও ডিজাইনের দিক থেকে আবার সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে থাকে। এর আগে এরকম প্রচার ও ব্যবসায়িক সাফল্য কিছুটা হলেও পেয়েছিল ডায়াব্লো। ১১ বছর ধরে এর প্রোডাকশন চলে, প্রায় ৬টা আলাদা জেনারেশন পাওয়া গিয়েছিল এই গাড়ির।
ল্যাম্বরগিনি ভি ১০। —ছবি: ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: নিয়মিত গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, ভাল থাকবেন আপনিও
আরও পড়ুন: তেলের দাম আগুন, বাইক কেনার আগে মাইলেজ দেখে নিন
এর পর গাড়ি নিয়ে যেমন আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গতি ও ডিজাইনের বৈশিষ্ট। মুর্সিয়ালাগো, অভেন্তেদর, ভেনেনো, অস্তেরিওন, রেভেন্তন, হুরাকান-এর মতো অনেকগুলি গাড়ি বাজারে চলে আসে। বাজারের অন্যতম সেরা গাড়ি শুধু নয়, ব্যাটম্যানের সিনেমাতেও দেখা যায় এই বিলাসবহুল স্পোর্টস কার।ফলে একটা অপমানের ফল কী হতে পারে, গোটা পৃথিবী সাক্ষী রইল তার, ইতিহাসের পাতা থেকে রাস্তার পিচে দাগ থেকে গেল ল্যাম্বরগিনি-র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy